Advertisement
০২ মে ২০২৪

ঝাপসা কাচে লেখা ‘ইমার্জেন্সি এক্সিট’, ও পারে নিথর শাঁখা-পলা

তখনও ক্রেনের তারে কাত হয়ে ঝুলছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাসটি। প্রায় ৯০ শতাংশ জলের উপরে। সামনের চাকাটি দেখে বোঝা যায়, জলের নীচে সে দু’টি কাদায় গেঁথে ছিল।

চলছে উদ্ধার কাজ। বাস থেকে বের করে আনা হচ্ছে একের পর এক দেহ। সোমবার।— নিজস্ব চিত্র।

চলছে উদ্ধার কাজ। বাস থেকে বের করে আনা হচ্ছে একের পর এক দেহ। সোমবার।— নিজস্ব চিত্র।

শুভাশিস সৈয়দ
দৌলতাবাদ শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ১৯:২৪
Share: Save:

ঝাপসা কাচের ও পারে একটা হাত। নিথর সেই হাতে শাঁখা-পলাটা দূর থেকেও স্পষ্ট। কাচের উপরে ইংরেজিতে লেখা ‘ইমার্জেন্সি এক্সিট’। অথচ সকাল সওয়া ৭টা নাগাদ বিলের জলে পড়ে যাওয়ার পর, বাসের পিছন দিককার ওই আপৎকালীন জানলা দিয়ে এক জনও বেরিয়ে আসতে পারেননি।

প্রায় ১০ ঘণ্টা পর, সোমবার বিকেল সওয়া ৫টা নাগাদ বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা ওই জানলা ভেঙেই বের করে আনলেন একের পর এক দেহ। বার করে আনা হল ওই মহিলার দেহও। তার কিছু ক্ষণ আগে বাসের কাঠামোর কিছু অংশ ভেসে উঠেছে। তখনও ক্রেনের তারে কাত হয়ে ঝুলছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাসটি। প্রায় ৯০ শতাংশ জলের উপরে। সামনের চাকাটি দেখে বোঝা যায়, জলের নীচে সে দু’টি কাদায় গেঁথে ছিল।

সামনের দিকের জানলা এবং গেটের অংশ দিয়েই পড়ন্ত বিকালে প্রথমে বাসের ভিতরে ঢোকেন বিপর্যয় বাহিনীর সদস্যরা। সামনের একটি জানলা দিয়ে বার করে আনা হয় নেভি ব্লু জ্যাকেট, কালো রঙের প্যান্ট পরা এক যুবকের ফুলে ওঠা দেহ। এর পরেই পিছনের ইমার্জেন্সি জানলা ভেঙে ফেলা হয়। সেখান দিয়েও বাসের ভিতরে ঢুকে পড়েন বাহিনীর সদস্যেরা। বের করা হয় একের পর যাত্রীর দেহ। এই ভাবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মোট ৩২ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে দু’জন শিশু-সহ বেশ কয়েক জন মহিলার দেহ রয়েছে। সকালে উদ্ধার হওয়া চার জনকে ধরে এ দিনের বাস দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তত ক্ষণে অন্ধকার নেমে এসেছে। বালিরঘাট সেতুর চার পাশে হাজার হাজার মানুষ। পাড় থেকে আলো জ্বালিয়ে চলছে উদ্ধারকাজ। উদ্ধারকর্মীরা জানিয়ে দেন, বাসের ভিতর আর কারও দেহ আটকে নেই। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাকি নিখোঁজ যাত্রীদের দেহ জলে ভেসে গিয়ে থাকতে পারে। অথবা গেঁথেও থাকতে পারে নীচের কাদায়। রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ছাড়াও ডুবুরিরা এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চালিয়েছেন।

আরও পড়ুন: ১০ ঘণ্টা পর দেহ বোঝাই বাস উঠল বিল থেকে, মৃত অন্তত ৩৬

উদ্ধার হওয়া দেহগুলি অ্যাম্বুল্যান্সে করে পাঠানো হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে তত ক্ষণে পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবুদের অনুরোধ করেছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ময়নাতদন্ত সেরে মৃতদেহ পরিবারকে হস্তান্তর করতে। তাঁরা কথা দিয়েছেন, সারা রাত থেকে যত দ্রুত সম্ভব ময়নাতদন্ত করে মৃতদেহ হস্তান্তর করবেন।’’ এ ছাড়া হাসপাতাল চত্বরে গোটা পরিস্থিতি তদারক করতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি অনুরোধ করেন, ‘‘হাসপাতালে অন্য রোগীরাও আছেন। হাসপাতাল চত্বর খালি রাখুন। মৃতদেহ শনাক্ত করতে যাঁরা আসবেন, তাঁদেরও তো জায়গা দিতে হবে।’’

আরও পড়ুন: বেঁচে আছি! এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না

করিমপুর থেকে মালদহ যাওয়ার পথে সোমবার সকালে বাসটি দৌলতাবাদের কাছে বালিরঘাট সেতুর উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জলে পড়ে যায়। তার পর থেকে কোনও হদিশই পাওয়া যাচ্ছিল না জনা ষাটেক যাত্রীর। বিলের ওই অংশের গভীরতা প্রায় ৭০ ফুট। অনেকটা দেরি করেই শুরু হয়েছিল উদ্ধারকাজ। দুপুরের পরে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী আসে। ক্রেন দিয়ে বাস তোলার পাশাপাশি সার্চা লাইট জ্বালিয়ে ডুবুরি নামিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bus Accident Murshidabad Video
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE