জেরবার: কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে শুধুই অপেক্ষা। সোমবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ
এর আগেও খারাপ আবহাওয়ার জন্য কলকাতায় নামতে না পেরে মুখ ঘুরিয়ে অন্য শহরে উড়ে গিয়েছে বিমান।
কিন্তু সোমবার যা ঘটল, তার জন্য প্রস্তুত ছিল না কলকাতা। সকালে সওয়া তিন ঘণ্টার মধ্যে ২৬টি বিমান কলকাতায় নামতে না পেরে উড়ে গেল ভুবনেশ্বর, গুয়াহাটি, রাঁচী, বাগডোগরা-সহ আশপাশের বিমানবন্দরে। শহরের আকাশ থেকে একসঙ্গে এতগুলি বিমানের মুখ ঘুরিয়ে চলে যাওয়ার ঘটনা এর আগে ঘটেনি বলেই জানিয়েছেন বিমানবন্দরের অফিসারেরা।
এক সময়ে এই সব বিমানবন্দর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে আর কোনও বিমানকে নামার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, তত ক্ষণে ওই বিমানবন্দরগুলির পার্কিং বে সব ভরে গিয়েছে। কলকাতা থেকে মুখ ঘুরিয়ে এর পরে গয়া, আগরতলা, রায়পুর, পটনা, বারাণসী, হায়দরাবাদ, দিল্লি এমনকী ঢাকাও উড়ে গিয়েছে বিমান। কলকাতার আকাশে চক্কর কাটার সময়ে পাইলটেরা বারবার করে জানিয়েছেন, জ্বালানি কমে আসার আগেই তাঁদের যেন নির্দিষ্ট বিমানবন্দরে উড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
বিমানবন্দরের অধিকর্তা অতুল দীক্ষিত জানিয়েছেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বাতিল হয়েছে কলকাতামুখী পাঁচটি উড়ান। কলকাতা থেকে বাতিল হয়েছে ৮টি উড়ান। এ ছাড়াও ৩০টি উড়ান দেরিতে নেমেছে। ২৩টি উড়ান দেরিতে ছেড়েছে। কলকাতার এই আবহাওয়ার কারণে অন্য শহর থেকে ৪৯টি উড়ানের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। কলকাতা থেকে সময় পরিবর্তন করা হয়েছে ৩৭টি উড়ানের।
সকালে কলকাতা থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার যে বিমানটি দিল্লি যায়, সেটি দেরিতে ছাড়ায় অনেক যাত্রী দিল্লি থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার সংযোগকারী উড়ান ধরতে পারেননি। এ দিন কলকাতায় তাঁরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কলকাতা থেকে বারাণসী যাচ্ছিলেন পল্লব রায়। তিনি বলেন, ‘‘আমার ইন্ডিগোর উড়ান ছাড়তে দেরি করে। পাইলট ঘোষণা করেন, রানওয়ে দেখা যাচ্ছে না।’’ অভিজিৎ ঘোষের গুয়াহাটির উড়ান ছাড়ার কথা ছিল ৯টা ১০ মিনিটে। সেই উড়ান ছাড়ে দুপুর দেড়টার পরে। অভিজিতবাবুর কথায়, ‘‘১০টা ৪০ থেকে বিমানেই বসেছিলাম। পাইলট জানান, আবহাওয়া ভাল হলেও গুয়াহাটি যাওয়া যাবে না। কারণ, কলকাতার আকাশ থেকে ইতিমধ্যে এত বিমান সেখানে পৌঁছে গিয়েছে যে সেখানে বিমান নামার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। গুয়াহাটিতে নাকি ১৮টা পার্কিং বে রয়েছে। সেখানে তখন ২২টি বিমান নেমে পড়েছে।’’ পৌনে তিনটে নাগাদ গুয়াহাটি পৌঁছন অভিজিতবাবুর বিমান। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও বাতিল করা হয়েছে কলকাতা থেকে গুয়াহাটিগামী
একটি বিমান।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, সব থেকে বেশি দুর্যোগ দেখা দেয় ৯টা ৫০ মিনিট থেকে ১০টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত। এ দিন মাটি থেকে দেড়শো-দুশো ফুট উপরে ঘণ্টায় প্রায় ৭২ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে বিপরীতমুখী হাওয়া বইছিল। বৃষ্টি রবিবার রাত থেকে শুরু হলেও সোমবার সকাল প্রায় সাড়ে আটটা পর্যন্ত কলকাতায় বিমান নামাওঠা করতে সমস্যা হয়নি। কিন্তু, তার পর থেকেই শুরু হয় হাওয়ার এই পাগলামো।
বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট (এটিএম)-এর জিএম বরুণ সরকার জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে আটটা থেকে পৌনে বারোটার মধ্যে প্রায় ৩৫টি বিমান এসেছিল কলকাতায় নামার জন্য। সেই সময়ে প্রচণ্ড জোরে বিপরীতমুখী হাওয়া বইছিল। তার মধ্যেই এক একটি বিমান একাধিক বার নামার চেষ্টাও করে। কিন্তু ২৬টি নামতে পারেনি। তার মধ্যে ইন্ডিগোর রয়েছে ১২টি উড়ান। তা ছাড়াও এয়ার ইন্ডিয়ার ৫টি, জেটের ৪টি, স্পাইসজেটের ৩টি, গো এয়ারের ১টি এবং ১টি ছোট বিমান মুখ ঘুরিয়ে অন্যত্র চলে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy