Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মর্যাদা বাঁচাতে তৃণমূল সেনাপতি বসিরহাটেই

কন্ট্রোল রুমে নেই প্রধান সেনাপতিই! প্রতি বার তপসিয়ায় তৃণমূল ভবন থেকেই ভোট পরিচালনার দায়িত্ব থাকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের উপরে। চৌরঙ্গি ও বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ উপনির্বাচন হয়ে গেল শনিবার। একে বিজেপি-র উত্থানের বিপদ, তার উপরে সারদা-কাণ্ডে প্রবল অস্বস্তিতে শাসক দল। এমন চাপের পরিস্থিতিতে কোথায় তিনি?

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৭
Share: Save:

কন্ট্রোল রুমে নেই প্রধান সেনাপতিই!

প্রতি বার তপসিয়ায় তৃণমূল ভবন থেকেই ভোট পরিচালনার দায়িত্ব থাকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের উপরে। চৌরঙ্গি ও বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ উপনির্বাচন হয়ে গেল শনিবার। একে বিজেপি-র উত্থানের বিপদ, তার উপরে সারদা-কাণ্ডে প্রবল অস্বস্তিতে শাসক দল। এমন চাপের পরিস্থিতিতে কোথায় তিনি?

মুকুল রায় দিনভর পড়ে থাকলেন বসিরহাট শহরের বাইরে খোলাপোতায়। নির্বাচনী বিধির গেরো এড়াতে বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বাইরে খোলাপোতাতেই কন্ট্রোল রুম খুলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছিলেন মুকুল। যেখানে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের পিছিয়ে থাকার প্রসঙ্গ তুলে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, এই উপনির্বাচন যথেষ্ট ‘টাফ’!

টাফ তো বটেই! শুধু তৃণমূলের জন্য নয়। তাঁর নিজের জন্যও! সারদা-রেল যোগাযোগ নিয়ে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুলের বক্তব্যের পর থেকেই দলের অন্দরে তাঁর অবস্থান কণ্টকপূর্ণ! দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বেড়েছে। তৃণমূল নেত্রীও তাঁর ‘আহমেদ পটেল’ মুকুলের উপরে বিশেষ আস্থা না রেখে সামনে এগিয়ে দিয়েছেন তাঁর ‘রাহুল গাঁধী’ তরুণ সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দলে গুরুত্ব হারানোর এমন বাতাবরণের মধ্যে প্রায় ৩২ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকা বসিরহাট দক্ষিণ আসন জেতাতে পারলে সেনাপতি হিসাবে ভরসার আসন ফিরে পেতে পারেন মুকুল।

সেই জন্যই নাকি ভোটের দিন তৃণমূল ভবনে মুকুল ভ্যানিশ! বদলে সেখানে দেখা গিয়েছে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীদের।

ভোটের দিন অবশ্য রটেছিল, বসিরহাটে নির্বাচনী এলাকার মধ্যে মুকুলবাবু কনভয় ও লোকলস্কর নিয়ে ঘুরছেন। সিপিএম এবং বিজেপি-র তকফে এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগও জানানো হয়। বসিরহাটে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের বেতারে ভেসে এসেছে বিরোধীদের অভিযোগের টুকরো কখনও ‘মুকুল এখানে কেন?’, কখনও আবার ‘মুকুলবাবুকে বসিরহাট থেকে সরানোর ব্যবস্থা করুন।’ ধোঁয়াশা কাটাতে তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য স্পষ্ট বলেছেন, “কে বলেছে মুকুলদা বসিরহাটে? আমরা বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বাইরে খোলপোতায় পার্টি অফিসে ছিলাম!”

উপনির্বাচনের দিন বলেই নয়, গত প্রায় সাত দিন ধরেই বসিরহাট দক্ষিণে মুকুল মাটি কামড়ে পড়েছিলেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। চৌরঙ্গিতেও বেশ ক’টি নির্বাচনী সভায় তিনি ছিলেন প্রধান বক্তা। কিন্তু উপনির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব মেটার পর থেকেই কার্যত মুকুল হয়ে গিয়েছিলেন বসিরহাটবাসী! কখনও দৌড়েছেন রবীন্দ্রভবনে, তো কখনও শাঁকচুড়োয়। কখনও টাকির সংস্কৃতি মঞ্চে, তো কখনও কাছারীপাড়ায়। যে কেন্দ্রে গত লোকসভা ভোটে বিজেপি-র চেয়ে তার দল পিছিয়ে ছিল, সেই কেন্দ্র কি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে? ভোট মেটার পরে এ দিন মুকুলবাবুর সতর্ক উত্তর, “নির্বাচন শান্তিপূর্ণ। ফলাফলেই বোঝা যাবে!”

তৃণমূলের অন্দরে একাংশের বক্তব্য, বসিরহাট দক্ষিণে এ বার কঠিন লড়াই বলেই মুকুল সেখানে ঘাঁটি গেঁড়েছিলেন। কিন্তু দলের ভিতরেই তার চেয়েও জোরালো মত হল, মুকুলের নিজের জন্যই ওই আসন জেতা তাঁর কাছে জরুরি। সারদা-কাণ্ডের বাজারে এমন কঠিন আসন বার করতে পারলে দলনেত্রীর কাছে নিজের ‘অপরিহার্যতা’ বোঝাতে পারবেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আর সেই লক্ষ্যে তিনি যে কলকাতা থেকে দূরে সরে থাকলেন, তাতে সংবাদমাধ্যমের ধরাছোঁয়ার বাইরে তাঁকে রেখে আপাতত তৃণমূল নেত্রীর উদ্দেশ্যও পূরণ হল! রেল-সারদা মম্তব্যের পর থেকেই মুকুলকে নিয়ে যে অস্বস্তিতে আছেন মমতা!

উপনির্বাচনের আগেই সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের বাঁধন তীব্র হয়েছে। প্রাক্তন পুলিশ-কর্তা তথা তৃণমূল নেতা রজত মজুমদার গ্রেফতারের পরে দলের অনেকেই প্রমাদ গুণছেন। এই তদন্তের প্রভাব চৌরঙ্গি বা বসিরহাটের অকাল ভোটে পড়বে কি না, তা নিয়ে দলেই উৎকণ্ঠা আছে। কিন্তু দলের অন্দরে তার চেয়েও রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা মুকুলের কী হবে! বসিরহাটবাসী হওয়ার আগে মুকুল প্রকাশ্যে বলেছিলেন, দু’টি কেন্দ্রেই তাঁরা জিতবেন। তবু ভোট মিটে যাওয়ার পরে রাত ৮টাতেও তাঁকে সহযোগীদের সঙ্গে বসতে হয়েছে হিসাব মেলাতে। তাঁর ফোন ধরে সহযোগী বলেছেন, “দাদা মিটিং করছেন। সাংগঠনিক ব্যাপারে।”

দাদাকে এখন দিদির কাছে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে যে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE