Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বন্যায় বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ, জলবন্দি বহু, শুরু ভাঙনও

তবে ত্রাণের অভাবে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। বুধবার দুপুরে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে বিডিও অফিসে ভাঙচুর করা হয়। বিহারের কিসানগঞ্জ এলাকার ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কেও ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ চলছিল।

উদ্ধারে: দু’দিন গৃহবন্দি থাকার পরে বাসিন্দাদের বার করে আনল সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বুধবার দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জে। ছবি: অমিত মোহান্ত

উদ্ধারে: দু’দিন গৃহবন্দি থাকার পরে বাসিন্দাদের বার করে আনল সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বুধবার দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জে। ছবি: অমিত মোহান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৩৪
Share: Save:

উত্তরবঙ্গ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বাঁধে ফাটল ধরেছে। বহু এলাকায় নদীর জল এখনও জাতীয় সড়ক, রেললাইনের উপর দিয়ে বইছে। অনেক জায়গায় মানুষ জলবন্দি। যেখানে জল কমছে, সেখানেও স্বস্তি নেই। তোর্সা, মহানন্দা, ফুলহার, টাঙনের ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে কৃষি জমি থেকে বসত বাড়ি।

বুধবার কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বন্যায় উত্তরবঙ্গে এ পর্যন্ত ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গেও বন্যায় মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, রাজ্যের অবস্থা নৌকার মতো। নেপাল, ভুটান জল ছাড়লেই জলে ভেসে যাচ্ছে। জল নেমে গেলে কোথায় কতটা ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণ করা যাবে। অনেক জায়গায় রাস্তা, সেতু ভেঙে গিয়েছে। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার রাতেই দক্ষিণ দিনাজপুরে চলে যান। কিন্তু তৃণমূল সূত্রেই খবর, বানভাসি মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করেন দলেরই কিছু নেতা। তাই এ দিন সকালেই তাঁকে গঙ্গারামপুরে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। পথে তিনি বালুরঘাটের বন্যা দুর্গতদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। তৃণমূল নেতাদের অবশ্য দাবি, যেখানে যেখানে দরকার, সে সব জায়গাতেই গিয়েছেন মন্ত্রী। এ দিন রাতে রাজীববাবু জেলা প্রশাসনকে বালুরঘাটের আরএসপি বিধায়ক বিশ্বনাথ চৌধুরীর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে বলেন।

সরেজমিন: নৌকায় বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের সুকদেবপুর, তপনের আমতলি সেতু এলাকা-সহ অন্যত্রও যান তিনি। নিজস্ব চিত্র।

তবে ত্রাণের অভাবে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। বুধবার দুপুরে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে বিডিও অফিসে ভাঙচুর করা হয়। বিহারের কিসানগঞ্জ এলাকার ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কেও ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ চলছিল। তখন শিলিগুড়ি থেকে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জগামী একটি বেসরকারি বাসের কাচ ভাঙচুর হয়। দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি ব্লকের বানভাসি মানুষ বিডিও অফিস চত্বর থেকে খাদ্যসামগ্রী লুঠ করে নিয়ে যান বলে অভিযোগ।

অসহায়: বালুরঘাটের পাগলিগঞ্জের আতিইরে ত্রাণ শিবির। ছবি: অমিত মোহান্ত

রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, উত্তরবঙ্গের ছ’টি জেলা প্লাবিত। ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। প্রায় পনেরো লক্ষ মানুষ প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত। মোট ৬২২টি ত্রাণ শিবির সরকার থেকে খোলা হয়েছিল। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় অনেক ত্রাণ শিবির বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: বাগডোগরা বিমানের টিকিট ছুঁল ২৫ হাজার

এ দিন একটি অনুষ্ঠানে রাজ্য পুলিশের সদর দফতর ভবানী ভবনে গিয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার ও ত্রাণের কাজ সুষ্ঠ ভাবে দেখভাল করার জন্য তিনি সেখানে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। পরে নবান্ন থেকে রাজ্য পুলিশের এডিজি (ট্রাফিক) বিবেক সহায়কে মালদহে যেতে বলা হয়। পাশাপাশি ডিআইজি (ট্রাফিক) দেবাশিস বড়ালকে রায়গঞ্জে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাঁধে বিপত্তি

দক্ষিণ দিনাজপুর

• আত্রেয়ীতে ছ’টি জায়গায় ফাটল। বালুরঘাট শহরে দু’টি ও গ্রামীণ এলাকায় চারটি।

• গঙ্গারামপুরের ফুলতলায় পুনর্ভবার বাঁধ ভেঙে পড়ার অভিযোগ। বেলবাড়িতে ফাটল।

উত্তর দিনাজপুর

• কুলিক নদীর বাঁধ ভেঙেছে এলিঞ্জিয়া ও বিশাহারে।

মালদহ

• চাঁচলের মহানন্দপুরে একাধিক জায়গায় মহানন্দার বাঁধে ফাটল

বিহার

• আজিমনগরে ভেঙেছে ফুলহার নদীর বাঁধ

জল নামার পরে কোচবিহার, মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুরে শুরু হয়েছে ভাঙন। কোচবিহারের জারিধরলা, গীতালদহ, হরিদাসখামার, মরাকুঠি এলাকায় বানিয়াদহ, ধরলা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরে পুনর্ভবা এবং টাঙনের ভাঙনে গঙ্গারামপুর এবং বংশীহারিতেই কয়েকশো বিঘা কৃষিজমি তলিয়ে গিয়েছে বলে দাবি। মালদহের চাঁচলেও মহানন্দার বাঁধ ভেঙেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE