চিড়: শব্দের তীব্রতায় ভেঙেছে কাচ। শনিবার দিঘায়। নিজস্ব চিত্র
কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পরপর দু’বার বিকট শব্দ। আর তাতেই কেঁপে উঠল সৈকত শহর দিঘা।
শনিবার বেলা এগারোটা পাঁচ নাগাদ এই তীব্র শব্দে দিঘা মোহনার মাটিতে ফাটল ধরে। ওল্ড দিঘার কয়েকটি হোটেলের কাচ ঝনঝনিয়ে ভেঙে পড়ে, ফাটল দেখা দেয় দেওয়ালে। শব্দের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে গোটা দিঘা শহর, এমনকী ২০ কিলোমিটার দূরে তাজপুর, মন্দারমণি থেকেও তা শোনা গিয়েছে। তবে এই শব্দ কীসের, তার উৎসস্থলই বা কি, রাত পর্যন্ত তা জানা যায়নি। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘আমরা গোটা এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছি। স্থলভাগে যে কিছু হয়নি, সেটা নিশ্চিত। কোস্ট গার্ডের কর্মীরা সমুদ্রে তল্লাশি চালাচ্ছেন। ওডিশা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
একে শনি-রবির ছুটি, তায় পাহাড়ে অশান্তির জেরে সৈকত শহরে এখন ঠাসা ভিড়। এ দিন তীব্র শব্দ আর কাঁপুনির সময় বহু পর্যটক সমুদ্রে স্নান করছিলেন। তাড়াহুড়ো করে পাড়ে উঠে পড়েন তাঁরা। হোটেলে ঘর থেকেও পর্যটকেরা ছুটে বাইরে আসেন। পথে নেমে পড়েন স্থানীয়রা। দিঘার পথে তখন শুধুই আতঙ্ক।
দুর্গাপুর থেকে আসা মৌসুমী ঘোষ ছিলেন হোটেলের তিনতলায়। স্বামীকে নিয়ে কোনওমতে নীচে নেমে আসেন। মৌসুমী বলেন, ‘‘সিঁড়িতে দেখি জানলার কাচ ভেঙেছে। সবাই নীচে নামার জন্য হুড়োহুড়ি করছে। সে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি।’’ দিঘার পাশের গ্রাম অলঙ্কারপুরে বাড়ি চন্দন দাসের। বাজার করে বাড়িতে ঢুকতেই কানে আসে শব্দ। উঠোনে রাখা সাইকেল হুড়মুড়িয়ে পড়ে যায়। কেঁপে ওঠে গোটা বাড়ি। চন্দনবাবুর কথায়, ‘‘এত দিন ধরে এই গ্রামে রয়েছি। কখনও এমন অভিজ্ঞতা হয়নি।’’
গোড়ায় অনেকে ভেবেছিলেন ভূমিকম্প। কিন্তু, সমুদ্রের জলে কোনও আলোড়ন হয়নি। শব্দের সময় নুলিয়া রতন দাস সমুদ্রের পাড়েই ছিলেন। জানালেন, ‘‘ভেবেছিলাম ভূমিকম্প। কিন্তু তেমন ঢেউ নেই দেখে বুঝলাম, অন্য কোনও কারণ।’’ ঘটনার পরে দিঘার সমুদ্রে পর্যটকদের নামায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
সেই কারণ জানতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের তরফে ওডিশা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। খবর দেওয়া হয় হলদিয়ার কোস্ট গার্ডকে। কোনও জাহাজের শব্দ কিনা, সমুদ্রে বিমান ভেঙে পড়েছে কিনা সবই খতিয়ে দেখা হয়। ওডিশার চাঁদিপুরে মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেও এমন শব্দের কারণ খুঁজে পায়নি পুলিশ। তবে কি সমুদ্রগর্ভে প্রাকৃতিক কারণে এই বিকট শব্দ? সমুদ্রবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমুদ্রে এমন কিছু নেই যাতে এত জোরে শব্দ হবে। আমার মনে হয় কোনও সুপারসনিক যুদ্ধবিমান সাংঘাতিক গতিতে সমুদ্রের উপর দিয়ে যাওয়াতেই এমন শব্দ হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy