বছর তিনেক আগে ১৩৮০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছিল বিশ্বব্যাঙ্ক। কিন্তু রাজ্যের ক্ষুদ্রসেচ প্রকল্প চলছে ঢিমে তেতালায়। দু’বছর ধরে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ক্ষুদ্রসেচ প্রকল্পে কাজ প্রায় বন্ধ। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, ওই সব প্রকল্পে টাকার জোগান বন্ধ হওয়ার মুখে।
সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছেন, গয়ংগচ্ছ ভাব চলতে থাকলে রাজ্যের ক্ষুদ্রসেচে আর টাকা দেওয়ার সুপারিশই করবেন না তাঁরা। সত্যিই যদি ওই সুপারিশ করা না-হয়, ‘অ্যাক্সিলারেটেড ডেভেলপমেন্ট অব মাইনর ইরিগেশন’ নামে গোটা প্রকল্পটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
অগস্টের ১৮ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ১১ দিন ধরে রাজ্যের ১৮টি জেলায় ১.৩৯ লক্ষ হেক্টর এলাকায় ৪৬৬০টি ক্ষুদ্রসেচ প্রকল্পের অগ্রগতি ঘুরে দেখেন বিশ্বব্যাঙ্কের ১৪ জন প্রতিনিধি। ওই সব প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের খেতে জল সরবরাহ করা। কথা ছিল, ২০১২ থেকে ’১৭ সালের মধ্যে প্রকল্পগুলি চালু হয়ে যাবে। কিন্তু প্রথম দু’বছরে কাজ প্রায় হয়ইনি। চলতি আর্থিক বছরেরও পাঁচ মাস কেটে গিয়েছে। কাজের গতি অত্যন্ত শ্লথ। রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের সঙ্গে দেখা করে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় চাষ-আবাদের উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাঙ্ক আরও প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা সহায়তা দিতে প্রস্তুত। তবে তা নির্ভর করছে বর্তমান প্রকল্পগুলির কাজের গতির উপরে। কিন্তু নিজেরা ঘুরে ঘুরে কাজের যে-অগ্রগতি দেখলেন, তাতে তাঁদের পক্ষে আগামী দিনে ওই সব প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করা সম্ভব হবে না।
‘অ্যাক্সিলারেটেড ডেভেলপমেন্ট অব মাইনর ইরিগেশন’ প্রকল্পে বিশ্বব্যাঙ্ক ১৩৮০ কোটি টাকা মঞ্জুর করে ২০১১ সালে। কাজ শুরু হয় ২০১২-র ১৯ মার্চ। বিশ্বব্যাঙ্কের সঙ্গে চুক্তিতে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, ২০১৭-র ৩১ ডিসেম্বর ৪৬৬০টি প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। সম্প্রতি ১০ দিন ধরে বিশ্বব্যাঙ্কের যে-প্রতিনিধিদল রাজ্য সফর করেছে, তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জলের উৎস বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অঞ্জু গওর। গত এপ্রিলেও এই দলটি সফরে এসেছিল। তখনও জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে অসন্তোষের কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন ওই দলের প্রতিনিধিরা। দলের নেত্রী বিশ্বব্যাঙ্কে যে-রিপোর্ট দেন, তাতে বলা হয়, ২০১২-য় ক্ষুদ্রসেচের এই প্রকল্প শুরু হয়েছে। ২০১৭-র ৩১ ডিসেম্বর তা শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি আদৌ সন্তোষজনক নয়।
পরিস্থিতি যে মোটেই অনুকূল নয়, জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেনবাবুও তা স্বীকার করে নিচ্ছেন।
বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের সফর সম্পর্কে তিনি বলেন, “কাজের অগ্রগতি নিয়ে ওঁরা অসন্তোষ জানিয়েছেন। কাজ ঠিকঠাক না-হলে পরের প্রকল্পে টাকা দেওয়ার সুপারিশ তাঁরা করতে পারবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।”
কিন্তু দু’বছরে কাজ হয়নি কেন?
জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের ইঞ্জিনিয়ার-ইন-চিফ কিশোরকুমার নাগচৌধুরীর বক্তব্য, সরকারি উন্নয়নমূলক কাজ যে-ভাবে হয়ে আসছে, বিশ্বব্যাঙ্কের কাজ তেমন ভাবে হয় না। বিশ্বব্যাঙ্ক চায়, ৪৬৬০টি প্রকল্পে স্থানীয় চাষিদের নিয়ে সোসাইটি তৈরি করে সামাজিক উন্নয়নের কাজ হোক। তার জন্য স্থানীয় মানুষদের উদ্বুদ্ধ করা দরকার। “সেই কাজ করতে আমাদের খুবই দেরি হয়েছে। তবে এখন তা করে ফেলেছি,” স্বীকারোক্তির পরেই দাবি কিশোরবাবুর। ওই সরকারি কর্তা জানান, বিশ্বব্যাঙ্ক নতুন নতুন মাপকাঠি তৈরি করে দিতে থাকায় তা মানতে গিয়েও কিছু দেরি হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy