জয়ের পরে তৃণমূল কর্মীরা।—নিজস্ব চিত্র।
একেবারে সদ্যোজাত একটা পুরসভা। প্রথম বার ভোট। কিন্তু, সেই ডোমকল যে বাকি পুরসভাগুলোর থেকে একেবারেই আলাদা তা বোঝা গিয়েছিল গত রবিবার নির্বাচনের দিন থেকেই। বুধবার ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, অন্য সব পুরসভার থেকে সত্যি-ই সে আলাদা।
তৃণমূলের ‘বাজিমাত’ করা ফলের ভিতর যে তিন জোটপ্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন, তাঁদের দু’জন প্রকাশ্যে জানিয়ে দিলেন উন্নয়নের স্বার্থে তাঁরাও তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। তৃতীয় জনও তাদের দলে যোগ দেবেন বলে তৃণমূলের দাবি।
নির্বাচনের দিন সকাল থেকে বিরোধীরা বারে বারেই অভিযোগ করে এসেছে, ভোট নয়, ডোমকলে ভোটের নামে প্রহসন চলছে। সন্ত্রাস, মারপিট, ইভিএম ভাঙা— কী হয়নি। আর এ সবের জেরে পুরভোট কার্যত একতরফা হয়ে পড়ে। যার জেরে ওই দিন দুপুরেই ডোমকল থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল কংগ্রেস ও বিজেপি। সিপিএম যদিও ভোটের মাঠে ছিল নাম-কা-ওয়াস্তে। মঙ্গলবার দু’টি বুথে ফের ভোটও হয়। সব মিলিয়ে ভোট গননা বয়কট করে বিরোধীরা। তৃণমূল ছাড়া গননা কেন্দ্রে দেখা যায়নি কোনও পক্ষকেই।
আরও খবর
দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পঙেও গুরুঙ্গদের চিন্তায় ফেলল তৃণমূল
এ দিন সকালে ভোটের ফল প্রকাশ পেতেই দেখা গেল, ২১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টি-ই পেয়েছে তৃণমূল। বাকি তিনটি ওয়ার্ডের দু’টি কংগ্রেস এবং একটি সিপিএম পেয়েছে। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছেন সিপিএমের রফিকুল ইসলাম। ২১ নম্বরে কংগ্রেসের বিল্লাল হোসেন এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছেন কংগ্রেসের আসাদুল হক। এর পরেই ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়। রফিকুল এবং আসাদুল প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন, তাঁরা বুঝতে ভুল করেছিলেন। মানুষের রায় উন্নয়নের পক্ষেই গিয়েছে। তাই ডোমকলের উন্নয়নের স্বার্থে তাঁরা আর বিরোধী দলে থাকতে চান না। শাসক দলেই যোগ দেবেন। বিল্লালও যে তৃণমূলে যোগ দেবেন, তা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন ডোমকলে তৃণমূলের প্রধান মুখ তথা যুবনেতা সৌমিক হোসেন।
তখন ভোটগননা চলছে।—নিজস্ব চিত্র।
গননাকেন্দ্রে বিরোধী দলের কোনও কর্মী-সমর্থককেই এ দিন দেখা যায়নি। তবে, রফিকুল এবং আসাদুল ছিলেন। ফল প্রকাশের পরে তাঁরা গননাকেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়েই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা বলেন। তাঁদের কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের মন্ত্রেই ডোমকলের মানুষ সাড়া দিয়েছেন। ২১-এর মধ্যে ১৮টিতেই তৃণমূল জিতেছে। এবং ওয়ার্ডগুলিতে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট তারাই পেয়েছে। উন্নয়নের ধারা বাকি তিনটি ওয়ার্ডেও জরুরি। আর সেই প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখেই তাঁরা শাসকদলে যোগ দিচ্ছেন। তবে, বিল্লালকে এ দিন কোথাও দেখা যায়নি। তিনি অসুস্থ বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছেন। ফল প্রকাশের পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করা যায়নি।
তবে, রফিকুল এবং আসাদুল যে তৃণমূলে যোগ দেবে তা আগে থেকেই নাকি জানা ছিল। এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্ট দলের। আর সে কারণেই তারা প্রথম থেকে প্রহসন প্রশ্নে সরব ছিল। সিমিএমের জেলা কমিটির সদস্য নারায়ণ দাস এ দিন বলেন, ‘‘প্রহসনটা দেখার জন্যই আমরা শেষ পর্যন্ত মাঠে ছিলাম। যা দেখেছি, তাতে ফল জানতে যাওয়ার মানে কোনও মানে ছিল না।’’ আর তৃণমূল কী বলছে? নয়া এই পুরসভায় যিনি পুরপ্রধান হবে বলে মনে করা হচ্ছে, সেই সৌমিক হোসেন আগেই বলেছিলেন, রফিকুল ইতিমধ্যেই তাঁদের দলে যোগ দিয়েছেন। সিপিএম-কংগ্রেস এ বার সাইনবোর্ড হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। আর এ দিন তিনি বলেন, ‘‘চিরকালই ডোমকলে ভোট মানেই খুনোখুনি, রক্তগঙ্গা। এ বার কার্যত প্রতিরোধহীন একবগ্গা ভোট হওয়ায় তা এড়ানো গিয়েছে। আর সে কারণেই মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পেরেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের রথ জয় পেয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy