একসময়ের শাসকদলের ‘আস্থাভাজন’ ভারতী ঘোষকে দিন তিনেক আগেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপারের পদ থেকে বদলি করা হয়েছে। নতুন পুলিশ সুপার হিসেবে বুধবারই দায়িত্ব নিয়েছেন অলোক রাজোরিয়া। তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার দিনই মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করা হল গড়বেতা থানার ওসি হীরক বিশ্বাসকে। ভারতী ঘোষের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবেই হীরক বিশ্বাস পরিচিত ছিলেন বলে পুলিশের এক সূত্রে খবর। এই ঘটনায় ভারতীদেবীর ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত আরও কয়েকজন ওসি-র বদলির সম্ভাবনা নিয়েও জল্পনা ঘুরছে পুলিশ মহলে।
গড়বেতার নতুন ওসি হয়েছেন প্রশান্ত পাঠক। জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশ মতো বৃহস্পতিবার সকালে গড়বেতা থানার ওসি-র দায়িত্ব নিয়েছেন প্রশান্তবাবু। তিনি মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় কর্মরত ছিলেন। হীরকবাবুর বদলির কারণ জানতে জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস-রও জবাব দেননি।
জেলা পুলিশের এক সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, গত সোমবার ভারতীদেবীর বদলির নির্দেশ জারি হওয়ার পর মঙ্গলবার রাতেই জেলা ছাড়েন তিনি। মঙ্গলবার বিকেলে মেদিনীপুরে এসে একাধিক ওসি ভারতীদেবীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে বরাবর ভারতীদেবীর ‘গুড বুক’-এ থাকা হীরক বিশ্বাসও ছিলেন। হীরকবাবু আগেও দীর্ঘদিন গড়বেতা থানার ওসি ছিলেন। পরে ডেবরা থানার ওসি হন। ডেবরা থেকে ফের গড়বেতায় ফিরে যান তিনি।
জেলা পুলিশের এক সূত্রের বক্তব্য, পূর্বতন পুলিশ সুপারের ‘স্নেহধন্য’ ছিলেন বলেই বরাবরই ‘ভাল’ পোস্টিং পেতেন তিনি। পুলিশের এক সূত্রে দাবি, গড়বেতার নতুন ওসি প্রশান্তবাবু অবশ্য ভারতীদেবীর ‘গুড বুকে’ ছিলেন না। এক সময় আনন্দপুর, সবংয়ের ওসি-র দায়িত্ব সামলেছেন প্রশান্তবাবু। পরে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় তাঁর বদলি হয়েছিল।
ভারতী ঘোষ পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৩ সালের অগস্টে। এর আগে তিনি ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন। সবমিলিয়ে প্রায় ছ’বছর থেকেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে। এই সময়ে পুলিশ সুপার হিসেবে বারংবার ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তোলাবাজি, হুমকির মতো অভিযোগ তুলে সরবও হয়েছেন বিরোধীরা। সরকারিমঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘জঙ্গলমহলের মা’ বলেও সম্বোধন করেছেন তিনি। যে সম্বোধন নিয়ে রাজ্য জুড়ে হইচই হয়। বিরোধীরা অভিযোগ করতেন, বকলমে পশ্চিম মেদিনীপুরে শাসক দল পরিচালনা করেন ভারতীদেবীই।
আরও খবর: তিন তালাক: লোকসভায় চুপ তৃণমূল, কারণ কি সংখ্যালঘু ভোট?
বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের অভিযোগ, “ভারতী ঘোষ জেলায় থাকাকালীন ভয়ভীতির পরিবেশ ছিল। অনেকে আতঙ্কে থাকতেন। পুলিশের অন্যায় কাজকর্মের প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হত। আশা করব, পুলিশ এ বার নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করবে।” ওসি-র অপসারণ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি গড়বেতার বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি আশিস চক্রবর্তী। আশিসবাবু বলেন, “শুনেছি গড়বেতার ওসিকে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। এটা পুলিশের ব্যাপার। আমি কী বলব। পুলিশে তো বদলি হয়ই।” ওসি বদলির কোনও প্রভাব কি গড়বেতায় পড়তে পারে? আশিসবাবুর জবাব, “মনে হয় না কোনও সমস্যা হবে বলে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy