সনাতন গোস্বামী। —ফাইল চিত্র।
ধরা পড়ার পরে ক’দিন লকআপের মধ্যে কীর্তন গেয়ে খোশমেজাজে থাকলেও পুলিশের টানা জেরায় শেষ পর্যন্ত ভাঙল পুরুলিয়ায় সুচ-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত সনাতন গোস্বামী। সৎ মেয়েকে মেরে ফেলতেই তার শরীরে সুচ বেঁধানোর কথা সনাতন কবুল করেছে বলে জানালেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘সনাতন শিশুটিকে সুচ ফোটানোর কথা স্বীকার করেছে।’’
তবে তার কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, সনাতন সাড়ে তিন বছরের ওই শিশুটিকে গলার কাঁটা বলে মনে করত। টাকা জোগাড় করে ওই শিশুর মাকে নিয়ে বাকি জীবনটা তার বৃন্দাবনে কাটানোর ইচ্ছে ছিল। সেখানে ওই শিশুটিকে সে নিয়ে যেতে চাইছিল না। তাই তাকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলতেই সে ওই একরত্তির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সুচ ফুটিয়ে রেখেছিল। ঘটনাটির সামাজিক তদন্ত করতে গিয়ে জেলে মৃত শিশুর মায়ের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) উত্তমকুমার অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটির মা-ও আমাদের জানিয়েছিলেন, সনাতন ও তাঁর বৃন্দাবনে যাওয়ার কথা ছিল।’’
আরও পড়ুন: আত্মঘাতী কিশোরী, ধৃত বন্ধু
পুরুলিয়া মফস্সল থানার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত হোমগার্ড সনাতন এ বছর দোলের সময় স্বামী বিচ্ছিন্না বছর বাইশের ওই তরুণীকে বিয়ে করেছিল। জুন থেকে সনাতনের বাড়িতে থাকতে শুরু করে ওই তরুণীর শিশুকন্যাও। শিশুটিকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পেয়ে সনাতনের পুত্রবধূরা ১১ জুলাই পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। তার পরেই শিশুটির উপরে যৌন-নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসে। এসএসকেএম হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে ছোট্ট শরীর থেকে সুচগুলি বার করা হলেও বাঁচানো যায়নি। গ্রেফতার করা হয় নির্যাতিত শিশুর মাকে। পালিয়ে বেড়ানো সনাতনকে পুলিশ ২৯ জুলাই উত্তরপ্রদেশ থেকে ধরে।
কিন্তু তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করলেও এত দিন সে পুলিশকে লাগাতার বিভ্রান্ত করেছে। কখনও সুচ ফোটানোর জন্য নিজের পুত্রবধূকে দায়ী করছে, কখনও বা দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর প্রেমিকের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার মফস্সল থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের জেরার সময় সনাতন তাঁদের কাছে স্বীকার করে— মেয়েটিকে মেরে ফেলার জন্যই সুচ বিঁধিয়েছিল। কিন্তু কেন? আর মুখ খোলেনি সে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘ওই মহিলা নিজের সন্তানের উপরে অত্যাচার হতে দেখেও কী ভাবে চুপ থেকেছিলেন, সেটাই অবাক করার!’’
এখন বেশির ভাগ সময় সে চুপচাপ থাকে। জেরায় মাঝে মধ্যে পুলিশকে নিজের সম্পর্কে নানা টুকরো তথ্যও দিচ্ছে। এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘সনাতনের দেওয়া তথ্যগুলো সাজিয়ে শিশু খুনের কারণ অনুসন্ধান চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy