Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ধৃত মহিষাদলের যুবক

জামাই হব, সটান ফোন সচিনকেই

মহিষাদলের দেবকুমার মাইতি। বছর বত্রিশের এই যুবক সারাকে বিয়ে করতে চেয়ে বার কুড়ি ফোন করেন মাস্টার ব্লাস্টারের বাড়িতে। প্রতিবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই একই কথা— ‘‘আমি আপনার জামাই হব।’’

ধৃত: দেবকুমার মাইতি। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

ধৃত: দেবকুমার মাইতি। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক ও হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩০
Share: Save:

দু’বছর ধরে ঘর জুড়ে লিখে রেখেছেন মেয়েটির নাম। মোটরবাইকের হেডলাইটে লিখেছেন— ‘সারা ও দেব’। হাতে উল্কিও এঁকেছেন তার নামে।

এখানেই থেমে গেলে ব্যাপারটা অন্য রকম হত। কিন্তু ধন্যি ছেলের অধ্যবসায়! কী ভাবে যেন জোগাড় করে ফেলেছিলেন মেয়ের বাবার ফোন নম্বর। তার পরেই সোজা মুম্বইয়ে ফোন— ‘‘সচিন স্যার, ম্যায় আপকি লড়কি সারাসে শাদি করনা চাহতা হুঁ। সারা সির্ফ মেরি হ্যায়।’’

মহিষাদলের দেবকুমার মাইতি। বছর বত্রিশের এই যুবক সারাকে বিয়ে করতে চেয়ে বার কুড়ি ফোন করেন মাস্টার ব্লাস্টারের বাড়িতে। প্রতিবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই একই কথা— ‘‘আমি আপনার জামাই হব।’’

বারবার ফোন আসায় ২ জানুয়ারি বান্দ্রা থানায় অভিযোগ জানান সচিন। যে মোবাইল থেকে ফোন আসত, সেই নম্বরের সূত্র ধরেই সেই যুবকের কাছে পৌঁছেছিল মুম্বই পুলিশ। শনিবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থানার আন্দুলিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয় দেবকুমারকে। রবিবার তাঁকে হলদিয়া আদালতে তুলে তিন দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়েছে মুম্বই পুলিশ।

আরও পড়ুন: বাংলা অ্যাকাডেমির পদ ছাড়ছেন শাঁওলি মিত্র

পছন্দের ক্রিকেটারকে প্রেম নিবেদন নতুন কিছু নয়। ২০০৭ সালে মুর্শিদাবাদের এক তরুণী ইডেন গার্ডেন্সে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে জড়িয়ে ধরে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু মহিষাদলের প্রত্যন্ত গ্রামের এক যুবক সচিনের মতো তারকার ফোন নম্বর জোগাড় করে তাঁর মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার মতো কাণ্ড কী করে ঘটালেন! পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমার বলেন, ‘‘মুম্বই পুলিশ ওই যুবককে চিহ্নিত করতে সাহায্য চেয়েছিল। কী ভাবে সে সচিনের ফোন নম্বর পেল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

দেবকুমার যে সচিন-ভক্ত তা পাড়া-পড়শিরা জানেন। সারাকে নিয়ে পাগলামির কথা জানেন পরিজনেরাও।
দেবকুমারের পরিবারের দাবি, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। চিকিৎসাও চলছে। পুলিশকে সেই কাগজপত্রও দিয়েছেন দেবকুমারের আত্মীয়েরা। আটপৌরে পরিবারের ছেলে। বাবা বিমানবিহারী মাইতির পান বরজ ছিল।
ছয় ভাই-বোনের মধ্যে দেবকুমারই ছোট। চার দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে মারা গিয়েছেন বাবা। বৃদ্ধা মা কনকলতা মাইতি ও দাদা রাজকুমারের সঙ্গেই থাকেন দেবকুমার। উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। সাইনবোর্ড লেখার কাজ করেন। দাদা রাজকুমারের কথায়, ‘‘৮ বছর ধরে ভাইয়ের মানসিক রোগের চিকিৎসা চলছে। ও আমাদের অনেক বার বলেছে, ‘সচিনের মেয়েকেই বিয়ে করব’। ডায়েরির পাতায় সারার নাম লিখেছে, কিন্তু এমন কাণ্ড যে ঘটাবে, তা বুঝিনি।’’ হতবাক মা বললেন, ‘‘খুব বকতাম। কিন্তু ছেলে কান দিত না। শুধু বলত, দেখো এক দিন সচিন স্যার ঠিক আমাকে ডাকবেন।’’

কিন্তু দেবকুমার কী ভাবে সচিনের মতো ব্যক্তিত্বের ফোন নম্বর জোগাড় করলেন, সেটাই ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, ওই যুবক কখনও বলছেন মুম্বইয়ে কাজ করতে গিয়ে ফোন নম্বর পেয়েছেন, কখনও আবার জানাচ্ছেন সচিনের নম্বর দিয়েছেন মুম্বই প্রবাসী এক আত্মীয়। পুলিশের আর একটি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, ওয়েবসাইট ঘাঁটাঘাঁটি করে প্রথমে মুম্বইয়ে সচিনের অফিসের ফোন নম্বর জোগাড় করেন দেবকুমার। তার পর নিজেকে সচিন-ভক্ত পরিচয় দিয়ে তাঁর বাড়ির নম্বর জোগাড় করেন। পুলিশ দেবকুমারের মোবাইলটি বাজেয়াপ্ত করেছে।

সচিনের কাছে ক্ষমা চেয়ে রাজকুমারবাবু বলেন, ‘‘ভাইয়ের আচরণের জন্য আমরা সচিনের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা চাই প্রশাসন ভাইয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করুক।’’

যাঁকে নিয়ে এত কাণ্ড, সেই দেবকুমার কিন্তু নির্বিকার। আদালতে বিচারকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘‘টিভিতে খেলা দেখার সময়ে দেখতাম, প্যাভিলিয়নে সারা বসে আছে। তখনই ওর প্রেমে পড়ি। সচিনই আমার শ্বশুর।’’ সাংবাদিকদেরও তিনি বলেন, ‘‘সারা তেন্ডুলকরকে আমি ভালবাসি, ওকেই বিয়ে করতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE