চোখ আটকে টিভির পর্দায়। —নিজস্ব চিত্র
দ্বিতীয় ভল্টে মেয়েটি ঠিক প্রদুনোভা দেবে।
একটু এলোমেলো উচ্চারণে তেমনই বোঝাতে চাইলেন পরেশবাবু।
সেকেন্ড পাঁচেকের অপেক্ষা। তারপর সবুজ ট্র্যাকের উপর দিয়ে দৌড় শুরু করল মেয়েটি। ঠোঁট কামড়ে বসে আছেন ওঁরা। সারা দেশের মতো, শ্রাবণ রাতে এক টুকরো অকাল দীপাবলীর হা-পিত্যেশ অপেক্ষা।
মেয়েটি লাফাল, নিখুঁত প্রদুনোভা, তারপর ঝুপ করে মাটি ছোঁয়ার মুহূর্তে ছুঁয়ে গেল শরীরটা।
পরেশবাবু অত বোঝেন না। স্ত্রীকে বললেন, ‘‘দ্যাখলে, উফ, হেই লাফেই সিওর পদক!’’
কৃষ্ণনগরের কুকুর ডাকা রাতে জেগে থাকা পাড়াটার মতোই রাতভর জেগেছিল দেশ। প্রদুনোভা, আকাশমুখো পয়েন্টের অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকা সবই ঠিকঠাক ছিল। ছিল না শুধু প্রাপ্তিযোগ।
ঘণ্টাখানেক পরে লুঙ্গির খুঁটে চোখের কোণ মুছে পরেশবাবু বলছেন, ‘‘দীপারই পদকটা প্রাপ্য ছিল। জোর করেই ওরে হারায়ে দিল। দ্যাখবেন, হেই সত্যটা সামনে আসবই।’’
পরেশ চৌধুরী সম্পর্কে দীপার দাদু। শনিবার থেকে ধুম জ্বর। রবিবার রাতে তিনি বসে গিয়েছিলেন টিভির সামনে। কিন্তু এমন ঘটনা তিনি কিছুতেই মানতে পারছে না। কৃষ্ণনগরের স্টেশন সংলগ্ল সীমান্তপল্লিতে বাড়ি পরেশবাবুর। অজান্তে যেন সুদূর ত্রিপুরার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে কৃষ্ণনগর।
পরেশবাবুদের আদি বাড়ি বাংলাদেশের কুমিল্লায়। দেশভাগের পরে তাঁরা চলে আসেন এপারে। দীপার বাবা মা থাকতেন ত্রিপুরায়। দূরত্বের কারণে নিয়মিত দেখা না হলেও ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ আছে তাঁদের। বছর তিনেক আগেও দীপার মা ও দিদি-জামাইবাবু ঘুরে গিয়েছেন কৃষ্ণনগর। পরেশবাবুরাও বেশ কয়েকবার ঘুরে এসেছেন ত্রিপুরা। থেকে এসেছেন দীপাদের আগরতলার উদয়পুরের বাড়িতে।
এ দিন দীপার মা গৌরীদেবীর সঙ্গেও কথা হয়েছে পরেশবাবুর। গৌরীদেবী বলেছেন,“দীপা হয়ত সোনা বা রুপোর পদক জেতেনি। কিন্তু গোটা দেশের মানুষের আশীর্বাদ আর ভালবাসা পেয়েছে। জিতেছে লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়। এটাই বা কম কী!’’
হাল ছাড়তে নারাজ পরেশবাবু। তিনি বলছেন, ‘‘আমার নাতনিকে যতটা জানি এই হার ও সহজে মেনে নেবে না। নিজেকে আরও কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে তৈরি করবে পরের অলিম্পিকের জন্য।’’
কৃষ্ণনগরের স্টেশন সংলগ্ন ওই বাড়িটাই নয়, সারা দেশ দীপাকে এখন সে ভাবেই চিনেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy