Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

চাপে ঢিলে হবে না সারদা তদন্ত, নির্দেশ মোদীর

সারদা মামলা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক চাপ যতই আসুক, সিবিআই তদন্তকে কোনও ভাবেই লঘু করা হবে না বলে, বুঝিয়ে দিল কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাপান যাওয়ার আগে এই মর্মে নির্দেশও দিয়ে গিয়েছেন সিবিআই প্রধান রঞ্জিত সিন্হাকে। শুধু সিবিআই কর্তৃপক্ষ নয়, স্বরাষ্ট্র-অর্থ-আইন-সহ বিভিন্ন মন্ত্রককে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় নির্দেশ দিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যখন তদন্ত চলছে, তখন কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যেন তাতে নাক না গলান। প্রধানমন্ত্রীর আরও নির্দেশ, কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যেন সিবিআই প্রধানের সঙ্গে দেখাও না করেন।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৯
Share: Save:

সারদা মামলা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক চাপ যতই আসুক, সিবিআই তদন্তকে কোনও ভাবেই লঘু করা হবে না বলে, বুঝিয়ে দিল কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাপান যাওয়ার আগে এই মর্মে নির্দেশও দিয়ে গিয়েছেন সিবিআই প্রধান রঞ্জিত সিন্হাকে। শুধু সিবিআই কর্তৃপক্ষ নয়, স্বরাষ্ট্র-অর্থ-আইন-সহ বিভিন্ন মন্ত্রককে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় নির্দেশ দিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যখন তদন্ত চলছে, তখন কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যেন তাতে নাক না গলান। প্রধানমন্ত্রীর আরও নির্দেশ, কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যেন সিবিআই প্রধানের সঙ্গে দেখাও না করেন।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত করেছে সিবিআই। রাজ্য সরকার আগাগোড়াই এই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত করানোর বিরোধিতা করেছিল। রাজ্য পুলিশই এই তদন্ত করার জন্য যথেষ্ট বলে তারা কেন্দ্রকে মতামত দিয়েছিল। এমনকী, সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘ আইনি লড়াইও চালায় রাজ্য। সারদা-মামলা সিবিআই হাতে নেওয়ার পরে তদন্ত যত এগিয়েছে, হাত বাড়িয়েছে প্রভাবশালীদের দিকে, ততই তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, এমনকী রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র শাসক শিবিরের একের পর এক শীর্ষ নেতা সাম্প্রতিক সময়ে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন। সারদা তদন্তকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলতেও ছাড়েননি তাঁরা। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে তৃণমূল আগামী দিনে আরও আক্রমণাত্মক হতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “সিবিআই স্বাধীন সংস্থা। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকলেও অতীতে কংগ্রেস যা করেছে তার পুনরাবৃত্তি আমাদের সরকার কখনওই করবে না।”

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে টুজি, কমনওয়েলথ, কয়লার মতো একাধিক কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে সুপ্রিম কোর্ট। এ সব ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রক হল, সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী প্রধান দফতর। এই সব তদন্তের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়ে আইন মন্ত্রক তাদের মতামত জানায়। এ কথা মাথায় রেখেই মোদী জাপানে যাওয়ার আগে রবিশঙ্কর তাঁর সঙ্গে দেখা করে পথনির্দেশিকা চান। সে সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেন, আইন মন্ত্রকের আমলারা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে যে রুটিন পদ্ধতিতে যোগাযোগ রাখেন, সেটাই যথেষ্ট। তার বেশি কিছু করার দরকার নেই। সিবিআই প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে নিষেধ করার পাশাপাশি মন্ত্রীদের উদ্দেশে মোদীর বার্তা, “আমরা কোনও তদন্তের উপর চাপ সৃষ্টি করে তাড়াহুড়ো করতে চাইছি না। তদন্ত ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও করছি না।”

প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্র বলছে, সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যত এক ধরনের শুদ্ধকরণ অভিযান শুরু হয়েছে। ইউপিএ জমানায় বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে সিবিআই প্রধানের সাক্ষাৎ ঘিরে বিতর্ক হয়েছে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেছেন মোদী। তা ছাড়া তিনি লোকসভা নির্বাচনের আগে দুর্নীতিমুক্ত ভারত গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন যদি কোনও ভাবে বার্তা যায়, কেন্দ্র সারদা তদন্ত লঘু করার চেষ্টা করছে, তা হলে তাঁর তিন মাসের সরকারের লোকসান হবে অনেক বেশি। সুপ্রিম কোর্ট যদি সরকারের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে কোনও মন্তব্য করে, তা হলে মোদী সরকারের গায়েও কাদার ছিটে লাগবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক আমলা বলেন, “দেখছেন তো ভারতের সব থেকে নামজাদা শিল্পপতিকেও প্রধানমন্ত্রী রেয়াত করছেন না। এমনকী শিল্পপতি আদানির বিরুদ্ধেও সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিকা কিন্তু একই। তিনি সরকারের ভাবমূর্তির জন্য কোনও ব্যক্তিগত সম্পর্ককে রেয়াত করতে রাজি নন।”

শাহি দিল্লিতে মন্ত্রিসভায় দুর্নীতির প্রশ্নে সবাই আতঙ্কিত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের ছেলে থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রকের উপর নজরদারি নিয়ে প্রচার চলছে। এ অবস্থায় সারদা নিয়ে সরকারের পিছু হটার প্রশ্ন নেই বলে জানাচ্ছেন সিবিআই কর্তারাও।

রঞ্জিত সিন্হা অবসর নিচ্ছেন নভেম্বর মাসে। ১ ডিসেম্বর নতুন সিবিআই-প্রধান, গোয়েন্দা প্রধান ও স্বরাষ্ট্রসচিব নিযুক্ত হবেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ সচিব তথা ওড়িশা ক্যাডারের আমলা পি কে মিশ্রকে সিবিআই প্রধানের পদে বসানোর কথা চলছে। অবসরের আগেই রঞ্জিৎ সিন্হা সারদা কেলেঙ্কারির একটি রিপোর্ট আদালতকে জমা দিতে পারেন। অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত দেখার জন্য গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর প্রধান হলেন সিবিআইয়ের যুগ্ম-অধিকর্তা রাজীব কুমার সিংহ। এ ছাড়া সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা অনিল সিংহ সারদা তদন্ত দেখার জন্য বিশেষ ভাবে ভারপ্রাপ্ত। এই অফিসারেরা সিবিআই প্রধানকে জানিয়েছেন, বামফ্রন্ট জমানায় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির শুরু হলেও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। পরবর্তী কালে অসীম দাশগুপ্ত এই সব সংস্থার বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করেন। তিনি ওভারল্যান্ডের মতো সংস্থা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সিবিআই কর্তারা বলছেন, অর্থলগ্নি সংস্থার রমরমা সবথেকে বেশি হয়েছে গত তিন বছরে। তার জন্য রাজ্য সরকারের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প মার খেয়েছে। রাজ্য অবশ্য জানিয়েছে, এর পিছনে আর্থ-সামাজিক কারণ রয়েছে। সিবিআই সূত্র বলছে, বিষয়টি ভাল ভাবে জানার জন্য তারা রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

সিবিআই নিশ্চিত, তদন্ত যে ভাবে এগোচ্ছে এবং বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে যে সব বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে, তাতে সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত রাঘববোয়ালদের ধরা এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE