মৃত কার্তিকের স্ত্রী ঝুমা বাগকে সান্ত্বনা সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের। ছবি: মোহন দাস
ছিলেন আটপৌরে গৃহবধূ। এক বছর আগে হন পঞ্চায়েত সদস্যা। অভিযোগ, তার পরেই শুরু হয় তৃণমূলের স্থানীয় নেত্রী ঝর্না সিংহের তোলাবাজি। অথচ, বারবার এলাকার তৃণমূল নেতাদের সে কথা জানিয়েও লাভ হয়নি। আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারকে সোমবার সামনে পেয়ে এমনই ক্ষোভ উগরে দিলেন তিরোল পঞ্চায়েতের মইগ্রামের বাসিন্দারা।
মইগ্রামেরই যুবক কার্তিক বাগকে একটি জমি-বিবাদ মেটানোর নামে হুমকি, মারধর এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনায় মূল অভিযুক্ত ঝর্না। ঘটনায় ওই মহিলা, তাঁর স্বামী রঞ্জিত সিংহ-সহ অভিযুক্ত আট জনের কাউকেই সোমবার রাত পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
কার্তিকের দেহ রবিবার ঝর্নার বাড়ির বারান্দায় রেখে বিক্ষোভে নেমেছিলেন কয়েক হাজার গ্রামবাসী। ওই রাতেই গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প হয়। চলে তল্লাশি। গ্রামের কেউ কেউ পুলিশের কাছে দাবি করেন, রবিবার কয়েক দফায় ঝর্নাকে আরামবাগ হাসপাতাল চত্বরে দেখা গিয়েছিল। পুলিশ সেখানেও তল্লাশি চালায়। তবে মহিলার দেখা মেলেনি। ঝর্নাকে গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন থানায় স্মারকলিপি দেয় বামেরা।
গ্রামে এ দিন ঝর্নাদেবীর দোতলা মাটির বাড়িতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সদর দরজায় তালা ঝুলছে।
এ দিন সকালে কার্তিকের স্ত্রী ঝুমার সঙ্গে দেখা করতে যান সাংসদ। সঙ্গে ছিলেন দলের আরামবাগ ব্লক সভাপতি স্বপন নন্দী। ঝুমার রোজগার এবং তাঁর শিশুপুত্রের পড়াশোনার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন তাঁরা।
ওই বাড়ি থেকে বেরোতেই সাংসদকে ঘিরে ধরেন বেশ কয়েক জন গ্রামবাসী। উড়ে আসতে থাকে একের পরে এক অভিযোগ। এক মহিলার ক্ষোভ, “১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ পেলে ঝর্না বা তাঁর স্বামীকে টাকা দিতে হত!” আর এক গ্রামবাসীর দাবি, “ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি করার জন্য আমাকে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে ঝর্নাদের।” এক প্রৌঢ়ের অভিযোগ, “পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যেও ওরা নিজেদের স্বার্থে নাক গলাত। এ জন্য আগেও এক জন আত্মঘাতী হয়েছেন। গ্রামের তৃণমূল নেতাদের বলেও লাভ হয়নি।” ভিড়ের মধ্যে ছিলেন ওই এলাকা থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য তৃণমূলের ছন্দা বাগ। তিনিও প্রায় একই সুরে একই অভিযোগ তোলেন ঝর্নাদের বিরুদ্ধে। তাঁর সংযোজন, “ব্লক স্তরের নেতাদের এ ব্যাপারে জানিয়েও আমল পাইনি।”
দলের ব্লক সভাপতি স্বপনবাবু বলেন, “ঝর্নার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আমার কানে এসেছিল। কিন্তু প্রথমে তা শুনে দলের ভিতরের গোলমাল বলেই মনে হয়েছিল। এখন বুঝতে পারছি, গ্রামবাসীদের ক্ষোভের কারণ। দলীয় স্তরে পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।” সব শুনে সাংসদের আশ্বাস, “ঝর্নার বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের কিছু প্রমাণিত হলে দল তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।” প্রয়োজনে গ্রামবাসীদের পুলিশের কাছে যাওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
কিন্তু কেন আগে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে গেলেন না গ্রামবাসীরা? গ্রামবাসীর দাবি, ভয়ে। লোকসভা নির্বাচনের সময় ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগে গ্রেফতার হলেও জামিনযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত হওয়ায় ঝর্নাকে হাজতবাস করতে হয়নি। দলও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে এলাকায় ঝর্নার তোলাবাজি মাত্রা ছাড়ায় বলে দাবি করছেন এলাকাবাসীর একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, সেই সময়ে দলেরই কিছু কর্মী-সমর্থককে ঝর্না পাশে পেয়ে যান। তাঁদের দাপটের সামনে চট করে ওই মহিলার বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে গেলে বিপদের সম্ভাবনা ছিল।
একাধিক গ্রামবাসীর আক্ষেপ, “ভোটের সময়ে ওই পঞ্চায়েত সদস্যা গর্হিত কাজ করেছেন বলে দল তাঁকে সতর্ক করলে আজ এমন দিন দেখতে হত না। একটা তরতাজা ছেলের প্রাণও যেত না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy