ওয়েবকুপার সম্মেলনে কৃষ্ণকলি বসু। - নিজস্ব চিত্র
টোকাটুকির ঘটনায় যে সব অধ্যক্ষ পদত্যাগ করছেন, তাঁরা বাড়াবাড়ি করছেন। রবিবার কৃষ্ণনগরের উইমেন্স কলেজে সংগঠনের জেলা সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনটাই বললেন তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ‘ওয়েবকুপার’ রাজ্য সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসু। শুধু তাই নয়, এ দিন তিনি তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বেরও সমালোচনা করেছেন।
কৃষ্ণকলিদেবী বলেন, “টোকাটুকিতে যে অধ্যক্ষেরা পদত্যাগ করছেন, তাঁরা বাড়াবাড়ি করছেন। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী ও মুকুল রায় সাধাসাধি করছেন। যেন বাম আমলে কোনওদিন টোকাটুকি দেখেননি। তখন তাঁরা কত বার পদত্যাগ করেছেন? বিমান বসু তাঁদের কত বার সাধাসাধি করেছেন?” তাঁর বক্তব্য নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, টিএমসিপি-র সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা ও ওয়েবকুপার কৃষ্ণকলিদেবীর ডানা ছাঁটার তৎপরতা শুরু হয়েছে।
শিক্ষা মহলের একাংশ মনে করছে, কৃষ্ণকলিদেবীর এ দিনের মন্তব্য টোকাটুকিতে যুক্ত ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিতই করবে। শুধু তাই নয়, তিনি কার্যত চাপড়া বাঙালঝি কলেজের সেই সব টিএমসিপি নেতার পাশে দাঁড়ালেন, যাঁরা নকল করতে দেওয়ার দাবিতে অধ্যক্ষকে গালিগালাজ করেছিলেন ও দীর্ঘ সময় গেটে তালা ঝুলিয়ে অধ্যক্ষকে আটকে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ।
ওয়েবকুপার সভানেত্রী জানান, তিনিও টোকাটুকি সমর্থন করেন না। তিনি বলেন, “কিন্তু এখন এমন ভাবে এই অধ্যক্ষরা অভিযোগ করছেন, যেন পশ্চিমবঙ্গে টোকাটুকি কোনও দিন ছিল না। যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলেই আমদানি হয়েছে।” তাঁর দাবি, টোকাটুকির ঘটনা নিয়ে যে অধ্যক্ষরা পদত্যাগ করছেন, তাঁরা যখন তখন পদত্যাগ জমা দিয়ে খবরের শিরোনামে চলে আসছেন। আর অভিযোগ উঠছে তৃণমূল এবং তার ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে। কৃষ্ণকলিদেবীর এই বক্তব্যের সময় উপস্থিত ছিলেন উইমেন্স কলেজের ছাত্র সংসদের নেত্রীরাও। তাঁরা কি কোনও ভাবে কৃষ্ণকলিদেবীর বক্তব্যে উৎসাহিত হলেন? টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক পায়েল হালদার শুধু বলেন, “কৃষ্ণকলিদেবীর বক্তব্যের তো একটা গুরুত্ব আছেই।”
সম্প্রতি মেদিনীপুরের কৈবল্যদায়িনী মহাবিদ্যালয়, ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া বিবেকানন্দ কলেজ-সহ বেশ কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষ এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন। আর সব ক’টি ক্ষেত্রে অভিযোগ টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। রবিবার কৃষ্ণকলিদেবীর মন্তব্যে এই সব অধ্যক্ষরা কোনও কথা না বললেও শিক্ষা মহলের একাংশের দাবি, এমনটা চলতে থাকলে আগামী দিনেও যাঁরা অধ্যক্ষ কিংবা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়ে আসবেন, তাঁরাও ইস্তফা দেবেন।
কৃষ্ণকলিদেবীর মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন (ওয়েবকুটার) রাজ্য সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজও। তিনি বলেন, “উনি ঠিক কী বলেছেন, আমি জানি না। তবে এ ধরনের মন্তব্যে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের যে সব ছেলেমেয়েরা চাইছেন পরীক্ষায় কোনও ধরনের পরিদর্শক থাকার দরকার নেই, তাঁরা আস্কারা পাবেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
তিনি আরও জানান, পরীক্ষা ব্যবস্থা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার দায়িত্ব শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অধ্যক্ষদের। নিজে একটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কৃষ্ণকলিদেবীরও সেই দায় রয়েছে। তিনি তা এড়াতে পারেন না। বরং শাসক দলের তৈরি সংগঠনের সভাপতি হিসাবে তাঁর উচিত আক্রান্ত অধ্যক্ষ এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অভিজ্ঞতা জানা।
তবে এ দিনের সম্মেলনকে ঘিরে ওয়েবকুপার গোষ্ঠীকোন্দলও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এ দিন সম্মেলনে সংগঠনের রাজ্য ও জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের অনেকেই অনুপস্থিত ছিলেন। এমনই এক জন সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য ও বেথুয়াডহরি কলেজের টিচার ইন-চার্জ অলোক রায় জানান, সম্মেলন হচ্ছে বলে জানেনই না। একই দাবি সংগঠনের জেলা কমিটির সহ সম্পাদক তথা কল্যাণী কলেজের অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দু’জনেরই দাবি, সভাপতি তাঁদের কিছু জানাননি। তাঁদের অভিযোগ, “সভাপতি একাই সব। বাকি কারও কোনও গুরুত্ব নেই।”
যদিও ওয়েবকুপার জেলা সভাপতি মনোজিৎ রায় বলেন, ‘‘আমি সবাইকেই জানিয়েছি। ওই দু’জন কেন এলেন না, বলতে পারব না।” আর কৃষ্ণকলিদেবীর বক্তব্য, “আমাদের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই। সম্ভবত রবিবার ছুটির দিন বলেই ওঁরা আসেননি। তবে বিষয়টি রাজ্য কমিটির বৈঠকে আলোচনা করব।”
এ দিন ওয়েবকুটার নদিয়া জেলা সভাপতি বৈজয়ন্তী ঘোষ-সহ চার জন সদস্য ওয়েবকুপায় যোগ দেন। এ দিন সম্মেলনে ছিলেন মোট ১২০ জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy