Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাঙ্কে সিবিআই হানা, নাম মিলল প্রভাবশালীদের

সারদার ব্যাঙ্ক-নথি থেকেও এ বার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম পেল সিবিআই। কারা সেই প্রভাবশালী ব্যক্তি, তা অবশ্য খোলসা করে বলেননি তদন্তকারীরা। তবে বেশ কয়েক জন প্রভাবশালীর সঙ্গে সারদার সম্পর্ক নিয়ে যে তথ্য ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের হাতে এসেছে, তার সঙ্গে এই ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া নথি মিলিয়ে দেখা হবে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫০
Share: Save:

সারদার ব্যাঙ্ক-নথি থেকেও এ বার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম পেল সিবিআই। কারা সেই প্রভাবশালী ব্যক্তি, তা অবশ্য খোলসা করে বলেননি তদন্তকারীরা। তবে বেশ কয়েক জন প্রভাবশালীর সঙ্গে সারদার সম্পর্ক নিয়ে যে তথ্য ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের হাতে এসেছে, তার সঙ্গে এই ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া নথি মিলিয়ে দেখা হবে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে।

বুধবার দক্ষিণ কলকাতার গোলপার্কে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় যান সিবিআই অফিসারেরা। জানা গিয়েছে, বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যম কেনাবেচা সংক্রান্ত বেশির ভাগ টাকার লেনদেন হয়েছিল এই ব্যাঙ্কের মারফতেই। এই ব্যাঙ্কে সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায়-সহ সারদা সংস্থার নামে মোট ১৫টি অ্যাকাউন্ট ছিল। সেই অ্যাকাউন্টগুলি মারফত ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৫০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই লেনদেনের বিস্তারিত হিসেব এ দিন সংগ্রহ করেছে সিবিআই। সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে সেই হিসেব পরীক্ষা করেই সমাজের বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পাওয়া গিয়েছে। এই সব ব্যক্তির নামে সরাসরি টাকা গিয়েছে ওই ব্যাঙ্কে সারদার অ্যাকাউন্ট থেকেই। প্রসঙ্গত, এর আগে এই ব্যাঙ্কে হানা দিয়েছিলেন ইডি-র তদন্তকারীরাও।

সিবিআইয়ের দাবি, ওই ব্যাঙ্কের কোনও অ্যাকাউন্টেই বেশি টাকা জমা রাখতেন না সারদা কর্তৃপক্ষ। অথচ ব্যাঙ্কের নথি থেকে জানা গিয়েছে, সারদার মিডিয়া ব্যবসার যাবতীয় খরচ ওই ১৫টি অ্যাকাউন্ট থেকেই মেটানো হয়েছে। খরচের চেক জমা পড়ার পরেই এই অ্যাকাউন্টগুলিতে টাকা জমা করা হত। সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, তরুণ রায় নামে সারদার এক হিসাবরক্ষক প্রতিদিন সকালে ওই ব্যাঙ্কে আসতেন। ব্যাঙ্কের একটি ঘরেই তিনি বসতেন এবং তিনিই এই ১৫টি অ্যাকাউন্টের লেনদেনের যাবতীয় তথ্য রাখতেন। তাঁকেও দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই।

সারদার একটি চ্যানেলে একটি গেম শোয়ে ফোন করে বিপুল টাকা জিতে নিতে পারতেন দর্শকেরা। সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ সেই অনুষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর, সেই অনুষ্ঠানের টাকাও ওই ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া হয়েছে বলে ব্যাঙ্কের নথি থেকে জানা গিয়েছে।

এক তদন্তকারী জানান, প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা খরচ করে দেবযানীর বোনকে যাদবপুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে অনাবাসী কোটায় ভর্তি করে দিয়েছিলেন সুদীপ্ত। সেই লেনদেনও এই ব্যাঙ্কের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে হয়েছিল বলে তদন্তে জানা গিয়েছে।

বুধবার সল্টলেকে সিবিআই দফতরে মনোজ তালুকদার নামে সারদার এক ইঞ্জিনিয়ারকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গুয়াহাটিতে সারদার ৩০ বিঘার একটি জমি সংক্রান্ত তথ্য জানতেই মনোজবাবুকে ডাকা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। মনোজবাবু জানান, ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত তিনি সারদায় চাকরি করেছেন। ওই জমিটি কেনা হয়েছিল ২০০৯ সালে। যদিও সিবিআই অফিসারদের মতে, ওই জমি কেনা এবং পরে ওই জমিটি কাজে লাগানোর সময়ে মনোজবাবু বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন।

বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় এলাকায় একটি সিমেন্ট কারখানা সম্প্রতি পরিদর্শন করে এসেছেন ইডি অফিসারেরা। জানা গিয়েছে, এই কারখানাটি ২০০৫ সালে কিনেছিলেন রাজ্যের বর্তমান বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায় এবং ২০০৯ সালে তিনি তা বিক্রি করে দেন সুদীপ্তকে। সেই বেচাকেনার সময়ে ১৫ বিঘা জমির উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু এলাকা পরিদর্শন করে তার মধ্যে ৮ বিঘা জমির বৈধতা খুঁজে পেয়েছেন ইডি অফিসারেরা। শুধু জমি নয়, ওই কারখানা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে যে টাকার অঙ্কের কথা বলা হয়েছিল, তা নিয়েও অসঙ্গতি রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ইডি অফিসারেরা মনে করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE