শোকার্ত পরিবার। ইনসেটে, নিহত নবকুমার হাইত। ছবি: সুব্রত জানা।
স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়া ইস্তক শোকের মাঝেও একটাই প্রশ্ন বার বার করছেন সুচিত্রাদেবী, ‘‘ওঁর সঙ্গে থাকা অন্য পুলিশরা কী করছিল। ওরা ওঁকে বাঁচাতে পারল না কেন?
একমাত্র ছেলেকে নিয়ে এখন কী করবেন জানেন না সুচিত্রাদেবী। বৃহস্পতিবার রাতে তমলুকের মহিষাদল থানায় কর্মরত স্বামী নবকুমার হাইত রুটিন টহলদারির সময় দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন। এদিন সকালে হাওড়ার জয়পুরের বিনোলা গ্রামে বাড়িতে এই প্রতিবেদকে দেখে কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, ‘‘ওঁর মুখে শুনতাম, যে জায়গায় ওঁকে কাজে বহাল করা হয়েছিল সেটা দুষ্কৃতীদের আখড়া। তাহলে ওঁর সঙ্গে বেশি লোক দেওয়া হল না কেন। তা হলে হয়তো এ ভাবে মরতে হত না। ওঁর সঙ্গীরাই বা কী করছিল, ওকে বাঁচাতে পারল না?’’
খবর পেয়ে সকাল থেকেই জড়ো হয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। একই প্রশ্ন তাঁদেরও। দুপুরে নবকুমারের বাড়িতে এসেছিলেন আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র। দুষ্কৃতীদের ঘাঁটিতে টহলদারির সময়ে কেন নবকুমারের সঙ্গে বেশি পুলিশকর্মী ছিলেন না সেই প্রশ্ন এ দিন উঠে এসেছে বিধায়কের মুখেও। ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত দাবি করেছেন তিনি।
পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদন হয় চাষবাস থেকে। সংসার চালাতে নগদ টাকার জোগাড়েই ভাই-ই ছিল তাঁদের ভরসা। আর সে জন্যই চাকরি নিয়েছিল সে। এমনকী চাকরি পাওয়ার আগে এক সময় ভ্যানও চালিয়েছে। শুক্রবার নবকুমারের বাড়িতে এমনটাই জানালেন তাঁর দাদা শুকদেব।
জয়পুরে হাইত পরিবারে তিন ছেলের মধ্যে নবকুমার মেজ। বাবা ছিলেন রাজ্য সরকারি চাকুরে। বছর চারেক আগে তিনি মারা যান। একতলা দুই কামরার পৈত্রিক পাকা বাড়িতে স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলে শুভকে নিয়ে থাকতেন নবকুমার। পাশেই আর একটু বাড়িতে থাকতেন তাঁর দাদা, ভাই, মা। সুচিত্রাদেবী বলেন, ‘‘প্রতিদিন রাত ১০টা নাগাদ ও ফোন করত। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে আর ফোন আসেনি। আমি কয়েক বার পাল্টা ফোন করলেও কোনও উত্তর পাইনি। ভেবেছিলাম বোধহয় কাজে ব্যস্ত আছে। হঠাৎই বড় ভাসুর টেলিভিশন দেখে চিৎকার করে ওঠেন। পরে রাতে জয়পুর থানা থেকে আমাদের খবর দেওয়া হয়।’’
এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ নবকুমারের বাড়িতে পৌঁছলে দেখা গেলে চারপাশে প্রতিবেশীদের ভিড়। তাঁদের অনেকের কাছে শোনা গেল পুলিশে চাকরির পাশাপাশি এলাকায় নানা সামাজিক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তেন নবকুমার। আর সে জন্য জনপ্রিয়ও ছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা গেল, ২০০১ সালে পুলিশে চাকরি পাওয়ার আগে বাড়িতে চাষবাসে সাহায্য করতেন। সুচিত্রাদেবীর বাপের বাড়ি উদয়নারয়াণপুরের রবিরামপুর গ্রামে। জানালেন, ‘‘সপ্তাহখানেক পরেই ওঁর বাড়ি আসার কথা ছিল। আমাকে বাপের বাড়িতে নিয়ে যাবে বলেছিল। ছেলেকে নিয়ে ওর নানা স্বপ্ন ছিল। এখন কী থেকে কী হবে জানি না।’’ কথা শেষ করেই ডুকরে উঠলেন সুচিত্রাদেবী।
থলিয়া ইউনিয়ন হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র শুভ অন্যদিন এই সময় স্কুলে থাকে। কিন্তু এ দিন তাকে কেউ স্কুলে নিয়ে যায়নি। উল্টে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির সামনে লোকের ভিড় দেখে সে অবাক। বার কয়েক মাকে প্রশ্ন করেও উত্তর না পেয়ে সে কিছুটা হতভবম্ব। এক ফাঁকে পাড়ারই একজন এসে তাকে বাইরে ডেকে নিয়ে গেল। বাবা যে নেই, সেই খবরটা এখনও সে জানে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy