আরামবাগ এলাকায় মানুষের ‘ব্যক্তিজীবনে’ নাক গলানোই ‘কাল’ হয়েছিল সিপিএমের। লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে হারের কারণ বিশ্লেষণে বসে দলের আরামবাগ-গোঘাট এলাকার নেতাদের সামনে এমনই তথ্য উঠে এসেছিল।
মইগ্রামে মা-ছেলের বিবাদে গ্রামের তৃণমূল সদস্য ঝর্না সিংহের ‘নাক গলানোর’ মধ্যেও সেই ছায়াই দেখছেন আরামবাগের মানুষ। গত ক’দিন ধরে ঝর্নার বিরুদ্ধে গ্রাম জুড়ে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার পোস্টার পড়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের বুধবার বলতেও শোনা গিয়েছেসিপিএমের পথেই হাঁটছে তৃণমূল। কেন?
বছর কয়েক আগে আরামবাগ এলাকার এক ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে তিন যুবককে পার্টি অফিসে ডেকে পাঠিয়েছিলেন স্থানীয় সিপিএম নেতারা। পুলিশকে এড়িয়ে দলীয় কার্যালয়েই ‘বিচার’ করে সেই তিন যুবককে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের স্মৃতিতে এখনও সে ঘটনা টাটকা। তাঁদের দাবি, এখন একই ঢঙে স্থানীয় মানুষের যে কোনও ব্যাপারে ‘নাক গলাচ্ছেন’ তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। সেই তালিকায় রয়েছেন ঝর্না ও তাঁর স্বামী রঞ্জিত।
ঝর্না অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। এ দিন টেলিফোনে তিনি বলেন, “মইগ্রামের ঘটনায় কিছু লোক পরিকল্পনা করে আমাকে ফাঁসাচ্ছে। ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। কার্তিক বাগকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া কিংবা এ ব্যপারে নাক গলানোর প্রশ্নই নেই।” তাঁর দাবি, ওই ঘটনা নিছকই মা-ছেলের ঝগড়ার পরিণতি। তার জেরেই কার্তিক আত্মঘাতী হয়েছেন।
এ দিন তিরোল পঞ্চায়েত সদস্য ঝর্নাকে তাঁর মোবাইল ফোনে পাওয়া গেলেও পুলিশের কাছে তিনি অবশ্য ‘পলাতক’। জেলা পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, গ্রেফতারের জন্য তাঁকে ‘হন্যে’ হয়ে খোঁজা হচ্ছে। ঘটনার দু’দিন পর তাঁর খোঁজ মেলেনি। পুলিশের দাবি, মোবাইল ফোনেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
অভিযোগ ছিল শুধু ঝর্না নন, ওই যুবককে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ায় দায়ী ওই তৃণমূল নেত্রীর স্বামী রঞ্জিতও। এ দিন সে ব্যাপারে ঝর্নার দাবি, “ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। তবে সেখানে আর কে ছিল তা আমি বলতে পারব না।” এলাকায় তোলাবাজির যে অভিযোগ রয়েছে তা-ও সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
রঞ্জিত অবশ্য স্বীকার করেন যে ওই দিন ঘটনাস্থলে তিনি হাজির ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি হাজির ছিলাম। তবে আমি কাতির্ককে বলেছিলাম, তোর মা অন্যের বাড়িতে কেন কাজ করতে যায়? তুই তো নিজেই খাটতে পারিস। এর পর সে মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে সকলের সামনেই বিষ খায়। এর মধ্যে আমার প্ররোচনার প্রশ্ন কোথায়?”
ওই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল। স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের কথায়, “দলীয় স্তরে ওই ঘটনার অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে। যদি আমাদের পঞ্চায়েত সদস্য কোনও দোষ করে থাকেন তাহলে তাঁর অবশ্যই শাস্তি হবে।”
ছেলেকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে কার্তিকের মা ষষ্টীবালাকে মঙ্গলবারই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এ দিন তাঁকে আরামবাগ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁর তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ঝর্না সিংহ-সহ অন্য সাত অভিযুক্ত পুলিশের খাতায় এখনও ফেরার।
কার্তিকের স্ত্রী ঝুমা তাঁর শাশুড়ি ধরা পড়ায় খুশি। তিনি বলেন, “ওঁর কঠোর শাস্তি চাই।” তিনি গ্রাম ছেড়ে আপাতত বাপের বাড়ি বেনেপুকুরে। এ দিন সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান সিপিএমের হুগলি জেলা মহিলা সংগঠনের এক প্রতিনিধি দল। ঝুমার হাতে পাঁচ হাজার টাকাও তুলে দেন তাঁরা। পরে দেখা করে ‘পাশে’ থাকার আশ্বাস দেন স্থানীয় সাংসদও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy