জবুথবু: ঠান্ডা ঠেকাতে উনুনের ধারে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুমন বল্লভ।
খাতায়-কলমে আগমনি বার্তা ছিল। সেই সঙ্গেই ছিল ‘সে কি এল, সে কি এল না’র সংশয়ও। সেই দোলাচল কাটিয়ে অবশেষে আগমন জানান দিল শীত। প্রত্যাশা অংশত পূরণের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হল শীতপ্রেমী বাঙালির! চলতি মরসুমে দ্বিতীয় বারের জন্য স্বাভাবিকের নীচে নামল কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
মকরসংক্রান্তিতে দাপুটে শীত মিলবে কি না, সেটা অনিশ্চিতই। তবে দিল্লির মৌসম ভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, আগামী দু’তিন দিন দক্ষিণবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ২-৩ ডিগ্রি নীচেই থাকবে। কলকাতার রাতের তাপমাত্রা পৌঁছে যেতে পারে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি।
ডিসেম্বরের গোড়া থেকে শীতের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে ছিলেন শীতপ্রেমীরা। কিন্তু আসি-আসি করেও কিছুতেই স্বমহিমায় ধরা দিচ্ছিল না শীত। এক ধাপ পারদ নামার পরে উঠে যাচ্ছিল দু’ধাপ। জানুয়ারিতে এসে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে শীত। কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের পারদ নিম্নমুখী বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস।
মৌসম ভবন সূত্রের খবর, শুধু কলকাতা বা পূর্ব ভারত নয়, জাঁকিয়ে শীত পড়েছে গোটা দেশেই। তুষারপাত হচ্ছে কাশ্মীরের শ্রীনগরে, তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে মাইনাস ৩.৯ ডিগ্রিতে। রাজস্থানের অলওয়ারে রাতের তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছে শূন্য ডিগ্রির কাছাকাছি (০.৪ ডিগ্রি)। বৃহস্পতিবার দেশের সমতল এলাকার সব থেকে কম তাপমাত্রা ছিল এটাই।
পারদ পতন
কোথায় কত?
• শ্রীনগর -৩.৯
• অলওয়ার ০.৪
• জম্মু ২.৭
• হিসার ৩.০
• দিল্লি ৫.০
• গয়া ৫.২
• রাঁচি ৬.৮
• শ্রীনিকেতন ৭.২
• আসানসোল ৮.০
• দমদম ১১.২
• কলকাতা ১২.৬
* সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসে
কলকাতায় বসে এমন শীত মিলতে পারে শুধু কল্পনাতেই। তার উপরে এ বার মরসুমের প্রথম থেকে শীতের যা ছন্নছাড়া চেহারা, তাতে অলওয়ারের ঠান্ডা কল্পনা করাও কঠিন। তবে ঠান্ডার আকালের মধ্যেই সুখবর: দীর্ঘদিন পরে বুধবার মহানগরে রাতের পারদ স্বাভাবিকের (১৩.৭ ডিগ্রি) স্বাভাবিকের কোঠায় পৌঁছেছিল। সেটাই ছিল চলতি মরসুমে কলকাতার সব থেকে কম তাপমাত্রা। সেই রেকর্ড ভেঙে গিয়েছে বৃহস্পতিবার। এ দিন কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৬ ডিগ্রি। দমদম আরও নেমে পারদ পৌঁছেছে ১১.২ ডিগ্রিতে। ডিসেম্বরে এক বার স্বাভাবিকের নীচে নেমেছিল রাতের তাপমাত্রা। এ দিন দ্বিতীয় বার এমন ঘটনা ঘটল। চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কিছুটা নামবে, আশ্বাস আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসের।
কনকনে শীত পড়েছে বীরভূমে। সেখানে রাতের তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছে ৭.২ ডিগ্রিতে, আসানসোলে আট ডিগ্রির কাছাকাছি। বিহার, ঝাড়খণ্ডেও জাঁকিয়ে পড়েছে শীত। বিহারের কোনও কোনও এলাকায় দিনের বেলাতেও কনকনে ঠান্ডা। এ রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে কড়া শীতের পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের একাংশে শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতাও জারি করে আবহাওয়া দফতর।
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ডিসেম্বর জুড়ে গোটা ভারতেই ঝিমিয়ে ছিল শীত। কলকাতায় তো নয়ই, উত্তর ভারতেও তেমন মারকাটারি চেহারায় দেখা যাচ্ছিল না তাকে। পশ্চিমি ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা ভারী হাওয়া) কাশ্মীরে ঢুকলেও প্রবল তুষারপাত হচ্ছিল না। সেখানে জোর তুষারপাতের জেরেই উত্তর-পশ্চিম ভারতে কনকনে ঠান্ডা পড়ে। উত্তুরে হাওয়া সেই ঠান্ডাই বয়ে আনে পূর্ব ভারতে। একে তো উত্তর-পশ্চিম ভারতে জমকালো শীতের দেখা মিলছিল না। তার উপরে পূর্ব ভারতে নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্তের ঠেলায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল উত্তুরে হাওয়ার পথ। নতুন বছরে বাধা কাটছে। একটি জোরালো ঝঞ্ঝা এসে কাশ্মীরে প্রবল তুষারপাত ঘটিয়েছে। তার প্রভাবেই এমন ঠান্ডা। হরিয়ানার হিসারে, দিল্লির সফদরজংয়ে দাঁতে-দাঁতে হাড়ে-হাড়ে ঠকঠকানি মালুম হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy