Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিজেপি অফিসে হামলায় বাহিনী পাঠিয়ে ঠিক করেছি, জবাব কেন্দ্রের

তৃণমূল সমর্থকদের হামলার সময়ে রাজ্য বিজেপির অফিসে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান পাঠিয়ে ঠিক কাজই করা হয়েছে বলে জানিয়ে দিল কেন্দ্র। গত ৩ জানুয়ারি রাজ্য বিজেপি অফিসের সামনে অতিরিক্ত সিআরপিএফ মোতায়েন করা নিয়ে নবান্নের তোলা প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই কাজ কোনও ভাবেই ‘বেআইনি’ নয়।

সেদিনের বিক্ষোভের পর মোতায়েন ফাইল চিত্র।ফাইল চিত্র

সেদিনের বিক্ষোভের পর মোতায়েন ফাইল চিত্র।ফাইল চিত্র

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১১
Share: Save:

তৃণমূল সমর্থকদের হামলার সময়ে রাজ্য বিজেপির অফিসে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান পাঠিয়ে ঠিক কাজই করা হয়েছে বলে জানিয়ে দিল কেন্দ্র। গত ৩ জানুয়ারি রাজ্য বিজেপি অফিসের সামনে অতিরিক্ত সিআরপিএফ মোতায়েন করা নিয়ে নবান্নের তোলা প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই কাজ কোনও ভাবেই ‘বেআইনি’ নয়।

মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ) এম গোপাল রেড্ডি ৩০ জানুয়ারি মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা চিঠিতে কেন্দ্রের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, আপনাকে আমরা বোঝাতে পেরেছি।’

কেন্দ্রের এই জবাবে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ নবান্ন। ঠিক হয়েছে, রাজ্যের তরফে মুখ্যসচিবই ফের চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই অবস্থানের প্রতিবাদ করবেন। তাতে বলা হবে, যদি নিরাপত্তা পরিস্থিতি বুঝে কেন্দ্র নিজেই বাহিনী পাঠাতে শুরু করে, তা হলে সাংবিধানিক কাঠামোয় আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের হাতে রাখার দরকার কী? পাশাপাশি রাজ্যের তরফে মুখ্যসচিব নিজে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মহর্ষিকে চিঠি দিলেও তার জবাব মন্ত্রকের এক অতিরিক্ত সচিব দেওয়াতেও ক্ষুব্ধ নবান্নের কর্তারা।

গোপাল রেড্ডি তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, ‘লোকবল নির্দিষ্ট করেই কাউকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সেই লোকবল বাড়ানো যাবে না, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ, যাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে, তাঁর সুরক্ষাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা নয়’। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তার সংযোজন, ‘সে দিন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে বাড়তি বাহিনী পাঠানোর প্রয়োজন ছিল। যা কোনও অর্থেই বেআইনি নয়। আমার বিশ্বাস এই ব্যাখ্যাই যথেষ্ট’।

আর এই ব্যাখ্যা পেয়েই চটেছে নবান্ন। গত ১০ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি লিখে মুখ্যসচিব জানতে চেয়েছিলেন, বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর জন্য তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে কি? সেই চিঠিতে মুখ্যসচিব লিখেছিলেন, ‘গত ৩ জানুয়ারি বিজেপি-র রাজ্য অফিসের সামনে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। কলকাতা পুলিশের কর্মীরা সেখানে যথেষ্ট সংখ্যায় ছিলেন। পরিস্থিতি তাঁরাই নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। সাধারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ঘটনায় সেখানে হঠাৎ কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছে যায়।’

মুখ্যসচিব আরও লেখেন, ‘কলকাতা পুলিশের থেকে যা জেনেছি, সে দিন ঘটনাস্থলে বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ উপস্থিত ছিলেন। তিনি ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান। সিআরপিএফ সেই নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। গোলমালের সময় রাহুলবাবু দলীয় অফিসের ভিতরে ছিলেন এবং তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন পাঁচ জন সিআরপি জওয়ান। গোলমাল বাধার কিছু ক্ষণের মধ্যেই এক জন ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে আরও এক সেকশন (ছ’জন) সিআরপি জওয়ান সেখানে পৌঁছে যান। এবং তাঁরা সকলেই ‍দাঙ্গা মোকাবিলার সরঞ্জাম নিয়ে বিজেপি অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে পড়েন।’

মুখ্যসচিবের প্রশ্ন, ‘ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা যিনি পান, তাঁর দু’জন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী এবং বাড়িতে এক জন হাউস গার্ড থাকেন। কিন্তু সে দিনের ঘটনায় কী করে এত জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান দাঙ্গা মোকাবিলার সরঞ্জাম নিয়ে কলকাতার রাস্তায় নেমে পড়লেন? যে ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা, তিনি দলীয় অফিসের ভিতরে থাকলেও ওই জওয়ানরা কী ভাবে রাস্তায় নেমে পড়লেন?’

রোজ ভ্যালি মামলায় তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি ঘিরেই সে দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বিজেপির রাজ্য অফিস চত্বর। ওই হাঙ্গামার জেরে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও সে দিন উদ্বিগ্ন হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেন। পরে রাজ্যপাল কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে ফোন করলে দু’জনের মধ্যে কিছুটা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়েছিল বলে রাজভবন সূত্রে খবর।

সাম্প্রতিক কালে কেন্দ্রের সঙ্গে একাধিক বার রাজ্যের বিরোধ তীব্র হয়েছে। নভেম্বরের একেবারে শেষের দিকে রাজ্য অভিযোগ করেছিল, বিমান দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মেরে ফেলার চক্রান্ত করেছে কেন্দ্র। ওই অভিযোগ নিয়ে আলাদা তদন্তও শুরু করেছে বিধাননগর পুলিশ। বিমান-কাণ্ডের পরপরই রাজ্যের বিভিন্ন টোলপ্লাজায় সেনা নামানোর ঘটনা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কড়া ভাষায় তার জবাবও দিয়েছিল কেন্দ্র। যদিও এই দু’টি ঘটনার রেশ এখন আর নেই। কিন্তু রাজ্য বিজেপি অফিসে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো নিয়ে কেন্দ্রের জবাবের পরে ফের দু’পক্ষে সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হল বলে ধারণা সরকারি কর্তাদের। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য কোনও ভাবেই কেন্দ্রকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন দেখার, কেন্দ্র সুর নরম করে কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Office State Central Vandalism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE