Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সিবিআই মোকাবিলায় এক মঞ্চে মুকুল-শুভেন্দু

বিরল ফ্রেম। হাসিমুখে হাত ধরাধরি করে তৃণমূলের দুই সাংসদ মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারী! শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায়। তবে কি সারদা-কাণ্ডই মিলিয়ে দিল দু’জনকে! শুরু হয়েছে গুঞ্জন। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবু এবং সাংসদ শুভেন্দুর বিরোধ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা বিস্তর।

হাতে হাত। পাঁশকুড়ার সভায় মুকুল-শুভেন্দু। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

হাতে হাত। পাঁশকুড়ার সভায় মুকুল-শুভেন্দু। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share: Save:

বিরল ফ্রেম। হাসিমুখে হাত ধরাধরি করে তৃণমূলের দুই সাংসদ মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারী! শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায়। তবে কি সারদা-কাণ্ডই মিলিয়ে দিল দু’জনকে! শুরু হয়েছে গুঞ্জন।

সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবু এবং সাংসদ শুভেন্দুর বিরোধ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা বিস্তর। দলের অনেকেরই মতে, মুকুলের বিকল্প হিসেবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁকে এগিয়ে দিয়েছেন, সেই ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধায়ের ঘনিষ্ঠ শুভেন্দু। কিন্তু এই সমীকরণ সরিয়ে রেখেই এ দিন বিকালে পাঁশকুড়ায় শুভেন্দুর নেতৃত্বাধীন দলীয় কর্মসূচিতে হাজির হন মুকুলবাবু। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে জেলায় দলীয় কর্মসূচিতে এ দিনই প্রথম একসঙ্গে দেখা গেল দুই সাংসদকে। অথচ গত রবিবারই তমলুকের রাজ ময়দানে জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভায় মুকুলবাবু ছিলেন, উপস্থিত হননি শুভেন্দুুই। মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ দিন শুভেন্দু বলেন, “গত কালই আমার সঙ্গে মুকুল রায়ের কথা হয়েছিল। উনি আমার কাছে এই কর্মসূচির কথা জানতে পেরে বহু কাজ ফেলে আজকের সভায় এসেছেন। এ জন্য তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।” আর তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর বক্তব্য, “দলনেত্রীর কথাতেই উনি এসেছেন।”

বুধবারই সারদা-কাণ্ডে শুভেন্দুকে তলব করেছে সিবিআই। আর সারদা কেলেঙ্কারিতে মুকুলবাবুর যোগের অভিযোগে সরব বিরোধীরা। এরই মধ্যে এ দিন শুভেন্দুর জেলায় তড়িঘড়ি মুকুলের ছুটে যাওয়া, শুভেন্দুর সঙ্গে সভা করা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে একজোট হয়ে সারদা-কাণ্ড এবং সিবিআই মোকাবিলায় পূর্ব মেদিনীপুরে যাওয়ার জন্য মুকুলবাবুকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতাই। শুভেন্দু-মুকুল এক সুরে এ দিন এক সুরে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে তোপও দেগেছেন। মুকুলবাবু জানিয়েছেন, সিবিআইয়ের ভূমিকার বিরুদ্ধে ১৯-২২ সেপ্টেম্বর রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা এ দিন পাঁশকুড়া থেকেই হল। তৃণমূলেরই এক প্রথম সারির নেতার রসিকতা, “মনে হচ্ছে, দু’দলই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলে যেন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল একসঙ্গে মিছিল করছে!”

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে মুকুলবাবু এ দিন বলেন, “সিবিআইয়ের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে লড়াই করব।” প্রায়ই একই সুরে শুভেন্দু বলেন, “নন্দীগ্রামে গুলিচালনা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআই আমাকে ডেকেছিল। যে সব পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে গুলিচালনায় অভিযোগ উঠেছিল, তাঁদেরও বক্তব্য নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিবিআই শুধু পুলিশ অফিসারদের বক্তব্য অনুযায়ী আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল!” শুভেন্দুর দাবি, ‘‘এ বারও আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে।” কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে এ দিন পাঁশকুড়ায় পদযাত্রা ও সভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল। কর্মসূচি পূর্ব ঘোষিত হলেও মুকুলবাবুর আসার কোনও কথা ছিল না। হঠাৎই এ দিন সকালে প্রচার শুরু হয়, ‘মুকুল রায় আসছেন’। বিকেল চারটে নাগাদ পাঁশকুড়ার পিডব্লিউডি মাঠ থেকে কয়েক হাজার তৃণমূল কর্মী-সমর্থককের পদযাত্রা হয় পাঁশকুড়া স্টেশন বাজার পর্যন্ত। নেতৃত্বে শুভেন্দু। পদযাত্রা স্টেশন বাজারে আসার আগেই সভামঞ্চে হাজির হন মুকুলবাবু, বিধায়ক শিউলি সাহা, জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি আনিসুর রহমান, কোলাঘাটের বিধায়ক বিপ্লব রায় চৌধুরী প্রমুখ। এঁরা শুভেন্দু বিরোধী বলেই পরিচিত। শুভেন্দু শিবিরের তরফে ছিলেন, সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল, খেজুরির বিধায়ক রঞ্জিত মণ্ডল, ভগবানপুর ও এগরার বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি, সমরেশ দাস। মঞ্চে দু’পক্ষের কুশল বিনিময়ও হয়।

মিছিল শেষে প্রারম্ভিক বক্তব্যের পরে শুভেন্দু মাইক তুলে দেন মুকুলবাবুর হাতে। তাঁর বক্তব্যের মাঝে আবার শুভেন্দুর নামে জিন্দাবাদ স্লোগান ওঠায় দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়েন মঞ্চে থাকা তৃণমূল নেতৃত্ব! স্লোগান তারস্বরে উঠলে শুভেন্দুুই মুখে আঙুল দিয়ে তাঁদের চুপ করতে বলেন! দলের ভিতরে-বাইরে গুঞ্জন অবশ্য এতে থামছে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE