Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলের প্রতিবাদে লাঠি পুলিশের, আহত পড়ুয়া

স্কুলগেটের পাশের নিকাশির জায়গা দখল ঘিরে উত্তপ্ত হল আউশগ্রাম। পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধে আহত হলেন ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক থেকে পুলিশকর্মীরাও।

জখম স্কুলছাত্র।নিজস্ব চিত্র

জখম স্কুলছাত্র।নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩২
Share: Save:

স্কুলগেটের পাশের নিকাশির জায়গা দখল ঘিরে উত্তপ্ত হল আউশগ্রাম। পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধে আহত হলেন ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক থেকে পুলিশকর্মীরাও।

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার সকালে। আউশগ্রাম হাইস্কুলের পাশের নিকাশির জায়গা দখল করে নেওয়ার প্রতিবাদে পরিচালন সমিতির সভাপতি এ দিন শিক্ষক, পড়ুয়াদের একাংশকে সঙ্গে নিয়ে কয়েক হাত দূরের আউশগ্রাম থানায় গিয়েছিলেন। থানার আইসি ইমতিয়াজ খান তাঁদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। আইসি-র শাস্তি চেয়ে সকাল থেকে এক কিলোমিটার দূরের গুসকরা-ইলামবাজার রোডের শুখাডাঙায় পথ অবরোধ করেন অভিভাবকেরা। অবরোধ তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। মার খান আইসি-সহ দুই পুলিশকর্মী।

স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের অভিযোগ, আইসি-ঘনিষ্ঠ এক সিভিক ভলান্টিয়ার স্কুলগেটের নিকাশির জায়গা দখল করে কিছু দিন ধরেই অবৈধ নির্মাণ করছিলেন। তাতে আপত্তি তুলে বিভিন্ন জায়গায় চিঠি লিখেছিলেন স্কুলের সভাপতি চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এ দিন থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময়ে আইসি হঠাৎই সভাপতির গায়ে হাত তোলেন। এর প্রতিবাদ করেন শিক্ষক ও পড়ুয়ারা। স্কুলের দাবি, পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করে। লাঠির ঘায়ে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জনা কুড়ি পড়ুয়া আহত হয়। মারের হাত থেকে রেহাই পাননি শিক্ষকেরাও।

এর পরে পুলিশ চন্দ্রনাথবাবু ও স্কুলের এক শিক্ষক-সহ তিন জনকে আটক করলে ক্ষোভের মাত্রা বাড়ে। আরও ছাত্র জড়ো হয়ে যায়। এক সিভিক ভলান্টিয়ার তাদের তাড়া করে স্কুল গেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে গেলে বেশ কয়েক জন পড়ে গিয়ে জখম হয়। আহতদের এক জন, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রের কথায়, ‘‘সহপাঠী, শিক্ষকদের সঙ্গে থানায় গিয়েছিলাম। হঠাৎই লাঠি হাতে পুলিশ তেড়ে এল! ভয়ে থানার গেটের কাছে দাঁড়িয়ে যাই। তখনই মাথায় লাঠির আঘাত লাগে।’’ আউশগ্রামের মুজফফরপল্লির বাসিন্দা, নবম শ্রেণির এক ছাত্রী জানায়, তার বাঁ পায়ে লাঠির বাড়ি মেরেছে পুলিশ। ঠিক মতো হাঁটতে পারছে না। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, স্থানীয় বন নবগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে পড়ুয়াদের। তবে কারও আঘাত গুরুতর নয়।

লাঠিপেটার প্রতিবাদে বেলা বারোটা নাগাদ শুখাডাঙায় পথ অবরোধ শুরু হয়। অবরোধকারীদের হাতে ছিল লাঠি, পাথর, ইট এমনকী তিরও। গাছের গুঁড়িও ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। রাস্তার দু’ধারে সার দিয়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে যায়। খবর পেয়ে আউশগ্রাম থানার মেজোবাবু সঞ্জয় রায়ের নেতৃত্বে জনা পনেরো পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার হাজির হতেই তাঁদের ঘিরে ফেলে জনতা। সেই সময় পুলিশকর্মীদের চড়-থাপ্পড় মারা হয় বলে অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আইসি এসে ফের লাঠিচার্জ শুরু করেন। অবরোধকারীরা সাময়িক ছত্রভঙ্গ হলেও দ্রুত জড়ো হয়ে পুলিশের উপরে চড়াও হন। তখন পাথরের ঘায়ে আহত হন আইসি এবং এক সিভিক ভলান্টিয়ার।

স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্য তাপস মণ্ডল বলেন, ‘‘নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানো মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানাব।’’ আজ, শনিবার স্কুলের নির্ধারিত বার্ষিক ক্রীড়া স্থগিত রাখা হয়েছে বলেও তিনি জানান। বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশের তরফে কোনও গাফিলতি পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, পুলিশের উপরে যাঁরা চড়াও হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Public Fight
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE