সিবিআইয়ের অফিসে রমেশ গাঁধী। (ডান দিকে) ইডি-র অফিস থেকে বেরোচ্ছেন আহমেদ হাসান ইমরান। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
সারদা কেলেঙ্কারিতে ফের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) জিজ্ঞাসাবাদের সামনে শাসক দলের সাংসদ। সোমবার তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানকে দিনভর জেরা করেন ইডির তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রের খবর, ২০১০ সালে আজাদ হিন্দ নামে একটি উর্দু পত্রিকা এবং ২০১২ সালে কলম নামে একটি বাংলা পত্রিকা কিনেছিলেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন। সেই দু’টি পত্রিকারই সম্পাদক ছিলেন ইমরান। পরে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, খবরের কাগজে সুদীপ্ত সেনের বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়েই এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ইমরানকে।
সারদা কেলেঙ্কারিতে এর আগে তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষকে জেরা করেছে ইডি। সেই সময়ে কুণালকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েই জেরা করেছে তারা। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তৃণমূলের দুই রাজ্যসভার সাংসদ সৃঞ্জয় বসু ও মিঠুন চক্রবর্তী এবং লোকসভার সাংসদ অর্পিতা ঘোষকেও। বাঁকুড়ায় সারদার একটি সিমেন্ট কারখানা কেনা নিয়ে রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে গত সোমবারই ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ইডি-র কর্তারা বলছেন, কুণাল, সৃঞ্জয় ও অর্পিতার যেমন সারদার সংবাদমাধ্যম ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক ছিল, তেমনই সম্পর্ক ছিল ইমরানেরও। এ দিন বেলা এগারোটা নাগাদ ইডি অফিসে হাজির হন ইমরান। প্রায় ন’ঘণ্টা ধরে জেরার পরে রাত আটটা নাগাদ ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, “সারদা এক বছরের জন্য কলম কিনেছিল। সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই ইডি আমাকে ডেকেছিল।”
ইডি সূত্রের খবর, কলম এবং আজাদ হিন্দ পত্রিকা দু’টির সম্পাদক ছিলেন ইমরান। ১৯৮১ সালে শুরু হওয়া কলম পত্রিকাটি প্রথমে মাসিক এবং পরে সাপ্তাহিক হিসেবে প্রকাশিত হতো। ২০১২ সালে সেটি কিনে নেন সুদীপ্ত। সারদার অধীনে কলম পত্রিকাটি দৈনিক হিসেবে প্রকাশিত হওয়া শুরু হয়। ইডি-র জেরায় সুদীপ্ত জানিয়েছিলেন, কলম ও আজাদ হিন্দ কিনতে ও তার পরিকাঠামো গড়তে ১২-১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। এ নিয়ে ইমরানের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছিল সুদীপ্তর। ইডি সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদে সারদার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন ইমরান।
ইডি-র এক অফিসার জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর কলম সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পরে ‘কলম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ নাম নিয়ে ফের প্রকাশিত হতে শুরু করে পত্রিকাটি। কিন্তু যখন কলম ফের প্রকাশিত হতে শুরু করে, তখন সুদীপ্ত জেলে। মালিক জেলে থাকার সময় কী ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ইডি-র তদন্তকারীরা। এ ব্যাপারে ইমরান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “যা বলার ইডি-কে বলেছি।”
ইডি সূত্রের খবর, সুদীপ্ত তাঁদের জানিয়েছিলেন, সারদা বন্ধ হওয়ার সময় কলমের অ্যাকাউন্টে কয়েক লক্ষ টাকা ছিল। সেটা কী হল, তা নিয়েও এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে খবর। তদন্তকারীদের দাবি, এ রকম অনেক প্রশ্নেরই সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি ইমরান। তবে অন্য কিছু সূত্র মারফত ইডি-র তদন্তকারীরা জেনেছেন, সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরে তৃণমূলের এক প্রভাবশালী শীর্ষ নেতার মধ্যস্থতায় ইমরানই ওই ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন গড়ে কাগজ চালাতে থাকেন। সুদীপ্তও ইডিকে জানিয়েছিলেন, মালিকানা হস্তান্তর হলেও কলমে চিরকালই প্রভাবশালী ছিলেন ইমরান। যদিও সারদার অধীনস্থ কলমে তাঁর কোনও নির্দিষ্ট পদ ছিল না। সে সময় কুণাল ঘোষের সঙ্গেও ইমরানের ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে ইডি সূত্রের খবর। যদিও কলম বিক্রি করার পরেও ক্ষমতা ধরে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইমরান। তাঁর কথায়, “এ সব ভুল কথা।” ইডি-র তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, কলমের সঙ্গে আর এক ব্যবসায়ীরও সম্পর্ক ছিল। সারদা কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরে ওই ব্যবসায়ী ‘আজকের কলম’ নামে আর একটি দৈনিক খুলেছিলেন। সেই ব্যবসায়ীকেও ভবিষ্যতে ডাকা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ইডি-র অফিসারেরা। ইডি-র পাশাপাশি সারদা কেলেঙ্কারিতে এ দিন দিনভর জেরা চালিয়েছে সিবিআই-ও। রবিবারই উত্তর-পূর্ব ভারতে সারদার টিভি চ্যানেল সংক্রান্ত বিষয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহের প্রাক্তন স্ত্রী মনোরঞ্জনা সিংহকে জেরা করেছিল সিবিআই। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এ দিন সারদার এনই বাংলা চ্যানেলের সূত্রে ব্যবসায়ী রমেশ গাঁধীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরে সন্ধ্যায় সিবিআই অফিস থেকে বেরনোর সময়ে রমেশ বলেন, “এনই বাংলা, মাতঙ্গ সিংহ ও মনোরঞ্জনা সিংহের সম্পর্কে কিছু তথ্য যাচাই করার জন্য সিবিআই আমাকে ডেকেছিল।”
সিবিআই সূত্রের খবর, এ দিন সকাল থেকে সুদীপ্ত সেন, ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার ওরফে নিতু এবং ব্যবসায়ী সন্ধির অগ্রবালকে দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই জেরায় কয়েক জন প্রভাবশালীর নাম উঠে এসেছে। সেগুলি খতিয়ে দেখছে সিবিআই। পাশাপাশি সন্ধির ও নিতুর বিরুদ্ধে সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও কোম্পানি নিবন্ধকের কর্তাদের একাংশকে ‘ম্যানেজ’ করার অভিযোগ নিয়েও তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে। সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা বলছেন, এই দু’জনের পাশাপাশি আরও কেউ কেউ সরকারি কর্তাদের সঙ্গে সারদার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জামিন পেলেন শান্তনু ঘোষ
সারদা কেলেঙ্কারির মামলায় জামিন পেলেন ব্যবসায়ী শান্তনু ঘোষ। গত ২৪ জুন তাঁকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। আদালত সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা ৬০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে না পারায় কলকাতা নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক মুমতাজ খান শান্তনুবাবুকে ৩০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দিয়েছেন। তবে আদালতের নির্দেশ তিনি তদন্ত চলাকালীন দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। যখনই প্রয়োজন পড়বে, তাঁকে ইডি-র তদন্তকারী অফিসারের কাছে হাজিরা দিতে হবে। এ দিন আদালতে হাজির করানো হয়েছিল সারদা কর্ত্রী দেবযানী মুখোপাধ্যায়কেও। তাঁকে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy