Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মেদিনীপুর মে়ডিক্যাল

ক্রেতা পুলিশ, পাচারে পাকড়াও আয়া

শিশু পাচার চক্রের ছায়া এ বার সরকারি হাসপাতালেও। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার ‘সোহান’ নার্সিংহোমে শিশু পাচার চক্রের হদিস পাওয়ার পরে এক সপ্তাহও কাটেনি।

অভিযুক্ত আয়া শিবানী রুইদাস। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

অভিযুক্ত আয়া শিবানী রুইদাস। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১৪
Share: Save:

শিশু পাচার চক্রের ছায়া এ বার সরকারি হাসপাতালেও। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার ‘সোহান’ নার্সিংহোমে শিশু পাচার চক্রের হদিস পাওয়ার পরে এক সপ্তাহও কাটেনি। শিশু পাচারের সময় ক্রেতা সেজে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক আয়াকে হাতেনাতে ধরল পুলিশ। এই ঘটনার সঙ্গে বড় কোনও চক্রের যোগ রয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। মঙ্গলবারের ওই ঘটনায় হাসপাতালের আয়া শিবানী রুইদাস-কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সদ্যোজাত কন্যা সন্তানের মা, ঠাকুমা, ঠাকুর্দাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

গোপন সূত্রে পুলিশ আগেই খবর পায়, মেদিনীপুর মেডিক্যালের আয়া শিবানী এক সদ্যোজাত কন্যা সন্তান বিক্রির চেষ্টা করছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল একজনকে ক্রেতা সাজিয়ে ওই আয়ার কাছে পাঠায়। দর কষাকষিতে ওই কন্যা সন্তানের দাম ঠিক হয় পাঁচ হাজার টাকা। মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে ছুটির দিনই সদ্যোজাতকে হস্তান্তর করা হবে বলেও কথা হয়।

গত শনিবার মেদিনীপুর মেডিক্যালে কন্যা সন্তান প্রসব করেন বছর পনেরোর কিশোরী। ঝাড়খণ্ডের চণ্ডীপুরের বাসিন্দা ওই কিশোরীর এখনও বিয়ে হয়নি। তার বাবা উত্তম দণ্ডপাট ফুচকা বিক্রি করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, হাসপাতালে মেয়ের বাচ্চা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করছিল উত্তম। সেই সময় অভিযুক্ত আয়া শিবানী তাদের বাচ্চাটি বিক্রি করে দেওয়ার পরামর্শ দেয়। বিক্রির সব ব্যবস্থা সে-ই করে দেবে বলেও জানায়।

কথা মতো মঙ্গলবার সকাল থেকেই তৈরি ছিল পুলিশের বিশেষ দল। দুপুরে হাসপাতালের প্রবেশপথের কাছে ক্রেতার বৌদি সেজে গাড়ি নিয়ে হাজির ছিলেন পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের আধিকারিক কবিতা দাস। দুপুর ২টো নাগাদ ওই সদ্যোজাতের ঠাকুমা কবিতা দণ্ডপাট বাচ্চা কোলে নিয়ে ওই গাড়ির কাছে আসে। পাঁচ হাজার টাকা দিতেই সদ্যোজাতকে পুলিশ আধিকারিক কবিতা দাসের হাতে তুলে দেয় সে। সঙ্গে সঙ্গে সদ্যোজাতের ঠাকুমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে উত্তম ও তার স্ত্রী জানিয়েছে, সংসারে অভাবের কারণেই তারা বাচ্চা বিক্রি করতে রাজি হয়ে যায়। ঠিক হয়েছিল, বাচ্চা বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাবে তার একটা অংশ আয়া পাবে। বাকি টাকা পাবে তারা।

মেদিনীপুর মেডিক্যালে আগেও শিশু বদলের অভিযোগ উঠেছে। পুত্র সন্তান হলেও মায়ের পাশে কন্যা সন্তান রেখে দেওয়ার অভিযোগ নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি। তবে শিশু পাচারের অভিযোগ এই প্রথম। হাসপাতালের সুপার তন্ময় পাঁজা বলেন, “একটি বাচ্চা বিক্রির চেষ্টা হচ্ছিল। হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটিকে ছেড়ে দেওয়ার পর বাইরে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। আমরাও বিভাগীয় তদন্ত করছি।”

প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি আগে থেকেই মেডিক্যালে শিশু পাচার চক্র সক্রিয় ছিল। পুলিশের অনুমান, কোনও চক্র ছাড়া এই কাজ করা কারও পক্ষে অসম্ভব। ধৃত আয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের বাকিদের খোঁজও চলছে। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “বাচ্চা বিক্রির চেষ্টার খবর পেয়ে পুলিশ খদ্দের সেজে গিয়ে হাতেনাতে তাদের ধরে ফেলে। আমরা বিষয়টি সিআইডিকেও জানাচ্ছি। এর পিছনে কোনও চক্র কাজ করছে কি না, তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

inborn trafficking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE