সেতু ভেঙে বাস পড়ল জলে। নিজস্ব চিত্র।
সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে পারলে দিনে দিনেই ফেরা যাবে। ডোমকলের মধুপুর গ্রামের সাজেদা বিবি তাই কাকভোরেই ঘুম থেকে উঠে দু’বছরের ছোট মেয়েটাকে ফুলকাটা সোয়েটার আর মাফলার জড়িয়ে তৈরি করে নিয়েছিলেন। স্বামী আলিবক্সকে ডেকে তুলেছিলেন, ‘ঢের ঘুম হয়েছে, ওঠ দেখি!’ ডোমকলের ওল্ড বিডিও মোড় থেকে স্বামী-কন্যা নিয়ে যখন বাসে উঠেছিলেন তখন ঘড়িতে ৬টা।
বড় মেয়ে, বছর পাঁচেকের রুমা খাতুন বায়না ধরেছিল সঙ্গে যাওয়ার। বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাকে জোর করেই বাড়িতে রেখে ঘর-ছাড়ার আগে বলে গিয়েছিলেন, ‘অমন করে না মা, দেখ না, এই যাব আর আসব!’
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সাজেদা অনর্গল বলে চলেছেন, ‘‘কেন যে জোর করে ঘুম থেকে তুলতে গেলাম ওদের? বিলের জলে স্বামী-মেয়ে রেখে কাকে নিয়ে বাড়ি ফিরব?’’ ভান্ডারদহের বিলে তলিয়ে যাওয়া বাস থেকে কোনওমতে ভেসে উঠেছেন সাজেদা। কিন্তু আলিবক্স আর সুরাইয়া? সোমবার সন্ধেয় তাদের শরীর যখন উঠল, তখন না-ভাঙা ঘুমে তলিয়ে গিয়েছে বাবা আর মেয়ে।
আরও পড়ুন: সেতু ভেঙে বাস জলে, মৃত ৩৬, উদ্ধার ঘিরে বিক্ষোভ, আগুন মুর্শিদাবাদে
ইটভাটার শ্রমিক আলিবক্সের মূত্রনালিতে সংক্রমণ। ডোমকলের চিকিৎসক বহরমপুরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। পড়শির কাছে ধার করে তাই স্বামীকে নিয়ে বহরমপুরের বাস ধরেছিলেন সাজেদা। বাসে তাঁরা কেউই ‘সিট’ পাননি। আলিবক্সের কোলে ছিল সুরাইয়া। আর দরজার কাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাজেদা।
সাজেদা বলছেন, ‘‘বাসটা বেশ জোরে যাচ্ছিল। আচমকা একটা শব্দ, জলে পড়লাম, তলিয়ে যাচ্ছি, হাঁচড় পাঁচড় করে ভেসে উঠলাম। কিন্তু ওদের আর খুঁজে পেলাম না। কেন এমন হল বলুন তো?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy