ধরণীকান্ত ভৌমিকের স্ত্রী-কন্যার কান্না।-হিমাংশুরঞ্জন দেব
ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়ানোর ধকল সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর অভিযোগ উঠল এ রাজ্যেও। কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা ধরণীকান্ত ভৌমিক (৫৬) সোমবার নিজের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দিনহাটা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে কোচবিহারের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। মঙ্গলবার ভোর রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
তাঁর পরিবারের দাবি, শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন পুরনো নোট জমা দেওয়া ও টাকা তোলার জন্য দফায় দফায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। রবিবার প্রায় দিনভর লাইনে ছিলেন। সে দিনই বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়ি ফেরেন। এরপর সোমবার সকাল থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রাথমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষক ধরণীকান্তবাবু।
তাঁর স্ত্রী সবিতাদেবী বলেন, ‘‘টাকা তোলা ও জমা করার জন্য শুক্র ও শনিবার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা করে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু টাকা জমা দিতে পারলেও টাকা তুলতে পারেননি। রবিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ফের লাইনে দাঁড়িয়ে দু’ হাজার টাকা বদলাতে পেরেছিলেন। এই মানসিক ও শারীরিক ধকল উনি নিতে পারেননি।’’ ধরণীকান্তবাবুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র চার বছর চাকরি ছিল তাঁর। এমএ পাঠরতা মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন তিনি।
ধরণীকান্ত ভৌমিক
তাই প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে চার লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এর থেকে বেশ কিছু দিয়ে গয়নাও কেনেন। বাকি টাকা ফের ব্যাঙ্কে রেখে দেবেন বলে স্থির করেছিলেন। যার প্রায় পুরোটাই ছিল হাজার ও পাঁচশো টাকার নোট। তাই নোট বাতিলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত শোনার পর থেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাঁর ভাই বিনোদ ভৌমিক বলেন, ‘‘নোট বাতিলের পর টেনশনে ছিলেন। রোজ ব্যাঙ্কে ছুটছিলেন। টাকা জমা দেওয়ার পাশাপাশি প্রায় ১০ হাজার টাকা তোলারও দরকার ছিল তাঁর। কারণ জমি থেকে ধান কাটার পরে মজুরদের পাওনা দিতে পারছিলেন না। যদিও চিকিৎসকেরা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন, কিন্তু নোট নিয়ে হয়রানি না হলে এমনটা হত না।” যদিও এ দিন সন্ধ্যাপর্যন্ত ওই ব্যাপারে পুলিশ, প্রশাসনের কাছে কোনও অভিযোগ হয়নি। পরিবার সূত্রের খবর, ধরণীবাবুর মৃত্যুতে সকলেই শোকস্তব্ধ। দ্রুত বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “ বিষয়টি নজরে রয়েছে। ওই ব্যাপারে বিশদে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।”
দিনহাটার প্রত্যন্ত গ্রাম দ্বিতীয় খণ্ডনগর ভাংনির বাসিন্দা ধরণীবাবু সাতকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তবে কয়েকমাস ধরে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ছেলের সুবিধের জন্য পরিবার নিয়ে দিনহাটা শহরে ভাড়া থাকতেন। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। ধরণীবাবুর স্কুলের সহকর্মী ধর্মেন্দ্র সিংহ জানান, বুধবার সাংগঠনিক ভাবে এসডিওকে অভিযোগজানাবেন তাঁরা।
লোকসভা উপনির্বাচনের মুখে কোচবিহারে ওই ইস্যুতে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল ও বামেরা দাবি করেছে, কেন্দ্রের হঠকারি সিদ্ধান্তের মাসুল সাধারণ মানুষকে দিতে হচ্ছে। বিজেপি প্রার্থী হেমচন্দ্র বর্মন অবশ্য বলেন, “পুরোটাই বিরোধীদের অপপ্রচার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy