Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জোট-হাওয়ায় নিশানা তৃণমূলের নীরবতাও

উপলক্ষ ছিল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা ঘিরে সরকারি নিপীড়নের প্রতিবাদ। সেই প্রতিবাদকে হাতিয়ার করেই সোমবার শহরের পথে একসঙ্গে পা মেলালেন বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস নেতারা। মিছিলে হেঁটে এক সুরেই দুই বিরোধী দল প্রশ্ন তুলল, দেশ জু়ড়ে এমন ঝড় উঠে গেলেও এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল জেএনইউ-কাণ্ডে চুপ কেন?

জেএনইউ-কাণ্ডের প্রতিবাদ মিছিলে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস নেতারা। রয়েছেন মঞ্জুকুমার মজুমদার (বাঁ দিক থেকে), নরেন চট্টোপাধ্যায়, সুজন চক্রবর্তী, ওমপ্রকাশ মিশ্র, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদীপ ভট্টাচার্য ও সোমেন মিত্র। সোমবার কলেজ স্কোয়ারে।— নিজস্ব চিত্র

জেএনইউ-কাণ্ডের প্রতিবাদ মিছিলে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস নেতারা। রয়েছেন মঞ্জুকুমার মজুমদার (বাঁ দিক থেকে), নরেন চট্টোপাধ্যায়, সুজন চক্রবর্তী, ওমপ্রকাশ মিশ্র, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদীপ ভট্টাচার্য ও সোমেন মিত্র। সোমবার কলেজ স্কোয়ারে।— নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:১৬
Share: Save:

উপলক্ষ ছিল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা ঘিরে সরকারি নিপীড়নের প্রতিবাদ। সেই প্রতিবাদকে হাতিয়ার করেই সোমবার শহরের পথে একসঙ্গে পা মেলালেন বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস নেতারা। মিছিলে হেঁটে এক সুরেই দুই বিরোধী দল প্রশ্ন তুলল, দেশ জু়ড়ে এমন ঝড় উঠে গেলেও এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল জেএনইউ-কাণ্ডে চুপ কেন? বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের মোকাবিলায় বাম-কংগ্রেসের জোট নিয়ে তৎপরতা যখন তুঙ্গে, সেই সময়ে এমন ‘দল ও ঝান্ডাহীন প্রতিবাদ’ জল্পনা আরও উস্কে দিল!

কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলে এ দিন পাশাপাশি হেঁটেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের দুই প্রাক্তন সভাপতি সোমেন মিত্র ও প্রদীপ ভট্টাচার্য, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী, সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, সিপিআইয়ের বর্ষীয়ান নেতা মঞ্জুকুমার মজুমদার, ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। বিশিষ্ট মুখ হিসাবে মিছিলে দেখা গিয়েছে নাট্য-ব্যক্তিত্ব কৌশিক সেনকে। তাঁরা ছাড়াও ছিলেন কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান, মায়া ঘোষ, অরুণাভ ঘোষ, ওমপ্রকাশ মিশ্র, মনোজ পাণ্ডে বা সিপিআইয়ের প্রবীর দেবেরা। এর আগে সারদা-কাণ্ডের প্রতিবাদেও আমানতকারীদের নিয়ে মিছিলে বাম-কংগ্রেস নেতারা একসঙ্গে মিছিল করেছেন। কিন্তু জোটের আবহেই এই মিছিল ঘিরে বাড়তি উদ্দীপনা ছিল।

এক দিকে জোট-জল্পনা উস্কে দেওয়ার পাশাপাশি সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা সুকৌশলে জেএনইউ-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে বিজেপি-তৃণমূলকে এক বন্ধনীতে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার পরে ওই শহরে তড়িঘড়ি পাঠানো হয়েছিল তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকে। জেএনইউ-কাণ্ডের পরে এ রাজ্যের শাসক দল কিন্তু এখনও একেবারেই নীরব। বাম ও কংগ্রেস নেতাদের প্রশ্ন, সরোজিনী নায়ড়ু থেকে জগজিৎ সিংহের জন্মতিথি, অভিষেক বচ্চনের জন্মদিন থেকে মায়ানমারে আউং সান সুচির জয়— ধরাধামে যে কোনও বিষয়ে টুইট করতে যে তৃণমূল নেত্রী এগিয়ে আসেন, তিনি জেএনইউ নিয়ে এমন তোলপাড়ের পরেও মৌনী কেন? রাহুল গাঁধী এবং সীতারাম ইয়েচুরি ময়দানে নেমে প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছেন দেখেই কি তৃণমূল নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে?

মিছিলের ফাঁকেই কংগ্রেস নেতা মান্নান বলেছেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, রাজ্য সরকার জেএনইউ প্রসঙ্গে প্রতিবাদ করবে। আমরা তাতে গিয়ে যোগ দেব। কিন্তু সরকার তো একটি বাক্যও খরচ করল না! আসলে বিজেপি আর তৃণমূল তো চোরে চোরে মাসতুতো ভাই!’’ তাঁর দলেরই ওমপ্রকাশ বলেন, ‘‘জেএনইউ-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী অভূতপূর্ব মৌনাবলম্বন করেছেন! তিনি তলে তলে ফের বিজেপিতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন!’’ আবার কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুলের সুরেই সিপিএম সাংসদ ঋতব্রতের বক্তব্য, ‘‘গাঁধীজিকে যারা খুন করেছে, তাদের কাছ থেকে দেশপ্রেমের শংসাপত্র আমাদের চাই না! দিল্লিতে মোদিভাই আর রাজ্যে দিদিভাই অঘোষিত জরুরি অবস্থা নামিয়ে এনেছেন! তার বিরুদ্ধেই সকলে পথে নেমেছি।’’

তবে দু’দলের নেতারাই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এই প্রতিবাদের সঙ্গে জোটের কোনও সম্পর্ক নেই। নাট্যকর্মী কৌশিকও বলেছেন, ‘‘আমি এই মিছিলে বাম বা কংগ্রেসকে সমর্থন করার জন্য আসিনি। একটি রাজনৈতিক দল ও ভুল মতাদর্শের এক সংগঠন এক হয়ে কাজ করলে ভারতের পক্ষে তা মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। তার বিরোধিতাতেই এসেছি।’’ সিপিআইয়ের ছাত্র ও যুব সংগঠন এআইএসএফ এবং এআইওয়াইএফ এ দিন পৃথক মিছিলও করেছে। জেএনইউয়ের প্রতি সহমর্মিতায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করেছে এসএফআই-আইসা। আর এই যাবতীয় প্রতিবাদকে কটাক্ষ করে বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য মন্তব্য করেছেন, ‘‘যাঁরা মনে করছেন আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া ভুল হয়েছিল, তাঁরা ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে সে কথা বলুন! বাক্-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে দেশবিরোধী কার্যকলাপ সমর্থন করা যায় না।’’

বাম-কংগ্রেস জোটের দেওয়াল লিখন যখন পরিষ্কার হয়ে উঠছে, সেই সময়েই দিল্লিতে এ দিন সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে একা কুম্ভের মতো জোটের বিরুদ্ধে সওয়াল করেছেন আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ (মিঠু) রায়! পরে তিনি বলেন, ‘‘সভানেত্রীকে জানিয়েছি, সিপিএমের সঙ্গে জোট করলে না মতাদর্শের দিক থেকে ঠিক হবে, না যুক্তির দিক থেকে! ভুলে গেলে চলবে না এই সিপিএমই ইন্দিরা গাঁধীকে ডাইনি বলেছিল। রাজীব গাঁধীর বিরুদ্ধে বফর্সের কালি ছিটিয়েছিল!’’ মিঠুবাবুর যে মন্তব্যে তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমদের গত দু’দিনের বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই শুনতে পাচ্ছেন অনেকে! কিন্তু এর পরেও যদি কংগ্রেস-বাম জোট হয়, তখন কী করবেন? তাঁর জবাব, ‘‘সহমরণে যাব নাকি আদর্শ আঁকড়ে থেকে অন্য ভাবে বাঁচার চেষ্টা করব, ভেবে দেখতে হবে!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, ‘‘মিঠুদা বর্ষীয়ান নেতা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তিনি কথা বলতেই পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

opposition JNU
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE