Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Raju Mahali

চমক দিতে গিয়ে বেইজ্জত! দিল্লির জন্য জবাব খুঁজছেন রাজ্য বিজেপি-র নেতারা

চিত্র এক: কলাপাতায় পাত পেড়ে খাচ্ছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। অমিতের পাশে খেতে বসেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পাশে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৭ ১৪:১৯
Share: Save:

চিত্র এক: কলাপাতায় পাত পেড়ে খাচ্ছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। অমিতের পাশে খেতে বসেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পাশে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আর তার পাশে হাঁটু মুড়ে বসে গৃহকর্ত্রী বলছেন, ‘‘আর একটু খান। মুগের ডালটা ভাল হয়েছে? আর একটু নিন না!’’

চিত্র দুই: স্টিলের গ্লাস হাতে নিয়ে চা খাচ্ছেন তৃণমূল নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। তাঁর হাতে চায়ের ওই গ্লাস তুলে দিয়ে গৃহকর্ত্রী বললেন, ‘‘তাড়াহুড়োয় বানালাম। খারাপ হতে পারে! আপনি চিনি খান না বলে দিইনি।’’

এই দুই চিত্রের মধ্যে ব্যবধান মাত্র এক সপ্তাহের। আর গোটাটাতেই রাজ্য বিজেপি-র অস্বস্তিটা চূড়ান্ত ভাবে প্রকাশ্যে এসে পড়ল। কারণ, বঙ্গ সফরে এসে অমিত শাহ নকশালবাড়ির রাজু মাহালির বাড়িতে দুপুরে খেয়েছিলেন। গত ২৫ এপ্রিল দুপুরে রাজুর স্ত্রী গীতাদেবী যে ভাবে অমিতকে যত্ন করে খাইয়েছিলেন, বুধবার সেই একই আতিথেয়তার সঙ্গে তিনি গৌতম দেবের হাতেও চা তুলে দিয়েছেন। ফারাক শুধু একটাই, এ দিন স্বামী রাজুর সঙ্গে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আর এতেই রাজ্য বিজেপি পড়েছে মহা অস্বস্তিতে। কারণ অমিত সংগঠন বাড়াতে যে ভাবে ঘুঁটি সাজানোর নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন, সে ভাবে এগোতে তো পারেইনি তারা, উল্টে এত দ্রুত শিবির বদলের মুখ দেখতে হল।

আরও পড়ুন...
অমিতকে পাত পেড়ে খাওয়ানো রাজু-গীতা যোগ দিলেন তৃণমূলে

মাহালি পরিবারকে নিজেদের দিকে টেনে এনে এক ঢিলে রাজ্য বিজেপিকে জোড়া অস্ততিতে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। প্রথমত, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মাটিতে বসে আদিবাসী দম্পতির বাড়িতে কলাপাতায় মোটা চালের ভাত, রুটি, ডাল, ঝিঙে-পটলের তরকারি মেখে খাচ্ছেন, এই ছবিকে জাতীয় স্তরে বিজেপি প্রচারের আলোয় এনেছিল। রাজ্য বিজেপি-র সাফল্যের পাশাপাশি এই ছবি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও খুশি করেছিল। খুশি হয়েছিলেন অমিত শাহ। কিন্তু, তৃণমূল এ দিন প্রচারের সেই বেলুনে রীতিমতো পেরেক ফুটিয়ে দিয়েছে। অভিযোগ করেও বিজেপি তার সাংগঠনিক অক্ষমতাকে লুকিয়ে রাখতে পারেনি। আর দ্বিতীয়ত, অমিতের বঙ্গ সফর এ ভাবে সফল করতে পেরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে নিজেদের পয়েন্ট বেশ কিছুটা বাড়িয়ে নিয়েছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। এ দিনের ঘটনায় তৃণমূল তাঁদের সেই নম্বর ফের তলানিতে এনে ফেলেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে মুখ দেখানোর উপক্রমটুকুও যেন নষ্ট করে ফেলেছেন তাঁরা। দলের সর্বভারতীয় সভাপতির যে ভাবে ‘মুখ পুড়ল’ তাঁদের জন্য, তা একেবারেই মেনে নিতে পারছেন না রাজ্য নেতৃত্ব।


রাজু মাহালির বাড়িতে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।—ফাইল চিত্র।

যদিও প্রকাশ্যে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ জন্য তৃণমূলের ভয় দেখানো রাজনীতিকেই দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অস্বস্তির কী আছে। ওদের বাড়িতে অমিত শাহ গিয়েছিলেন বলে ওদের উপর অত্যাচার হচ্ছে, এটাই তো খুব দুর্ভাগ্যের। তার প্রতিবাদে আমাদের থানা ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। আজ ওখানে প্রতিবাদ মিছিল আছে। আমরা সাংবাদিক সম্মেলন করব কলকাতায়। দিল্লিতেও সাংবাদিক বৈঠক হবে।’’


রাজু মাহালির বাড়িতে কলাপাতায় পাত পেড়ে খাচ্ছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।—ফাইল চিত্র।

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গকেই পাখির চোখ করেছে বিজেপি। আর সেই লক্ষ্যে বঙ্গ সফরে এসে অমিত দলীয় কর্মীদের বুঝিয়ে গিয়েছিলেন, ২০-২২টি আসন জয় সুনিশ্চিত করতেই হবে। ঘনিষ্ঠ মহলে অমিত জানিয়েছিলেন, কুড়ি-বাইশটির মতো আসনে জেতার পণ করেছেন তিনি। আর প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘‘ওই আসনগুলিতে আমরা জিতব। তার জন্য সংগঠন বাড়ানো আমাদের কাজ। দিল্লি থেকে সংগঠনের উপরে কড়া নজর রাখা হবে। একেবারে বুথ স্তরে কে কোথায় যাচ্ছেন, কত দিন থাকছেন, কেউ ফাঁকি মারছেন কি না— সব কিছুর উপর নজরদারি হবে।’’

কিন্তু, সেই নজরদারি কোথায় গেল? কী ভাবে মাহালি পরিবার তৃণমূলে যোগ দিল?

বিজেপি নেতৃত্ব সেই পুরনো অভিযোগেই থেকেছেন, মাহালি দম্পতিকে জোর করেই তৃণমূল তাদের দলে যোগ দিতে বাধ্য করেছে। তৃণমূল যদিও এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেবের কথায়, ‘‘আমরা ওই রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। ওই পরিবারটি বরাবরই আমাদের সমর্থক। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতটিও বিরেধীদের দখলে। কাজেই কোনও উন্নয়নের মুখই দেখেনি মাহালি পরিবার। তাঁদের বেশ কিছু দাবিদাওয়া ছিল। আমরা সেগুলো দেখব বলে জানিয়েছি।’’

এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি সিপিএম-ও। দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিজেপি-র সভাপতিকে যিনি আতিথেয়তা দিয়েছিলেন নকশালবাড়িতে, তাঁদের অপহরণ করে তৃণমূলের মন্ত্রীর অতিথি করে দেওয়া হল। নির্বুদ্ধিতার প্রতিযোগিতা চলছে যেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE