Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্ববাংলার জন্য লড়াইয়ে নবান্ন, তৈরি মুকুলও

মুকুলের সমাবেশের পরে শুক্রবারই স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য নবান্নে বলেছিলেন, ‘বিশ্ববাংলা’ ব্র্যান্ড ও লোগো পুরোপুরি সরকারের সম্পত্তি। সেই বক্তব্যেরই সমর্থনে এ দিন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিংহকে পাশে নিয়ে অত্রিবাবু ফের বলেছেন, ‘‘বিশ্ববাংলা একটি সরকারি সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রী লোগো তৈরি করে সরকারকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন।’’

মুকুল রায়। ছবি: সংগৃহীত

মুকুল রায়। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২৪
Share: Save:

বিজেপি-র সভায় দাঁড়িয়ে ফাইল হাতে ‘বিশ্ববাংলা’ নিয়ে মুকুল রায় যে অভিযোগ করেছিলেন, তা সামাল দিতে ফের আসরে নামতে হল রাজ্য সরকারকে। এক দিকে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবীর তরফে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি এবং তার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের পাল্টা তথ্য পেশ, এই জোড়া অস্ত্রেই মুকুলের মোকাবিলা করতে চাইছে শাসক পক্ষ। আর মুকুলও শনিবার জানিয়ে দিয়েছেন, আইনি লড়াইয়ের জন্য তিনি প্রস্তুত।

মুকুলের সমাবেশের পরে শুক্রবারই স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য নবান্নে বলেছিলেন, ‘বিশ্ববাংলা’ ব্র্যান্ড ও লোগো পুরোপুরি সরকারের সম্পত্তি। সেই বক্তব্যেরই সমর্থনে এ দিন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিংহকে পাশে নিয়ে অত্রিবাবু ফের বলেছেন, ‘‘বিশ্ববাংলা একটি সরকারি সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রী লোগো তৈরি করে সরকারকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন।’’

রাজীব জানান, ‘বিশ্ববাংলা মার্কেটিং কর্পোরেশন’ ২০১৪-এর ৩১ ডিসেম্বর নথিভুক্ত হয়েছে। তিন জন সরকারি আধিকারিক এর শেয়ার হোল্ডার। তাঁদের নামেই ১০০% ভাগ শেয়ার রয়েছে। এমনকী, সংস্থা খুলতে যে মূলধন লাগে, তা-ও দিয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের সচিব রাজীব, বিশেষ সচিব মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় ও অতিরিক্ত অধিকর্তা সুবলচন্দ্র পাঁজার নামে ওই কর্পোরেশনের শেয়ার রয়েছে। এর বাইরেও হর্ষবর্ধন নেওটিয়া ও রুদ্র চট্টোপাধ্যায় নামে দু’জনের নাম রয়েছে সরকারি নথিতে। রাজীব জানান, ওই দু’জন ‘নন এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর’, সরকারের মনোনীত। তাঁদের নামে কোনও শেয়ার নেই।

বিজেপি-র তরফে নথি দেখিয়ে বলা হচ্ছে, অভিষেকের নামে ২০১৩-এর ২৬ নভেম্বর ‘বিশ্ববাংলা’ নথিভুক্ত হয়েছিল। এটা কি মিথ্যে? রাজীবের বক্তব্য, ‘‘বিশ্ববাংলা-র লোগো মুখ্যমন্ত্রী তৈরি করেছেন। হতে পারে, তখন ওঁর লোক বা পাশের লোক কেউ নিজের নামে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালে উনি (মুখ্যমন্ত্রী) চুক্তি করে আমাদের দিয়েছেন। যেখানে তিনি লোগের স্রষ্টা, আমরা ব্যবহারকারী।’’ ওই চুক্তির পরেই সরকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করে বলে রাজীবের দাবি। তিনি বলেন, ‘‘আবেদনের সময় রেজিস্ট্রি অব ট্রেড মার্ক থেকে আমাদের বলা হয়, ৬ মাস আগে এবং এক মাস আগে দু’টো আবেদনপত্র জমা পড়েছে। তার পরে অভিযেক ওই দু’টি আবেদন প্রত্যাহার করে নেন। রেজিস্ট্রি অব ট্রেড মার্কস তা গ্রহণও করে নিয়েছে।’’

সরকারের বক্তব্য শুনে দিল্লি থেকে এ দিন মুকুলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আইনি নোটিসের কথা বলা হচ্ছে। আইনের লড়াই আমিও আইনের পথে লড়ব।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ওয়েবসাইটে পেটেন্ট খোঁজ নিলে দেখা যাবে, গত কালের তারিখেও ‘বিশ্ববাংলা’র মালিকানা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানানো নেই। ‘বিশ্ববাংলা’ প্রথম নথিভুক্ত হয়েছিল ২০১৩ সালে। আর ওঁরা ২০১৪ সালের একটা চুক্তির কথা বলছেন। তা হলে মাঝের সময়টা কার হাতে ছিল বিশ্ববাংলা?’’ বিশদে এখন আর কিছু বলতে চাই না জানিয়ে মুকুলের কটাক্ষ, ‘‘অত্রি ভট্টাচার্য বড় মাপের আমলা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে যারা ডুবিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম। এ বার উনি এই সরকারকে ধরেছেন!’’

এর মধ্যে রাজনৈতিক তরজাও অব্যাহত। নদিয়ার বেথুয়া়ডহরি-যুগপুরে বিজেপি-র যুব মোর্চার বৈঠকে গিয়ে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ‘‘বিশ্ববাংলার মালিকানা নিয়ে মুকুল যা বলেছেন, তা ফাঁকা আওয়াজ নয়। আমাদের কাছে সমস্ত নথিপত্র আছে।’’ তিনি জানান, মামলা হলে বিজেপি তাদের কাছে যা নথিপত্র রয়েছে, তা আদালতে জমা দেবে। আবার নারায়ণগড়ে তৃণমূল সাংসদ মানস ভুঁইয়া মানসের নাম না করে বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আঘাত করে, অসম্মান করে, অসত্য কথা বলে আক্রমণ করা হচ্ছে। তৃণমূল থেকে যাওয়া বিজেপি-র এক ভাড়াটে সৈনিকের মুখ দিয়ে এ সব বলানো হচ্ছে! দিবা স্বপ্ন দেখছেন!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE