Advertisement
E-Paper

বারো বছর বাদে

আবার প্রসেনজিৎ-অর্পিতা বড় পর্দায় একসঙ্গে। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তকলকাতার আকাশরেখা জুড়ে আজকাল দু’টো হোর্ডিং। দুটোতেই প্রসেনজিৎ। একটা টেলিভিশন শো-য়ের। সেখানে প্রসেনজিতের দোসর রচনা। অন্যটা গয়নার বিজ্ঞাপন। সেখানে ‘রোজ রোজ শুভদৃষ্টি’র প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন স্ত্রী অর্পিতা। দুটো হোর্ডিং দেখে নানা প্রশ্ন চার দিকে। শহরজোড়া এই হোর্ডিংগুলোতে কোন অভিনেত্রীর সঙ্গে প্রসেনজিতের রসায়ন বেশি জমেছে?

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৪ ০০:৩০
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল; প্রসেনজিতের মেক আপ: সুভাষ বেরা; অর্পিতার মেক আপ আর স্টাইলিং: অনিরুদ্ধ চাকলাদার; অর্পিতার হেয়ার স্টাইলিং: শেখর অধিকারী

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল; প্রসেনজিতের মেক আপ: সুভাষ বেরা; অর্পিতার মেক আপ আর স্টাইলিং: অনিরুদ্ধ চাকলাদার; অর্পিতার হেয়ার স্টাইলিং: শেখর অধিকারী

কলকাতার আকাশরেখা জুড়ে আজকাল দু’টো হোর্ডিং।

দুটোতেই প্রসেনজিৎ।

একটা টেলিভিশন শো-য়ের। সেখানে প্রসেনজিতের দোসর রচনা।

অন্যটা গয়নার বিজ্ঞাপন। সেখানে ‘রোজ রোজ শুভদৃষ্টি’র প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন স্ত্রী অর্পিতা।

দুটো হোর্ডিং দেখে নানা প্রশ্ন চার দিকে। শহরজোড়া এই হোর্ডিংগুলোতে কোন অভিনেত্রীর সঙ্গে প্রসেনজিতের রসায়ন বেশি জমেছে? অর্পিতার সঙ্গে প্রসেনজিৎ যদি ওই শো-টা অ্যাঙ্কর করতেন, তা হলে কেমন হত... ইত্যাদি।

তবে যে প্রশ্নটা সব থেকে বেশি করা হয়েছে, তা হল বিজ্ঞাপনে কাজ তো হল, বড় পর্দায় প্রসেনজিৎ-অর্পিতাকে আবার একসঙ্গে এ ভাবে কবে দেখা যাবে?

আর সেখানেই এ বার নতুন চমক। অপেক্ষা আর বেশি দিনের নয়। টালিগঞ্জের দম্পতি নম্বর ওয়ান আবার ফিরছেন বড় পর্দায়। বারো বছর পর আবার একসঙ্গে ছবি করছেন। পরিচালক রাজা চন্দ। ছবির নাম ‘ফোর্স’। আগামী মে থেকেই শ্যুটিং শুরু। ছবির প্রযোজক এসেল ভিশন প্রোডাকশনস। সহ-প্রযোজক এনআইডিয়াজ।

মঙ্গলবার সকালে বালিগঞ্জের বাড়িতে বসে আড্ডা দিতে দিতে প্রসেনজিৎ বললেন, “‘জাতিস্মর’-য়ে কুশল হাজরার ভূমিকায় আমার অভিনয় দেখে আমাকে একজন বললেন, ‘আপনি আর চ্যালেঞ্জিং রোল করবেন না। আর নিতে পারছি না।’ ও খুব সহজ ভাবে আমাকে এটাই বলল যে এই ছবিতে আমার অভিনয়টা আমি একটা অন্য পিচ-য়ে নিয়ে গিয়েছি। ‘জাতিস্মর’-য়ের পর পরমব্রতর ছবিটার শ্যুটিং শুরু করলাম। এর মধ্যে টেলিভিশনে ‘তুমি যে আমার’ করলাম...”

আর সেই শো-য়ের প্রতিযোগী এবং দর্শকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এক অন্য রকমের অনুভূতি হল তাঁর। আর তা হল এক শ্রেণির দর্শক এখনও তাঁর কাছ থেকে একটা অন্য ধরনের বিনোদন খোঁজে। “আজও যে কোনও শো করতে গেলে ‘অমরসঙ্গী’ আর ‘কেওড়া’র গানের অন্তত তিনটে অনুরোধ আসবেই। স্টেজে উঠলে আজও শুনতে পাই ‘গুরু, একবার একটু ঢিসুম ঢিসুম হয়ে যাক?’ যত এই অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে, ততই মনে হয় আবার যদি একটু অন্য রকমের সিনেমা করা যায়। ঠিক অনিল কপূর এখন যে ভাবে বলিউডে মেনস্ট্রিম ছবি করছেন...” বলছেন প্রসেনজিৎ।

একসঙ্গে অভিনয় করলেও
খাবার টেবিলে বসে স্ক্রিপ্ট
নিয়ে আলোচনা করব না

অর্পিতা

স্টেজে উঠলে আজও শুনতে
পাই ‘গুরু, একবার একটু
ঢিসুম ঢিসুম হবে?’

প্রসেনজিৎ

শুরু হয় গল্পের খোঁজ। ঠিক হয় প্রসেনজিৎকে নায়কের ভূমিকায় রেখে তৈরি হবে একটা অ্যাকশন থ্রিলার। তবে তা মোটেই বানানো হবে না ‘বিক্রম সিংহ’-র মতো করে। কোনও ব্রেনলেস এন্টারটেনার নয়। গান থাকবে। কিন্তু রোম, প্যারিসের ব্যাকড্রপে নয়। একেবারে কলকাতা আর মফস্সলে শু্যটিং। আর পুরোটাই অর্থপূর্ণ বিনোদনের জন্য। আর তা করতে গিয়ে অ্যাকশন ছবির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে ‘তারে জমিন পর’য়ের সংবেদনশীল মননের আবেদন।

এসেল ভিশন-য়ের নীতিন কেনি এর আগে বলিউডে অনেক ছবি প্রযোজনা করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম ছবি হল ‘গদ্দার’। তিনি বলছেন, “কুড়ি বছর ধরে প্রসেনজিৎকে চিনি। আমি নিজে পড়াশুনো করেছি আইআইএএম কলকাতাতে। তাই কলকাতাতে ভাল ছবি প্রযোজনা করার স্বপ্নটা চিরকালই ছিল। ‘ফোর্স’-য়ের স্ক্রিপ্টটা দারুণ! তার সঙ্গে উপরি পাওনা হল অর্পিতা-প্রসেনজিৎ আবার একসঙ্গে কাজ করবেন এ ছবিতে।”

পেশাগত ভাবে এ ছবিতে প্রসেনজিতের চরিত্রের সঙ্গে ‘অব তক ছপ্পন’য়ের নানা পটেকরের চরিত্রের মিল রয়েছে। একেবারে যাকে বলে আপসহীন নির্ভীক পুলিশ অফিসার। কিন্তু তাঁর মন অত্যন্ত সংবেদনশীল। সিঙ্গল ফাদার, যিনি তাঁর অটিস্টিক বাচ্চাকে মানুষ করছেন।

প্রসেনজিতের সঙ্গে শেষ ছবি করেছিলেন অর্পিতা ২০০২-য়ে। বিয়ের আগে। অনুপ সেনগুপ্তর ‘ইনক্লাব’। এক ডজন বছর পর আবার একসঙ্গে। টেনশন হচ্ছে না? এ প্রসঙ্গে অর্পিতা বলছেন, “বুম্বাদা তো আমার দেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের মধ্যে একজন। পেশাদার অভিনেত্রী হয়ে তাই ওর সঙ্গে কাজ করার এ রকম সুযোগ পেয়ে আমার ভাল লাগছে।”

রাজা এর আগে মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিই পরিচালনা করে এসেছেন। তাঁর কাছেও এমন একটা ছবি বানানোটাও বেশ চ্যালেঞ্জিং। ফিল্ম কেরিয়ারে প্রথম ছবি করেছেন মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে। তার পর দেবের সঙ্গে ‘রংবাজ’, ‘চ্যালেঞ্জ ২’। সদ্য জিতের সঙ্গে শেষ করেছেন ‘বচ্চন’। “বলিউডে যখন ‘শু্যটআউট অ্যাট ওয়াডালা’ দেখেছি, তখন মনে হয়েছে আমরাও কেন এই রকম সিনেমা করি না। বহু বছর ধরে বুম্বাদার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে ছিল। ‘ফোর্স’ ছবিটা মূলধারার ঘরানায় বানানো হবে। সিঙ্গল স্ক্রিনে যাঁরা প্রসেনজিতের ছবি দেখতে ভালবাসতেন, তাঁদের মাথায় রেখে ছবিটা বানানো। গান থাকবে। কিন্তু তা ড্রিম সিকোয়েন্স হিসেবে আসবে না। স্টাইলাইজড মেকিং হবে।”

দেব-য়ের নির্বাচনে দাঁড়ানোর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মূলধারার ছবির অনেক দর্শকই খানিকটা চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। রাজনীতির চাপে দেব যে ধরনের মূলধারার ছবি করে এসেছেন, তার সংখ্যা যদি কমে যায়, তা হলে তাঁদের বিনোদনের কী হবে? “দেব বা জিৎ যে ধরনের বাণিজ্যিক ছবি করে, তা কিন্তু আমি এখন আর করতে চাই না। হ্যাঁ, আমি এক শ্রেণির দর্শকের কাছে পৌঁছতে চাই ঠিকই। তবে যে ভাবে তাঁদের বিনোদন দিতে চাই, তার ধরনটা একটু আলাদা,” বলছেন প্রসেনজিৎ।

পরিচালক বলছেন যে, প্রসেনজিৎ অভিনীত এই পুলিশ অফিসারের সঙ্গে ‘বাইশে শ্রাবণ’য়ের প্রবীর রায়চৌধুরীর কোনও মিল নেই। “সৃজিতের ছবিতে বুম্বাদাকে একটা অদ্ভুত টোনে আমরা পেয়েছি। খানিকটা স্বেচ্ছাচারী। আবার তিনি নিজেও একটা মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় ভুগতেন। আমাদের সিনেমায় বুম্বাদা পুলিশের ভূমিকায় থাকলেও তাঁর চরিত্রটা একেবারেই আলাদা,” বলছেন পরিচালক।

রাজার আরও বেশি সুবিধে হল তিনি প্রসেনজিৎ-অর্পিতার সঙ্গে ওই গয়নার বিজ্ঞাপনটাও পরিচালনা করেছেন। সেটা করতে গিয়েই প্রথম বুঝেছিলেন কী ভাবে অভিনেতা হিসেবে নিজেকে ভেঙেচুরে গড়ে তুলেছেন প্রসেনজিৎ।

তবে আগে থেকেই একটা বিষয়ে সতর্ক করে দিতে চান পরিচালক। এ ছবিতে কিন্তু প্রসেনজিৎ-অর্পিতা স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকায় থাকছেন না। এমনকী সে অর্থে অর্পিতাকে প্রেমিকাও বলা যাবে না। ‘ফোর্স’য়ে অর্পিতা এক স্কুল শিক্ষিকা। খুব আত্মবিশ্বাসী এক চরিত্র। যার জীবনে মূল্যবোধের একটা দৃঢ় জায়গা রয়েছে। “গল্পটা এমন ভাবে এসেছে যে, বোঝাই যাবে দুজনের মধ্যে প্রেমে পড়ার জায়গা ছিল। কিন্তু তা হল না। না বলেও তো অনেক সম্পর্ক বোঝানো যায়,” বলছেন পরিচালক।

প্রেমিকা না হয়ে হয়তো বা অর্পিতা হয়ে উঠবেন ‘ছোট্ট জিজ্ঞাসা’র সেই মাধবী মুখোপাধ্যায়, যিনি কিনা মা না হয়েও মা হয়ে যান।

আর এই চ্যালেঞ্জিং রোলে অভিনয় করার জন্য অর্পিতা তাঁর নিজের মতো করে হোমওয়ার্ক করবেন। ইতিমধ্যেই তিনি ঠিক করেছেন যে চিত্রনাট্যটা পড়ে তার পাশে আবার কিছু প্রশ্ন লিখে রাখবেন। “যে কোনও ছবির আগেই আমি এ ভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করি। চিত্রনাট্যের পাশে আমি এক, দুই, তিন, চার করে কিছু প্রশ্ন লিখে ফেলি। তার পর এগুলোর উত্তর খুঁজে নিই পরিচালকের কাছে। এতেই অনেক স্বচ্ছতা এসে যায়। তবে স্বামী-স্ত্রী এক ছবিতে অভিনয় করছি বলে এটা ভাববেন না যে, আমরা বাড়িতে খাবার টেবিলে বসে স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনা করব। ঠিক পেশাদার অভিনেতারা যে ভাবে স্ক্রিপ্ট-রিডিং করেন, এ ছবির ক্ষেত্রেও তা-ই হবে,” বলছেন তিনি।

আর দর্শকের প্রত্যাশা?

শুধু এক ভাল অভিনেতার সঙ্গে কেমন তালে তাল মিলিয়ে অভিনয় করলেন, তা নয়। টলিউডের নাম্বার ওয়ান দম্পতিকে বড় পর্দায় কেমন দেখতে লাগল এ নিয়ে দর্শকের কৌতূহল কী ভাবে সামলাবেন তিনি? “যদি অভিনয়ের কাজটা ১০০ শতাংশ ভাল করে করি, তা হলে অন্য ব্যাপারটা নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না,” স্পষ্ট জবাব অপির্তার।

এ দিকে ‘তুমি যে আমার’ শো-তে রচনার সঙ্গে প্রসেনজিতের রসায়ন নিয়ে অনেক চর্চাই হচ্ছে। কেমন লেগেছে তাঁর? “আমাকে এ নিয়ে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছেন। শো-টার মাঝে আমাদের ওই গয়নার বিজ্ঞাপনটাও দেখানো হচ্ছে। তা দেখে আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছেন যে যেহেতু শো-টা দম্পতিদের নিয়েই, আমি কেন বুম্বাদার সঙ্গে শো-টা অ্যাঙ্কর করিনি। আমি বলেছি, ‘জি’ আমাকে তা করতে বলেনি। তবে আমি চ্যানেলের এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করি। ‘দিদি নম্বর ১’ করে রচনা টিভিতে দারুণ জনপ্রিয়। বুম্বাদার সঙ্গে ওর কত হিট ছবি! রচনাকে শোতে দারুণ মানিয়েছে। আর শো-টা যে শ্রেণির দর্শকদের জন্য বানানো, তাদেরও বেশ ভাল লাগছে

বলেই শুনেছি। তবে আমি নিজে ওই ধরনের দর্শকদের মধ্যে পড়ি না।

তাই একটা এপিসোডের পর আর দেখিনি।”

তা, ছেলে তৃষাণজিৎ কি জানে এই প্রোগ্রামের কথা? বা এই নতুন সিনেমার কথা, যেখানে বাবা-মা একসঙ্গে কাজ করবেন? প্রশ্ন শুনে হেসে প্রসেনজিৎ বলেন, “তৃষাণজিৎ একদম বাপ কা বেটা। মনে হয় না, ও রচনার সঙ্গে আমার এই শো-টার কথা জানে। আমি কার সঙ্গে কাজ করছি, তা নিয়ে ওর মাথাব্যথা নেই। তবে অর্পিতাকে নিয়ে ও ভীষণ পোজেসিভ। ঠিক যেমন ছেলেরা হয়, তাদের মাকে নিয়ে। মায়ের ছবির নায়কের নাম শুনে এ বার ও বেশ আশ্বস্ত হবে!”

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy