Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাস্তুমতে বদল! উপাচার্যের খরচ ৩৬ লাখ

স্নানঘর কখনও পূব-মুখো হয়, ওটা হবে পশ্চিম মুখো! অফিসঘর আর বাংলো সরজেমিনে দেখতে এসেই চোখ পাকিয়েছিলেন তিনি। তাঁর চোখের ইশারায় দিন সাতেকের মধ্যেই একে একে বদলে গিয়েছে শোওয়ার ঘরের অবস্থান, শৌচাগারের দরজা, উপাচার্যের বসার সুবিশাল সেক্রেটারিয়েট টেবিল।

ধরণীধর পাত্র

ধরণীধর পাত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩২
Share: Save:

স্নানঘর কখনও পূব-মুখো হয়, ওটা হবে পশ্চিম মুখো!

অফিসঘর আর বাংলো সরজেমিনে দেখতে এসেই চোখ পাকিয়েছিলেন তিনি। তাঁর চোখের ইশারায় দিন সাতেকের মধ্যেই একে একে বদলে গিয়েছে শোওয়ার ঘরের অবস্থান, শৌচাগারের দরজা, উপাচার্যের বসার সুবিশাল সেক্রেটারিয়েট টেবিল।

জানিয়েছেন, চেয়ার-টেবিল-খাট-বিছানার মতোই বদলে ফেলতে হবে, ডেস্কটপ আর প্রিন্টার-ও। কারণ বাস্তুমতে এ সবই ছিল ‘উল্টো দিকে।’

বাংলোর সামনে পুকুর রয়েছে, তৎপর হয়েছিলেন সেটি বুজিয়ে ফেলতে। কিন্তু, কর্মীরা তাঁকে বুঝিয়ে নিরস্ত করেছেন। আপাতত তাই পুকুরর চার ধারে উঠেছে উঁচু পাঁচিল।

তিনি ধরণীধর পাত্র, কল্যাণী বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য মনোনীত উপাচার্য। দায়িত্ব নিয়েই যিনি মুখ থুবড়ে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন বা পরিকাঠামো নয়, বদলে দিতে তৎপর হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ঘর-আসবাব। জানান, কারও ব্যবহার করা জিনিস পুর্নব্যবহার অসম্ভব। আর সে জন্য, গত সাত দিনে বাড়তি খরচ হয়েছে অন্তত ৩৬ লক্ষ টাকা।

উপাচার্যের এই ‘বাস্তু চাষের’ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়তি ব্যয় বরাদ্দে অবশ্য বেজায় চটেছেন শিক্ষক থেকে কর্মচারী সকলেই। ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে লিফলেট বিলিও শুরু করেছেন তাঁরা। দীর্ঘ দিন পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য আসতে না আসতেই তাই শুরু হয়েছে আন্দোলন। উঠে গিয়েছে তাঁকে অপসারণের দাবিও।

ধরণীধরবাবু অবশ্য নিরুত্তাপ। বলছেন, ‘‘আসলে বছর দেড়েক বাংলোটি অব্যহৃত পড়ে ছিল তো তাই একটু সারিয়ে নিচ্ছি।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য বলছেন, ‘‘ধরণীধরবাবু তাঁর এই বদলে ফেলার কারণ বলেছেন, তিনি বাস্তু মতে বিশ্বাসী।’’

যা শুনে কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর স্পষ্টই জবাব, ‘‘অনুমতি ছাড়া নিয়ম ভেঙে এত টাকা খরচ করা যায় না। কারও বাস্তুর খেয়াল মোটানোর জন্য সরকার টাকা খরচ করবেই বা কেন?’’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধরণীধরবাবু জানিয়েছেন, অন্যের ব্যবহৃত জিনিস ফের ব্যবহার করা উচিৎ নয়। সেই জন্য ফরমায়েস হয়েছে, পুরনো মোবাইলের বদলে নতুন মোবাইল সেটেরও।

উপাচার্য লিখিতভাবে চেয়ে পাঠিয়েছেন, নতুন টিভি, ফ্রিজ, মডিউলার কিচেন, ডাইনিং সেট, সোফা সেট, এসি-সহ আরও অনেক কিছুই। ইতিমধ্যেই অ্যাকাউন্টস বিভাগ থেকে তা মঞ্জুরও হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সংগঠনের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার পার্থসারথি চট্টোপাধ্যাযের কাছে অভিযোগও করা হয়েছে। পার্থবাবুর কথায়, ‘‘অভিয়োগ এসেছে। তদন্তও শুরু হয়েছে।’’ কিন্তু তাতে কি এই বাস্তু-বদল রোখা যাবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE