Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মুখে গুরুত্বহীন,ক্ষত তবু বিঁধছে দলের ভিতরে

দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও রাজ্যের প্রতিটি বুথের সংগঠন এখনও মুকুলের চোখের সামনে স্পষ্ট। বিরোধী দল থেকে তৃণমূলকে শাসক দল করে তুলতে মুকুলের ‘অবদান’ প্রকাশ্যে না হলেও ‘আড়ালে’ স্বীকার করে নিচ্ছেন দলের তাবড় অনেক নেতাই। অনেক বিধায়কই তাঁর এলাকা তৈরিতে মুকুলের সাহায্যের কথা অকপটে স্বীকার করেন এখনও। দল মুকুলকে সাসপেন্ড করার পরেও তাঁর প্রতি সেই ‘কৃতজ্ঞতা’ একটুও কমেনি ওই কর্মীদের।

মুকুল রায়।

মুকুল রায়।

দেবারতি সিংহ চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:২১
Share: Save:

টিভিতে মুকুল রায়ের দল ছাড়ার ঘোষণা লাইভ দেখতে দেখতেই সোমবার তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা অস্ফুটে বলে ফেলেছিলেন, ‘‘শকিং!’’ কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরির লড়াইয়ে মুকুল প্রথম থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থেকেছেন। দলের নানা চড়াই-উতরাইয়ে দীর্ঘ দিনের সহকর্মীর সঙ্গে কাটানো দিনগুলো রোমন্থন করে ওই শীর্ষ নেতা বলছিলেন, ‘‘একটা দলে প্রত্যেক কর্মীকে কখনওই সন্তুষ্ট রাখা যায় না। সেই অসন্তোষ চেপে রেখেও দলের বার্তা কেউ যদি কাঁধে বয়ে নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারে, সেই তো প্রকৃত নেতা।’’

দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও রাজ্যের প্রতিটি বুথের সংগঠন এখনও মুকুলের চোখের সামনে স্পষ্ট। বিরোধী দল থেকে তৃণমূলকে শাসক দল করে তুলতে মুকুলের ‘অবদান’ প্রকাশ্যে না হলেও ‘আড়ালে’ স্বীকার করে নিচ্ছেন দলের তাবড় অনেক নেতাই। অনেক বিধায়কই তাঁর এলাকা তৈরিতে মুকুলের সাহায্যের কথা অকপটে স্বীকার করেন এখনও। দল মুকুলকে সাসপেন্ড করার পরেও তাঁর প্রতি সেই ‘কৃতজ্ঞতা’ একটুও কমেনি ওই কর্মীদের।

তবে দলে থেকে ‘বিদ্রোহী’ নেতার প্রতি প্রকাশ্যে সহানুভূতি দেখানো সম্ভব নয়। সে তিনি যত বড়ই ‘মুকুলপন্থী’ হোন না কেন! তাই ‘পুরনো বন্ধু’কে হারানোর বেদনা চেপেই রাখছেন তৃণমূলের নেতারা। সাংগঠনিক নানা সমস্যায় আর মুকুলের সাহায্য পাবেন না, এই আশঙ্কার কথা একান্ত আলোচনায় শোনাচ্ছেন অনেকেই। প্রকাশ্যে তৃণমূলের প্রবীণতম মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলছেন, মুকুল-হীন তৃণমূলের খুব একটা সমস্যা হবে না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল মমতা-ভিত্তিক দল। ফলে দলের বাইরে থেকে মুকুল দলের ক্ষতি করতে পারবে না।’’ তবে বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরা নিজের ফেসবুকে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘যা! লাভ হল না ক্ষতি হল?’’

মুকুলের সঙ্গে সুসম্পর্ক ফিরহাদ হাকিমেরও। তিনি প্রকাশ্যে শুধু বলেছেন, ‘‘পার্থদা’ই যা বলার বলেছেন।’’ মুকুলের পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপি-র সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন অনেক দিন ধরে। শুভেন্দুও মন্তব্য এড়িয়ে বলেছেন, ‘‘আমি কেন বলতে যাব?’’ শ্রীরামপুরে সোমবার পুজোর উদ্বোধনের ফাঁকে স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগে অজিত পাঁজা, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও দল ছেড়ে আবার তৃণমূলে ফিরে এসেছিলেন। দিদির হাত মাথায় না থাকলে মুকুলও কিছু করতে পারবে না!’’

বছরদুয়েক আগে তৃণমূলের সঙ্গে মুকুলের ‘দূরত্ব’ বাড়ার সময়ে তাঁর পাশে ছিলেন বেশ কয়েক জন বিধায়ক। সে সময়ে মুকুলের সঙ্গে থাকার জন্য শো-কজ করা হয়েছিল দুই বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত এবং শিউলি সাহাকে। তাঁরাও এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূলে ছিলাম, আছি, থাকব।’’ দু’বছর আগে একসঙ্গে এগোনোর কথা বলেও শেষমেশ কাউকে না জানিয়ে মুকুল আবার তৃণমূলে থেকে গিয়েছিলেন। যা ওই বিধায়কেরা মেনে নিতে পারেননি। ফলে তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ওঁর নির্ভরযোগ্যতা আর নেই।’’

মুকুল-কাণ্ডে বিরোধীদের মধ্যেও দ্বিমত আছে। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বা বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী মনে করেন, ‘‘মমতা এবং তৃণমূলের সব কিছুতেই মুকুল রায় ছিলেন। রং বদলালেই সব অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি মেলে না।’’ আবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘মুকুল অপমানিত হয়ে দল ছাড়ায় ফাটল ধরল তৃণমূলে। আগামী দিনে এই ফাটল আরও বাড়বে।’’ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘এখন তো দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পরম্পরা চলছে! যদি কেউ বিজেপিতে আসার ইচ্ছে দেখান, দল নিশ্চয়ই তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE