Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙচুরের সে বার-এ বার, তফাত কি শুধু জরিমানায়

সেই একই বিধানসভা। আবার সেই ভাঙচুরের অভিযোগ। ব্যবধান দশটা শীতের!কিন্তু ফারাক কি শুধু সময়ের? তফাত আসলে আছে আরও! সে বারের আর এ বারের ভাঙচুরের আঘাত কেমন, জরিমানা নির্ধারণ করতে গিয়েই তার ফারাক মালুম হচ্ছে! দু’বারই ঘটনার দিন দায়িত্বে থাকা স্পিকার পূর্ত দফতরকে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তির মূল্য ঠিক করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

কংগ্রেসের বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। বৃহস্পতিবার বিধানসভার সামনে। ছবি: সুমন বল্লভ।

কংগ্রেসের বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। বৃহস্পতিবার বিধানসভার সামনে। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩১
Share: Save:

সেই একই বিধানসভা। আবার সেই ভাঙচুরের অভিযোগ। ব্যবধান দশটা শীতের!

কিন্তু ফারাক কি শুধু সময়ের? তফাত আসলে আছে আরও! সে বারের আর এ বারের ভাঙচুরের আঘাত কেমন, জরিমানা নির্ধারণ করতে গিয়েই তার ফারাক মালুম হচ্ছে! দু’বারই ঘটনার দিন দায়িত্বে থাকা স্পিকার পূর্ত দফতরকে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তির মূল্য ঠিক করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তৎকালীন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের নির্দেশ পেয়ে পূর্ত দফতর যা হিসাব দিয়েছিল, তার ভিত্তিতে তৃণমূলের ২৯ জন বিধায়কের মাথা পিছু ১৩ হাজার ৭০৪ টাকা জরিমানা হয়েছিল। আর এ বার? সরকারি ভাবে হিসাব এখনও জমা পড়েনি। কিন্তু বিধানসভারই এক কর্মী বলছেন, ‘‘মাইকের তার ছিঁড়ে যে গোলমাল হয়েছিল, সেটা রাতেই ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। আর বিরোধী দলনেতার আসনের সামনের ডেস্কের পলেস্তারা খুলে গিয়ে যেটা হয়েছে, সেটা ঠিক করতে বড়জোর দু’টাকার পেরেক লাগে!’’

সম্পত্তি ভাঙচুর ঠেকাতে বিধানসভায় সংশোধনী বিল পেশ এবং পাশ হয়েছে বুধবার। রাজ্যপালের সই হয়ে সে বিল কার্যকর হতে আরও সময় লাগবে। কিন্তু বিল পরের কথা। ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে প্রথা মেনে যা করা হয়, সেটা হল— আক্রমণকারী হিসাবে যাদের দেখা যাচ্ছে, সেই দলের উপস্থিত সব সদস্যের মধ্যে জরিমানার অঙ্ক ভাগ করে দেওয়া হয়। তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূলের বিধায়ক ছিলেন ৩০ জন। কিন্তু ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর ঘটনার দিন হাজিরা খাতায় সই ছিল ২৯ জনের। তাঁদের মধ্যেই জরিমানা ভাগ করে দিয়েছিলেন স্পিকার।

কিন্তু এ বার? স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় পূর্ত দফতরকে সম্পত্তি ভাঙচুরের হিসাব করতে বলেছেন ঠিকই। কিন্তু সেই ক্ষতির পরিমাণ এতই সামান্য হতে পারে যে, কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট মিলে কমপক্ষে ৬০

জন বিধায়ক হাজির ছিলেন ধরে নিলেও তাঁদের মধ্যে সেই টাকা ভাগ করলে হাস্যকর অঙ্ক দাঁড়াবে কি না, জল্পনা চলছে বিধানসভার কর্মী মহলেই! এক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘মাথা পিছু ধরলে তো আনা-পয়সায় জরিমানা বসাতে হয়!’’

ঘটনাসূত্র বলছে, সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের সময় ২০০৬ সালে তদানীন্তন প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। তৃণমূল নেত্রী তথা সাংসদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে বছরের ৩০ নভেম্বর সিঙ্গুর যেতে চাইলে ১৪৪ ধারার কথা বলে ডানকুনির মাইতিপাড়ায় তাঁর কনভয় আটকে দিয়েছিল পুলিশ। ক্ষুব্ধ মমতা সংবিধানের হ্যান্ডবুক সঙ্গে নিয়ে ফিরতি পথে ঢুকে পড়েছিলেন বিধানসভায়। তার পরেই তৃণমূল বিধায়কদের রণমূর্তি দেখেছিল বিধানসভা। গোটা অলিন্দ জুড়ে আসবাব ভাঙচুর হয়েছিল দেদার। আইন প্রণয়নের পীঠস্থান কী ভাবে বেআইনি কাজে ক্ষতিগ্রস্ত, জনতাকে তা দেখাতে বিধানসভার দরজা খুলে দিয়েছিলেন স্পিকার হালিম।

তাঁর পূর্বসূরির মতো স্পিকার বিমানবাবুও এ বার সংবাদমাধ্যমকে ক্ষতিগ্রস্ত সভাকক্ষের ছবি তোলার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাঙচুরের অঙ্ক মেলাতে গিয়েই বেগ পেতে হচ্ছে! বিধানসভার সূত্রই বলছে, তৃণমূল বিধায়কেরা সে বার জরিমানা দিতে রাজি হচ্ছিলেন না বলে স্পিকার তাঁদের তিন মাসের বেতন আটকে দিয়েছিলেন। তৃণমূলের তৎকালীন বলিয়ে-কইয়ে এক বিধায়ক এবং অধুনা সাংসদ স্পিকারের কাছে দরবার করে বলেছিলেন, মাইনেটা স্যর ছেড়ে দিন! তদানীন্তন বিরোধী দলনেতা এবং বর্তমান পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘জরিমানা তো হয়েছিল। বিধানসভার ভিতরের ঘটনা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। স্পিকার এখন যা নির্দেশ দিয়েছেন, তা-ই হবে।’’

বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী স্বভাবতই পাল্টা বলছেন, ‘‘বিল আনার আগেই রাজ্যে ভাঙচুরের রেকর্ড কৃতিত্ব তৃণমূলের। এই বিল কার্যকর করতে হলে কারাগার তো ভরে যাবে তৃণমূলের লোকেই! যারা সে দিন বিধানসভা ভেঙেছিল, তারাই এখন বলছে প্রতিবাদ চলবে না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC CPIM Congress Assembly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE