ক্ষমতা ব্যবহার করে দুর্নীতির হাজারো অভিযোগ ওঠার পরে তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য ‘লুক আউট নোটিস’ জারি করতে আদালতে আবেদন জানিয়েছিল সিআইডি। প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষকে হাতে পাওয়ার আগেই সেই আবেদন থেকে তাঁর নাম তুলে নিল তারা।
কেন? রাজ্য পুলিশে জোর জল্পনা, তা হলে কি ওই অভিযুক্ত অফিসারের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কোনও রকম সন্ধি-সমঝোতা হয়ে গিয়েছে?!
পশ্চিম মেদিনীপুরের এক কালের দোর্দণ্ডপ্রতাপ পুলিশ সুপার ভারতী ‘মা’ বলতেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তবে অভিযোগ ওঠার পর থেকে তিনি মমতার বাংলা থেকে দূরে। তাঁর সঙ্গীদের ধরপাকড় চললেও তাঁর নাগাল পায়নি সিআইডি। গোয়েন্দারা গত মাসে তাঁর বিরুদ্ধে যে-ভাবে তেড়েফুঁড়ে নেমেছিলেন, তাতে এখন ভাটার টান। সপ্তাহ দুয়েক ধরে ভারতীর তরফেও বিবৃতি দেওয়া বন্ধ। তাতেই সরকার-ভারতী সমঝোতার জল্পনা তুঙ্গে।
দাসপুর থানা এলাকার সোনা লুঠ ও প্রতারণার মামলায় ভারতী এবং তাঁর দেহরক্ষী সুজিত মণ্ডলের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল সিআইডি। দাসপুরের পরে আরও দু’টি মামলা দায়ের করা হয় তাঁদের বিরুদ্ধে। ভারতী ও সুজিতের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করার জন্য আদালতে আর্জি জানায় সিআইডি। পুলিশি সূত্রের খবর, ভারতীর নাম বাদ দেওয়া হলেও সেই নোটিসে সুজিতের নাম থেকে গিয়েছে।
১ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা প্রায় ১৫ দিন ভারতী-ঘনিষ্ঠ পুলিশ অফিসারদের ধরপাকড় থেকে শুরু করে নানা জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে সিআইডি। ভারতীর বাড়ি, ব্যাঙ্কের লকারও বাদ যায়নি। সিআইডি-র দাবি, উদ্ধার হয়েছে সাড়ে চার কোটি নগদ টাকা এবং আড়াই কিলোগ্রাম সোনা। ভারতীও সমানে পাল্টা অডিও বার্তা পাঠিয়ে সিআইডি-র কর্তাদের তুলোধোনা করছিলেন।
আরও পড়ুন: শান্তি পাকা হলেই উন্নয়ন
কিন্তু হঠাৎই দু’পক্ষ নীরব হয়ে যাওয়ায় কোথাও একটা সমঝোতার গন্ধ পাচ্ছেন প্রবীণ পুলিশকর্তারা। রাজ্য পুলিশের একাধিক কর্তার মনে হয়েছে, ভারতীর কাছে রাজ্য প্রশাসনের বহু গোপন তথ্য রয়েছে। তার জোরে ভবিষ্যতে ভারতী বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। তাই তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ যথেষ্টই। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার সঙ্গে ভারতীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়েও পুলিশ শিবিরে আলোচনা শুরু হয়েছে। কলকাতা লাগোয়া একটি জেলায় ভারতী যখন ডিএসপি ছিলেন, তখন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন এখনকার ওই শীর্ষ কর্তা। দু’জনের ঘনিষ্ঠতা সেই সময় থেকেই। ওই শীর্ষ কর্তাই ভরাতীর সঙ্গে সরকারের সন্ধি করিয়ে দিতে আসরে নেমেছেন বলে রাজ্য পুলিশকর্তাদের একাংশের দাবি।
দাসপুরের মামলা পরে ৭৫ জন অফিসার নিয়ে তল্লাশি অভিযানে নেমেছিল সিআইডি। ওই তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, এখন অফিসারের সংখ্যা কমে হয়েছে ২৫। প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে ভারতীর বিরুদ্ধে নতুন কোনও মামলা করার নির্দেশ না-আসায় অফিসারের সংখ্যা কমেছে বলে সিআইডি-র দাবি। ভিন্ রাজ্যে থাকা ভারতী ও সুজিতকে গ্রেফতার করার ব্যাপারেও তদন্তকারীদের বিশেষ হেলদোল দেখা যাচ্ছে না।
সন্ধি-সমঝোতা যদি হয়েই থাকে, তার ফর্মুলাটা কী হতে হতে পারে?
রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, পাহাড়ে পুলিশকর্মী অমিতাভ মালিক খুনের ঘটনার মূল চক্রী হিসেবে বিমল গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। পরে সিআইডি-র দাখিল করা চার্জশিটে বিমলের নামই দেয়নি সিআইডি। ভারতীর ক্ষেত্রে তেমনই কিছু করার চেষ্টা চলছে বলে মনে করছেন ওই পুলিশকর্তা।
তবে ভারতীর আইনজীবী পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমার মক্কেল অসুস্থ। তিনি আইনি লড়াইয়ের নথি প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy