Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
কোন্দল বন্ধে...

বিজেপিতে যেতে হলে এখনই যান: কড়া মমতা

শুক্রবার তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে এটিই ছিল নেত্রীর সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সংগঠন চাঙ্গা করতে দলীয় কোন্দল দমনেও কড়া হয়েছেন নেত্রী।

এক-ডাকে: তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে উপস্থিত দলের সব নেতা-মন্ত্রী। শুক্রবার কালীঘাটে। —নিজস্ব চিত্র।

এক-ডাকে: তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে উপস্থিত দলের সব নেতা-মন্ত্রী। শুক্রবার কালীঘাটে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:০৩
Share: Save:

তৃণমূলের কিছু লোক যে বিজেপির সঙ্গে তলায় তলায় যোগাযোগ রাখছেন, এমন অভিযোগ তিনি আগেও তুলেছিলেন। শুক্রবার আরও এক ধাপ এগিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিলেন, ‘‘যাঁরা বিজেপিতে যেতে চান, চলে যান। দরজা খোলা আছে। সিপিএমে যেতে চাইলেও যেতে পারেন।’’

শুক্রবার তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে এটিই ছিল নেত্রীর সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সংগঠন চাঙ্গা করতে দলীয় কোন্দল দমনেও কড়া হয়েছেন নেত্রী। তাঁর হুঁশিয়ারি, অবিলম্বে ঝগড়া না মেটালে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সংগঠন মজবুত করার কাজে নেমে মমতা এ দিন বেশ কিছু নেতার প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। যেমন, হুগলির জেলা সভাপতি ও মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তের কাজে অসন্তুষ্ট নেত্রী তাঁর কাছে জানতে চান, মন্ত্রিত্ব না জেলার দায়িত্ব, কোনটা তিনি সামলাতে পারবেন। দু’টো একসঙ্গে না পারলে কোনও একটা ছেড়ে দেওয়াই ভাল। হুগলিতে সাম্প্রতিক কিছু গোলমালে অসন্তুষ্ট হয়ে জেলার কার্যকরী সভাপতি হিসাবে প্রবীর ঘোষাল ও অসীমা পাত্রের নাম ঘোষণা করেন মমতা। এখন হুগলির পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম। সেই দায়িত্ব অরূপ বিশ্বাস সামলাবেন বলে তৃণমূল নেত্রী জানান।

একই ভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর গোলমাল নিয়েও বিধায়ক সওকত মোল্লা, জয়ন্ত নস্করকে কড়া ধমক দিয়েছেন নেত্রী। গোলমাল না থামালে দল থেকে বিতাড়নেরও হুমকি দিয়েছেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের মন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা জেলা সভাপতির সঙ্গে সহযোগিতা করছেন না বলে অভিযোগ করেছেন মমতা। মালদহ, মুর্শিদাবাদে প্রশাসনিক কাজে জেলা তৃণমূলের হস্তক্ষেপ নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেন তিনি। প্রতি জেলায় সংগঠন সাজাতে মাসে দু’দিন বৈঠক করার নির্দেশ দিয়ে মমতার মন্তব্য, ‘‘যদি বালু (খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক) মাসে দু’বার বসতে পারে, বাকিরা পারবে না কেন?’’

নেত্রী: দলীয় বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চায়েতের আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ দ্রুত শেষ করার দায়িত্বও অরূপকেই দিয়েছেন নেত্রী। এক সময় এই দায়িত্ব মুকুল রায়ের হাতে ছিল। পরে তা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দেওয়া হয়। এ বার শোভনের জায়গায় অরূপকে বেছে নেওয়ার পিছনে নারদ-তদন্তের ছায়া রয়েছে বলেই দলের একাংশের ধারণা।

তা ছাড়া, বিজেপির দিকে পা বাড়ানো নেতাদের মধ্যে সর্বাগ্রে মুকুলকেই ধরা হচ্ছে বলে দলে গুঞ্জন অব্যাহত। সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে মুকুলের ডানা ছাঁটার প্রক্রিয়াও চলছে। তাঁর হাত থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দায়িত্ব নিয়ে দেওয়া হয়েছে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তকে। যদিও এ দিন নির্দিষ্ট কারও নাম মুখে আনেননি মমতা। মুকুলও বৈঠকে অন্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মঞ্চেই বসেছিলেন। তাঁর উদ্দেশে মমতার একটি মাত্র নির্দেশ, তিনি পঞ্জাব যেমন দেখছিলেন, তেমনই দেখবেন।

আরও পড়ুন:বাংলা, ইংরেজি, হিন্দিতে ‘বাংলা’ই চাইছে রাজ্য

তবে তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের খবর, নেত্রী মনে করেন ‘বিষবৃক্ষ’ অঙ্কুরেই বিনাশ করা ভাল। কারণ, পরপর কয়েকটি ভোটে রাজ্যে দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। সেই সঙ্গে, কয়েকটি ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক গোলমালে তৃণমূলের কিছু নেতার ভূমিকা ‘আপত্তিকর’ বলেও দল মনে করে। দলের মতে, এই ভূমিকা বিজেপির উত্থানের পথ প্রশস্ত করছে।

সেই সূত্রেই মমতা জানিয়ে দেন, যাঁরা বিজেপিতে যেতে চান, তাঁদের জন্য দরজা খোলা রয়েছে। একই সঙ্গে অবশ্য সিপিএমে যাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। যদিও দলের অনেকের মতে, শুধু বিজেপির নাম করলে পাছে তাদের বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাই এহেন কৌশল। পাশাপাশি দলের একাংশ মনে করছে, মমতার কাছে ‘দোদুল্যমান’ নেতাদের সম্পর্কে বিশদ খবর যে রয়েছে, তারই ইঙ্গিতও এ দিন দিয়ে দেওয়া হলো।

বিজেপি সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে মমতা বলেন, দুর্গাপুজো থেকে কালীপুজোর প্রতিটি দিন নেতাদের নিজের নিজের এলাকায় থাকতে হবে। মহরম যাতে নির্বিঘ্নে পালিত হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE