Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

রাশ থাকবে কি পাহাড়ে, উদ্বিগ্ন নেতারা

সুষমার এ কথা শোনার পরে হাততালিতে ফেটে পড়েছে সভা। সেখানে কিন্তু বিমল গুরুঙ্গ, আশা গুরুঙ্গ, রোশন গিরি, বিনয় তামাঙ্গরা কেউ ছিলেন না। সূত্রের খবর, তাঁরা পাতলেবাসে গুরুঙ্গের বাড়ির অফিসে বসেই সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

প্রতিভা গিরি
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪৫
Share: Save:

পাহাড়ে আন্দোলনের রাশ এখনও নেতাদের হাতের বাইরে পুরোপুরি যায়নি। কিন্তু, বৃহস্পতিবার থেকে যা ঘটছে তাতে সেই আশঙ্কা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। ফলে, দ্রুত পাহাড়ের দাবি-দাওয়াকে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার টেবিলে ফেলতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও তাঁর সহযোগী দলের নেতারা।

কারণ, নেতারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বললেও রোজই খুচখাচ সরকারি সম্পত্তি পোড়ানো, হুমকি, ভাঙচুর চলছেই। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে মিরিকের গ্রামীণ গ্রন্থাগার, সুখিয়াপোখরির পরিত্যক্ত চেক পোস্ট ও কার্শিয়াঙের রেল-আবাসে আগুন ধরানো হয়। প্রথম দুটি ভস্মীভূত হয়। রেল আবাসের তেমন ক্ষতি হয়নি। এর সঙ্গে কখনও লাঠি-খুকুরি নিয়ে উলঙ্গ হয়ে নাচ, কখনও প্রাক্তন পুর কাউন্সিলর সুষমা রাইয়ের নেতৃত্বে আন্দোলনকারী নেতাদের প্রতি হুঁশিয়ারি: গোর্খাল্যান্ড ছাড়া আর কোনও অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা মেনে নেবেন না তাঁরা। তেমন হলে নেতাদেরও ছাড়বেন না!

সুষমার এ কথা শোনার পরে হাততালিতে ফেটে পড়েছে সভা। সেখানে কিন্তু বিমল গুরুঙ্গ, আশা গুরুঙ্গ, রোশন গিরি, বিনয় তামাঙ্গরা কেউ ছিলেন না। সূত্রের খবর, তাঁরা পাতলেবাসে গুরুঙ্গের বাড়ির অফিসে বসেই সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। দল সূত্রেই জানা গিয়েছে, সেখান থেকে দিল্লিতে নানা মহলে যোগাযোগ করা হয়। এর পরে গোর্খাল্যান্ড দাবি আদায় সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে দিল্লিতে দরবারে আরও গতি আনার উপরে জোর দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের দুই শীর্ষস্থানীয় আদালত

এর মধ্যে এ দিন থেকে ডিএম, এসডিও অফিসে ঘেরাও-বিক্ষোভের সূচি থাকলেও তা সরিয়ে সোমবার থেকে করার সিদ্ধান্ত হয়। উপরন্তু, দার্জিলিঙের সঙ্গে দেশের রাজধানীতেও অনশনে বসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রবিবার থেকে ডুয়ার্সের বীরপাড়ায় রিলে অনশন করার সিদ্ধান্তও হয়েছে। একই সঙ্গে ওই এলাকায় শনিবার ১২ ঘণ্টার পথ অবরোধের ডাকও দিয়েছে মোর্চা।

মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ত্রিলোচন রোকা বলেন, ‘‘আমরা দার্জিলিং ও দিল্লি দু’জায়গায় অনশনে বসব। কোথায়, কোন দলের কোন নেতা বসবেন, তা ১৮ জুলাই ঠিক হবে।’’ তবে আন্দোলনকারী নেতাদের আশা, ১৭ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন-পর্ব চুকলে দার্জিলিং নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হতে পারে।

রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘অনশন কর্মসূচি পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। দেরিতে হলেও আলোচনাটা শুরু হওয়া দরকার। আশা করব, মোর্চা ও তাদের সহযোগীরা দ্রুত আলোচনার টেবিলে বসার জন্য উদ্যোগী হবেন।’’

***

স্কুল খুলতে আবেদন

পাহাড়ের আন্দোলনে বছর নষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পড়ুয়ার। এরা সবাই আগামী বছর দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা দেবে। সে জন্য এ মাসের মধ্যেই রেজিস্ট্রেশন সেরে ফেলতে হবে তাদের। এ বছর রেজিট্র্রেশনে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক হওয়ায় পড়ুয়াদেরও উপস্থিতি প্রয়োজন। অথচ, স্কুল বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে বন্‌ধে ছাড় দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবারই শিলিগুড়িতে বৈঠক করেন দার্জিলিঙের ৬৫টি আইসিএসই স্কুলের প্রতিনিধিরা। রাজ্য ও কেন্দ্রের দ্বারস্থ হওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। পাহাড়ে গরমের ছুটি শেষ হয়েছে গত ৮ জুলাই। কিন্তু অশান্তির কারণে ছুটির মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE