Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাজ্যপালের আশ্বাসে উঠল অবস্থান

ঘোষণা ছিল, রাজভবন থেকে সদর্থক বার্তা না-মিললে মেয়ো রোড ছেড়ে নড়বেন না ছাত্রছাত্রীরা। রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলে প্রতিনিধি দল ফিরে আসার পরে অবস্থান তুলে নেওয়ারই সিদ্ধান্ত হল। কেশরীনাথ ত্রিপাঠী যে ভাবে তাঁদের কথা শুনেছেন, ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, তাতে খুশি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত পড়ুয়ারা।

পড়ুয়া-প্লাবন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজপথ কাঁপাল ছাত্রছাত্রীদের মহামিছিল। শনিবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

পড়ুয়া-প্লাবন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজপথ কাঁপাল ছাত্রছাত্রীদের মহামিছিল। শনিবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪৪
Share: Save:

ঘোষণা ছিল, রাজভবন থেকে সদর্থক বার্তা না-মিললে মেয়ো রোড ছেড়ে নড়বেন না ছাত্রছাত্রীরা। রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলে প্রতিনিধি দল ফিরে আসার পরে অবস্থান তুলে নেওয়ারই সিদ্ধান্ত হল। কেশরীনাথ ত্রিপাঠী যে ভাবে তাঁদের কথা শুনেছেন, ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, তাতে খুশি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত পড়ুয়ারা। উপযুক্ত পদক্ষেপের আশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস বয়কটের ডাক প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দূর করার আহ্বানও জানিয়েছেন রাজ্যপাল। আগামিকাল সোমবার বৈঠক করে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন আন্দোলনকারীরা।

যাদবপুর-কাণ্ডের পরে শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্য এবং স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক ভাবে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবস্থানকেই সমর্থন জানিয়েছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বক্তব্যের অসঙ্গতি দেখে এবং বিজেপির চাপের কারণে সুর বদল করেন তিনি। ডেকে পাঠান সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে। কিন্তু শুধু সরকার পক্ষের কথা শুনে যে তিনি কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন না, সেটা রাজ্যপাল বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার পরেই পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারব। তার পরেই পুলিশ কমিশনার বা অন্য বিষয়ে কিছু বলতে পারব।”

বৃহস্পতি ও শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ কমিশনার সকলেই দফায় রাজ্যপালকে বলে এসেছিলেন, যাদবপুরের ঘটনায় সশস্ত্র বহিরাগত ও মাওবাদীরা সক্রিয় ছিল। তারাই এমন পরিস্থিতি তৈরি করে, যাতে উপাচার্যের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। যাদবপুরের ঘটনা ছাত্র আন্দোলনের আড়ালে ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’। এই ব্যাখ্যা কতটা যুক্তিগ্রাহ্য, তা যাচাই করতেই শনিবার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন ত্রিপাঠী।

এ দিনই দুপুরে গোলপার্কে এক অনুষ্ঠান শেষে যাদবপুরের পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপাল বলেন, “ওখানে কী হয়েছে আর কী হয়নি, তা আপনারাই ভাল জানেন। কে কী করেছেন আর কে কী করেননি তা-ও জানেন। দায়িত্ব কার? এবং কারা ওখানে ভুল পদক্ষেপ করেছে তা-ও আপনাদের জানা। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ডেকেছি।” পুলিশ কমিশনার কী রিপোর্ট দিয়েছেন, সেই প্রশ্নের জবাবেও রাজ্যপাল স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন, ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার আগে তিনি কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন না।

আবার অভজিত্...সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

এবং রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলে ছাত্র প্রতিনিধিরা খুশি। সন্ধ্যায় রাজভবন থেকে ফিরে ওই সাত ছাত্রছাত্রীর দাবি, রাজ্যপাল এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন, ১৬ সেপ্টেম্বর রাতের ঘটনায় কে অভিযুক্ত, বা কী ঘটেছিল, সবই তিনি নিজে অনুসন্ধান করছেন। যেই দোষী হোক, তিনি ব্যবস্থা নেবেন। রাজ্যপালের হাতে সে দিনের ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজও দিয়ে এসেছেন ছাত্র প্রতিনিধিরা। তবে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গেই ছাত্রদের রাজ্যপালের অনুরোধ, সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা হোক। রাজভবন সূত্রেও রাজ্যপাল এমন পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

প্রশ্ন হল, এ বার পড়ুয়ারা কী করবেন? তাঁরা কি উপাচার্য, সহ-উপাচার্য বা রেজিস্ট্রারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেবেন? তাঁরা কি সোমবার থেকে ক্লাসে যাবেন এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্লাস নিতে দেবেন? ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিধিরা এ দিন রাতে জানান, আগামিকাল, সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তার ভিত্তিতেই সব ঠিক হবে। সেই সভায় অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদেরও উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।

ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিধি দলের তরফে রাজ্যপালকে দেওয়া স্মারকলিপিতে আন্দোলনকারীদের উপরে পুলিশি নির্যাতন ডেকে আনার জন্য উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটাতে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ ও উপাচার্যের অপসারণ চাইল এসইউসি-ও। দলের রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু, বিধায়ক তরুণ নস্কর-সহ চার জন প্রতিনিধি শনিবার রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেন।

উপাচার্যের অপসারণের দাবি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ দিন বলেন, “যত দূর জানি সার্চ কমিটির দ্বারা সর্বসম্মতিক্রমে এক নম্বরে তাঁর নাম আছে। ফলে দাবি তুললেই তো তাঁকে সরানো যায় না।” তবে এ দিনই আন্দুলে প্রভু জগদ্বন্ধু কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা বজায় রাখা ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য। শিক্ষকদেরও উচিত মানবিকতা ও স্নেহ দিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। শিক্ষক এবং ছাত্রদের সম্পর্ক মধুর হওয়া উচিত। ছাত্ররা ভুল পথে গেলে তাদের ভুল ভেঙে দেওয়াই এক জন শিক্ষকের কর্তব্য। এমন কাজ করা উচিত যাতে শিক্ষকদের দেখে ছাত্রদের মাথা শ্রদ্ধায় নত হয়ে যায়।

এ দিন যাদবপুর নিয়ে কলকাতায় ছাত্রছাত্রীদের যে মিছিল হয়, সোমবার তার পাল্টা মিছিল করবেন বলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা জানান। ওই মিছিল গোলপার্ক বা কলেজ স্কোয়ার থেকে বেরিয়ে মেয়ো রোডে শেষ হবে। শঙ্কু বলেন, “মিছিল কোথা থেকে শুরু হবে, তা পরে চূড়ান্ত করা হবে। মিছিলের পর আমরাও রাজ্যপালের কাছে গিয়ে যাদবপুরে কী হচ্ছে, তা জানাব।” সোমবারই যাদবপুর থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত মিছিল করবে তৃণমূলের শিক্ষাকর্মী সমিতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jadavpur university governor student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE