Advertisement
০২ মে ২০২৪

সে-দিন এ-দিনে বিস্তর ফারাক

তবে দার্জিলিংয়ের জন্য বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা হয়েছিল। এ বারের মতো রাজভবনেই বৈঠক হয়েছিল। মমতা এ দিন যে ভাবে বসেছিল, সে ভাবেই মানুদাও বসেছিলেন। তবে ওই চেয়ারটা নিশ্চয় এখন আর নেই। আমরাও একই ভাবে বসলাম। আমি বেশ রোমাঞ্চিত ছিলাম এ দিন

সুব্রত মুখোপাধ্যায়    (পঞ্চায়েতমন্ত্রী)

সুব্রত মুখোপাধ্যায় (পঞ্চায়েতমন্ত্রী)

সুব্রত মুখোপাধ্যায় (পঞ্চায়েতমন্ত্রী)
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৭ ০৪:১০
Share: Save:

কোন মাস আর খেয়াল নেই। তবে সালটা ছিল ১৯৭৩। ৪৪ বছর আগের ঘটনা হলেও স্পষ্ট মনে আছে। কিন্তু অবাক হচ্ছি আশ্চর্য সমাপতন দেখে। সে দিনও বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলাম, আজও। তবে সেই আন্দোলন ছিল প্রকৃত অর্থেই গণতান্ত্রিক, আজকের মতো হিংস্র নয়। কাদের হাতে দার্জিলিং রয়েছে, ভেবে অবাক হচ্ছি। সঙ্গে ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে মানুদার (সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়) মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিনটাও।

আমার বয়স তখন ২৪ হবে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিধায়ক হয়েছি। মানুদা মন্ত্রীও করে দিয়েছিলেন। পুলিশ ছাড়াও ছিল তথ্য-সংস্কৃতি, পঞ্চায়েত এবং যুব দফতরের দায়িত্ব। ফলে প্রশাসনে ‘কাল কা যোগী’ হয়েও পদের ভারে নিজেকে বেশ ভারী ভারী লাগত। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জেলায় জেলায় মন্ত্রিসভার বৈঠক বসবে। ১৯৭৩ এর জুলাইয়ে জেলায় প্রথম বৈঠকটি বসেছিল বালুরঘাটে। তার কিছু দিন পরেই বসেছিল দার্জিলিংয়ের বৈঠক। পাহাড়ে তখন আমাদের পার্টি বেশ সক্রিয়। দাওয়া নারবুলা বোধ হয় তখন যুব নেতা।

সে বার উঠেছিলাম ট্যুরিস্ট লজে। আসার সময় সে এক কাণ্ড! মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগের দিন পাহাড়ে উঠছিলাম। কার্শিয়াংয়ের আগে বিক্ষোভের মুখে পড়ি। এক দল লোক এসে আমার গাড়ির পতাকা ছিঁড়ে দিয়ে যায়। নিরাপত্তারক্ষীকে মারধর করে। পুলিশমন্ত্রী হয়েও সে সব সহ্য করি। কারণ পাহাড়ে তখনও কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলন হচ্ছে। যত দূর মনে পড়ে সেটা ছিল ভাষার দাবিতে। যাই হোক সেই পর্ব কাটিয়ে পাহাড়ে এসেছিলাম। পরের দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকও হল। এখন আর খেয়াল নেই কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।


অশান্তি যেখানে

তবে দার্জিলিংয়ের জন্য বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা হয়েছিল। এ বারের মতো রাজভবনেই বৈঠক হয়েছিল। মমতা এ দিন যে ভাবে বসেছিল, সে ভাবেই মানুদাও বসেছিলেন। তবে ওই চেয়ারটা নিশ্চয় এখন আর নেই। আমরাও একই ভাবে বসলাম। আমি বেশ রোমাঞ্চিত ছিলাম এ দিন।

খুব মনে আছে, ১৯৭৩-এ রাজভবনে বৈঠক চলছে আর বাইরে গোর্খাদের একাংশ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।কলকাতা থেকে আসা। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর আন্দোলনকারীরা মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। ব্যস, ওইটুকুই।

আরও পড়ুন:মমতার বৈঠক শেষ হতেই পাহাড়ে আগুন, নামল সেনা

বৈঠকের পর মানুদা কয়েকটা ব্লক ঘুরে যেতে বললেন। প্রশাসনকে তৃণমূল স্তরে নামানোর সেই দায়িত্ব আমার মতো কচি মন্ত্রীর উপরও পড়েছিল। তিন দিন ছিলাম। তখন আর কেউ পতাকা ছিঁড়তে আসেনি। সে এক অন্য মেজাজ ছিল।

বুধবার যা হল তা দেখে বুক কাঁপছে। কাদের হাতে দার্জিলিং?

মমতা গত ছ’বছরে পাহাড়কে যা দিয়েছে, তার পরেও এমন আচরণ কেউ করতে পারে? ৪৪ বছর আগে প্রাণভরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে ফিরেছিলাম, আর আজ হাতে প্রাণ নিয়ে কোনও রকমে বেঁচে ফিরছি। সে দিন পতাকা খুলে নেওয়ার পরেও দিন তিনেক ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। আজ, সেনা-পাহারায় শিলিগুড়ি নামছি। একটা রোমাঞ্চ নিয়ে এসেছিলাম, ফিরছি মন খারাপ নিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE