শ্বাসকষ্ট, অম্বল, অনিদ্রা, বুক ধড়ফড় ও পেট ফুলে যাওয়া। এই সব উপসর্গ নিয়ে শনিবার দুপুরে ফের কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন মদন মিত্র। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হয়েছে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রীর।
তবে আপাতত তাঁর হৃদযন্ত্র একেবারে ঠিকঠাক কাজ করছে। চিকিৎসকেরা দেখেছেন, মন্ত্রীর রক্তচাপ ১৭০/৯০। নাড়ির গতি ৯০ থেকে ৯৫ এর মধ্যে। এ দিন মদনবাবুর চিকিৎসা করেন অভিজ্ঞান মাজি। তিনি বলেন, “নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল বলে রোগীকে অল্প অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। হাল্কা ঘুমের ওষুধ ও গ্যাস-অম্বলের ওষুধও চলছে।” চিকিৎসকের পরামর্শ মন থেকে সব উৎকণ্ঠা-আতঙ্ক সরিয়ে রেখে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে মন্ত্রীকে।
প্যানিক অ্যাটাক রোগটা কী?
মনোচিকিৎসক মলয় ঘোষাল বলেন, “কোনও বিশেষ কারণে রোগী প্রবল আতঙ্কে ভোগেন। হাত-পা কাঁপে, বুক ধড়ফড় করে, প্রচুর ঘাম হয়। অনেকের গলা শুকিয়ে যায়, নিঃশ্বাসে কষ্ট হয়। যে কোনও সময় দম বন্ধ হয়ে যাবে রোগী এমন ভয় পেতেও শুরু করেন।” চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, রোগীর মনে যে ভয় বাসা বেঁধেছে তা যে কোনও সময় বাস্তবায়িত হবে, এমন আতঙ্ক চেপে ধরে তাঁকে। সেই আতঙ্ক জন্ম দেয় প্যানিক অ্যাটাক-এর।
গত ২১ অগস্ট এই হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছিলেন মদনবাবু। সে বারেও একই উপসর্গ ছিল। কিন্তু এক মাসের মধ্যে মন্ত্রীকে কেন হাসপাতালে ভর্তি করতে হল, তা নিয়েই চিন্তিত চিকিৎসকেরা। তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েক জন বলছেন, সারদা-কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে তাঁর এক প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক বাপি করিমের। করিমকে ডেকে জেরাও করেছেন তদন্তকারীরা। মন্ত্রীর এক বর্তমান ছায়াসঙ্গী প্রশান্ত প্রামাণিকও সিবিআই জেরার মুখে পড়েছেন। সিবিআই সূত্রের খবর, তদন্তকারীদের কৌশলের কাছে হার মেনে বহু গোপন কথাই জানিয়েছেন তাঁরা। ঘনিষ্ঠদের আশঙ্কা, তার পর থেকে মদনবাবু ভীষণ মানসিক চাপে রয়েছেন। তাঁর বুক ধড়ফড় করছে, ঘুমও ছুটেছে।
চিকিৎসকদের মন্ত্রী জানিয়েছেন, এ দিন সকালেই তাঁর বুকে ব্যথা চাগাড় দেয়। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় সরকারি অনুষ্ঠানেও যেতে পারেননি। ক্রমশ সেই ব্যথা বাড়তে থাকায় দুপুরে নিজেই ফোন করেন ওই হাসপাতালের সিইও প্রদীপ টন্ডনকে। তার পরে তাঁকে চার তলার একটি কেবিনে চিকিৎসক সুব্রত মৈত্রের অধীনে ভর্তি করা হয়। সুব্রতবাবু তখন হাসপাতালে ছিলেন না। তাঁর দলের অন্য চিকিৎসকেরা মন্ত্রীকে পরীক্ষা করেন। টন্ডন বলেন, “আমাকে ফোন করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মন্ত্রী হাসপাতালে পৌঁছ যান। উনি বেশ ধীরে হাঁটাচলা করছিলেন, হাঁফাচ্ছিলেন। দুর্বল ও অসুস্থ লাগছিল ওঁকে। হুইলচেয়ারে বসিয়েই ওঁকে কেবিনে পাঠানো হয়।”
গত মাসে আট দিন হাসপাতালে ছিলেন মদনবাবু। ডাক্তাররা তাঁকে ছাড়ার কথা বললেও মন্ত্রী আরও কিছু দিন হাসপাতালে থাকতে চেয়েছিলেন। সেই আর্জি মানা হয়নি। সূত্রের খবর, মন্ত্রীর অসুখ নিয়ে সিবিআই হাসপাতালে খোঁজ নেওয়ার পরেই মদনবাবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখন তাড়াতাড়ি ছাড়া হয়েছিল বলেই কি বুকের ব্যথা বাড়ল? টন্ডন বলেন, “রোগী পুরোপুরি সুস্থ না-হলে ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন নেই। আগের বার মন্ত্রী সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন বলেই তাঁকে ছাড়া হয়েছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy