Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সুবহান আসলে করিম-ই, দেহ দেখে অজ্ঞান বাবা

প্রায় আড়াই মাস আগে কেরলে কাজ করতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি ছেড়েছিল ছেলে। বুধবার সকালে সেই ছেলের বিকৃত হয়ে যাওয়া দেহ শনাক্ত করতে গিয়ে জ্ঞান হারালেন খাগড়াগড়-বিস্ফোরণে নিহত আব্দুল করিমের বাবা জামশেদ শেখ। নিহতের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেল ঘটনার ৪২ দিন পর।

নিহত আব্দুল করিম।

নিহত আব্দুল করিম।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪
Share: Save:

প্রায় আড়াই মাস আগে কেরলে কাজ করতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি ছেড়েছিল ছেলে। বুধবার সকালে সেই ছেলের বিকৃত হয়ে যাওয়া দেহ শনাক্ত করতে গিয়ে জ্ঞান হারালেন খাগড়াগড়-বিস্ফোরণে নিহত আব্দুল করিমের বাবা জামশেদ শেখ। নিহতের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেল ঘটনার ৪২ দিন পর।

এনআইএ সূত্রে জানানো হয়েছে, খাগড়াগড় বিস্ফোরণে নিহত দ্বিতীয় ব্যক্তি আসলে বীরভূমের কীর্ণাহারের কাফেরপুর গ্রামের আব্দুল করিম। শনাক্ত করার পর বাড়ির লোকজন তার মৃতদেহও এ দিন নিয়ে গিয়েছেন।

খাগড়াগড়-কাণ্ডে শাকিল গাজি ছাড়া নিহত অপর ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল মঙ্গলবার পর্যন্ত। বর্ধমান জেলা পুলিশ জানায়, ২ অক্টোবর মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে সে নিজের নাম বলেছিল স্বপন মণ্ডল। বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের উত্তরপাড়ায়। আবার খাগড়াগড়ের ঘটনাস্থল থেকে ধৃত দুই মহিলা জানায়, তার নাম সুবহান। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরে উত্তরপাড়া নামে কোনও গ্রাম নেই, আছে উত্তরবাড় গ্রাম। সেখানেও সুবহান বা স্বপন মণ্ডল নামে কারও হদিস পুলিশ বা গোয়েন্দারা পাননি। পরিচয় নিয়ে জট খোলে সোমবার বীরভূমের কীর্ণাহারের বাসিন্দা আমজাদ গ্রেফতার হওয়ার পর।

এনআইএ সূত্রের খবর, আমজাদকে জেরা করার সময়ে তাকে ওই বিস্ফোরণে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তির ছবি দেখানো হচ্ছিল। তখন ‘সুবহান’-এর ছবি দেখে আমজাদ জানায়, তাকে সে চেনে। সে তার পিসতুতো ভাই। নাম আব্দুল করিম। বাড়ি কীর্ণাহারের কাফেরপুরে। করিম আড়াই মাস এলাকায় নেই, সে কথাও আমজাদ জানায় গোয়েন্দাদের। এর পরেই মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কাফেরপুরে করিমের বাড়ি যান এনআইএ-র তিন অফিসার। তাঁরা করিমের মা নুরজাহান বিবি ও বাবা, কীর্ণাহার বাজারের সব্জি ব্যবসায়ী জামশেদ শেখকে আলাদা ভাবে দফায়-দফায় জেরা করে জানতে পারেন, বছর ষোলোর করিম নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিল। এক সময়ে সে কীর্ণাহার শিবচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ত। ঘটনাচক্রে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ওই স্কুলেরই ছাত্র।

মর্গে করিমের বাবা। ছবি: উদিত সিংহ।

পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পর করিম মাঝেমধ্যে নিমড়া গ্রামের কদর গাজির (খাগড়াগড়-কাণ্ডের পর থেকে ফেরার) সঙ্গে সে বাইরে কাজ করতে যেত। মাস আড়াই আগে কেরলে চামড়ার কাজ করতে যাচ্ছে বলে বাড়ি ছেড়েছিল সে।

এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোয়েন্দারা বাড়ি থেকে করিমের রেশন কার্ড, স্কুলের নানা নথি, বইপত্র নেন। করিমের একটি ছবি মেলে। সেটির সঙ্গে এনআইএ-র কাছে থাকা সুবহানের ছবির মিল রয়েছে। ছবি দু’টি পাশাপাশি রেখে করিমের বাবা-মাকে দেখানো হলে তাঁরা জানান, নিহতের ছবিটি তাঁদের ছেলের কি না সন্দেহ রয়েছে। তখন এনআইএ-র তরফে তাঁদের মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বর্ধমান থানায় যেতে বলা হয়।

রাতে জামশেদ শেখ তাঁর ভাইপো আমিরুল হোসেনকে নিয়ে বর্ধমান থানায় পৌঁছলে পুলিশ তাঁদের বিভিন্ন কোণ থেকে তোলা নিহত ওই যুবকের মুখের ছবি দেখায়। পুলিশ সূত্রের খবর, বাড়ির লোকজন তখনও নিশ্চিত হতে পারেননি, সে-ই করিম। বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে গিয়ে দেহ দেখানো হয়।

এনআইএ সূত্রে জানা যায়, জামশেদ প্রথমে নিহতকে চিনতে অস্বীকার করেন। কিন্তু দেহ ভাল ভাবে দেখতে বলার পরেই তিনি কাঁদতে কাঁদতে অচেতন হয়ে পড়েন। জামশেদ ও তাঁর ভাইপোকে মর্গ থেকে বার করে আনা হয়। নিহতের তুতো ভাই আমিরুল বলেন, “আমরা প্রথমে চিনতে পারিনি। পরে করিমকে চিনতে পেরেছি।”

এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কাফেরপুর গ্রামে পৌঁছয় করিমের দেহ। করিমের জ্যাঠা আনোয়ার হোসেন বলেন, “কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ভাইপোকে কেউ ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। লোভে পড়ে হয়তো ও ফেঁসে যায়। জীবন দিয়ে তার

মাসুল দিতে হল ওকে।” তাঁর দাবি, “করিমকে কাজে লাগিয়ে যারা মোটা টাকা কামিয়েছে, চক্রের সেই সব মাথাকে গোয়ান্দারা খুঁজে বার করে শাস্তি দিক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE