Advertisement
E-Paper

যব ছোড় চলে ফেলুদা-নগরী

লখনউতে ‘বাদশাহী আংটি’র সেটে থেকে নতুন ‘ফেলুদা’ আবিরের ধুকপুকুনি বাড়াতে চাননি সব্যসাচী চক্রবর্তী। সদ্য পুরনো হয়ে যাওয়া ফেলুদার মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায়।ইমামবড়ার সামনে আবির ছুটছেন, চওকে মারামারি করছেন, সব্যসাচী চক্রবর্তীর মন কি লখনউতে? না, মন কলকাতায়। একবার যখন ফেলুদা করব না ঠিক করে নিয়েছি, তখন হাহুতাশ করে তো কোনও লাভ নেই। আর আমি তো রিগ্রেটফুলি ছাড়িনি, ছেড়েছি লজিক্যালি। পনেরোটা ফেলুদা তো করলাম, ১০টা টেলিভিশনে, ৫টা বড় স্ক্রিনে। তার পর আর হিংসুটের মতো পড়ে থাকার মানে হয় না। দাঁত পড়ে যাচ্ছে, ভুঁড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাও ফেলুদাকে আঁকড়ে থাকার মধ্যে একটা স্বার্থপরতা আছে। একটা কুচুটেপনা আছে। আমি ওই লোভীটা হতে চাই না।

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৮:৩০

ইমামবড়ার সামনে আবির ছুটছেন, চওকে মারামারি করছেন, সব্যসাচী চক্রবর্তীর মন কি লখনউতে?
না, মন কলকাতায়। একবার যখন ফেলুদা করব না ঠিক করে নিয়েছি, তখন হাহুতাশ করে তো কোনও লাভ নেই। আর আমি তো রিগ্রেটফুলি ছাড়িনি, ছেড়েছি লজিক্যালি। পনেরোটা ফেলুদা তো করলাম, ১০টা টেলিভিশনে, ৫টা বড় স্ক্রিনে। তার পর আর হিংসুটের মতো পড়ে থাকার মানে হয় না। দাঁত পড়ে যাচ্ছে, ভুঁড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাও ফেলুদাকে আঁকড়ে থাকার মধ্যে একটা স্বার্থপরতা আছে। একটা কুচুটেপনা আছে। আমি ওই লোভীটা হতে চাই না।

একটুও খারাপ লাগছে না?
না, খারাপ লাগছে না। অবশ্যই এক্সপেরিয়েন্সটা মিস করছি। এই আনন্দplus-এ শ্যুটিং কভারেজ পড়ে মনে হল, চেনা ইউনিটটা শ্যুটিং করছে। ব্যস, এই অবধি।

কিন্তু অবসর নেওয়ার মধ্যে তো একটা দুঃখ আছে, সচিন নিশ্চয়ই অবসর নিয়ে খুশি হননি?
কিন্তু আমি তো ফেলুদা থেকে একেবারে অবসর নিইনি। স্টেজে তো আজও ফেলুদা করছি। ‘অপ্সরা থিয়েটারের মামলা’। ৯৮টা শো হয়ে গেছে। আর দু’টো করলে সেঞ্চুরি।

বড় পর্দায় ফেলুদার পরে মঞ্চে ফেলুদা মানে তো রঞ্জি ট্রফি খেলা।
সেটা ঠিক। কিন্তু তাও প্রত্যেকটা শোতে ৫০০-৬০০ মানুষ আমাদের শো দেখছেন। স্টেজে তোপসে করে আমার ছেলে, মানুষ তা পছন্দ করেন। আসলে কী বলুন তো, আমার ফেলুদা ছাড়ার প্রধান কারণ আমার ভুঁড়ি।

আপনি তো ফিটনেস নিয়ে খুব সচেতন। ভুঁড়ি কমালেন না কেন?
পারলাম না... আর কনট্রোল করতে পারলাম না। শুরু হয়েছিল একটা ক্রিকেট ম্যাচ খেলা থেকে। নিজের বয়স বিবেচনা না করেই খেলতে নেমেছিলাম। কিন্তু হল কী, আমার অ্যাকিলিস টেন্ডনটা ছিঁড়ল। ব্যস, দু’মাস পুরো বেড রিডেন। তারপর শুরু হল অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া। আর সেই সঙ্গে সঙ্গে ঘি, মাখন সব কিছু নিয়ে ভুঁড়িটা বেড়ে গেল।

ভুঁড়ি কনট্রোলে আনতে পারলে লখনউতে দেখা যেত আপনাকে?
হ্যাঁ, বোধহয়। আর বাকি জিনিসগুলো কনট্রোল করা যায়। ধরুন চুল পেকে গেলে ডাই করা যায়। আমার ডাবল চিন ঢাকতে ক্যামেরা অ্যাঙ্গল চেঞ্জ করাই যায়। কিন্তু ভুঁড়িটা সামলাব কী করে? করসেট-টরসেট পরে কিছু একটা করা যেত, কিন্তু তাতে অ্যাক্টিংয়ের থেকে হাঁসফাঁসটা বেশি হত। (হাসি)

লখনউতে শ্যুটিংয়ের মধ্যে কিন্তু সন্দীপ রায়, ললিতা রায় দু’জনেই বলছিলেন ওঁরা আপনাকে মিস করছেন।
আমিও তো সাঙ্ঘাতিক মিস করছি। সকালে উঠে ওই যে পুনুকাকু হোটেলের ঘরের বাইরে বলতেন, ‘পাখি সব করে রব...’, ওই ব্যাপারটার মধ্যে একটা অদ্ভুত মেজাজ আছে। সুব্রতকাকুরও সবদিকে নজর থাকে। ওই আন্তরিকতাটা, লাঞ্চটাইমে আড্ডাটা মিস করছি। তবে চয়েস অব ফেলুদাতে আমি খুশি। আবির ইজ আ গ্রেট চয়েস।

আবিরের নাম নাকি আপনিই প্রথম বলেছিলেন সন্দীপ রায়কে?
হ্যাঁ, আবির যে ফেলুদা হতে পারে আমি বাবুদাকে জানিয়েছিলাম। আর ওই ইউনিটে পুনুকাকু আর সুব্রতকাকু এত যত্ন নিয়ে কাজ করেন যে, ওঁরা আবিরকে ঠিক গাইড করে দেবেন। আর সবার উপর বাবুদা তো রয়েইছেন।
ছোট ছোট ব্যাপারে বাবুদার তীক্ষ্ন নজর থাকে। আবিরকে ওঁরা ঠিক কোচিং করিয়ে নেবেন।

আবির ছাড়া আর কারও কথা মনে হয়নি, যে আপনাকে রিপ্লেস করতে পারত?
টোটা ছিল, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত ছিল। কিন্তু ফেলুদা করতে হলে ওই ছ’ফুট দুই-টা চাই। উচ্চতা না হলে ফেলুদা মনে হবে না। ওই প্রবলেমের জন্যই বোধহয় ওদের কাস্ট করলেন না বাবুদা।

শ্যুটিংয়ে যাওয়ার আগে আবির আপনার সঙ্গে কথা বলেছিলেন?
আমরা জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ‘আগুন’ ছবির শ্যুট করছিলাম, যখন আবির এসে আমাকে বলে যে, ও ফেলুদা করছে। এমনকী গত সপ্তাহে আনন্দplus শ্যুটিং কভারেজ পড়ে আমি কনগ্র্যাটস জানিয়ে হোয়াটস্অ্যাপ করেছিলাম আবিরকে। বেশ কিছুক্ষণ হোয়াটস্অ্যাপ চলল। আবির ভীষণ ইন্টেলিজেন্ট ছেলে।

মানে প্রিমিয়ারের দিন লাইনে দেখা যেতে পারে সব্যসাচী চক্রবর্তীকে?
ওহ্, ইয়েস। অবশ্যই।

আচ্ছা, আজও তো যেখানেই যান, লোকে আপনাকে ফেলুদা বলেই ডাকে?
হ্যাঁ হ্যাঁ। সে কিছু পাগল ফ্যান আছে যারা আপনাকে একটা বিশেষ চরিত্রের সঙ্গে আইডেন্টিফাই করে ফেলে। আগে যেমন সবাই আমাকে ‘গোরা’ বলত। তারপর শুরু হল ‘ফেলুদা’। তবে আমাকে কেউ ফেলুদা বললে, আমি বলি, আমি ফেলুদা নই। ফেলুদা একজন, এবং তাঁর নাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। হি ওয়াজ অ্যান্ড উইল অলওয়েজ রিমেন দ্য বেস্ট ফেলুদা।আমি তো দু’নম্বরি (হাসি)।

আর আবির?
ওই যে বললাম, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিল বেস্ট ফেলুদা। আর আবির আমার থেকে অনেক ভাল ফেলুদা হবে।

আপনি গেলেন না কেন লখনউতে?
আমি যদি লখনউ যেতাম সেটা আবিরের জন্য ট্যাক্সিং হয়ে যেত। আমার মনে আছে, ‘অম্বর সেন অন্তর্ধান রহস্য’তে সৌমিত্রবাবু অভিনয় করেছিলেন। আমি তো ওঁকে দেখেই স্টিফ হয়ে গিয়েছিলাম। বুকের ভিতর একটা ধুকপুক হচ্ছিল। এটা হবেই। আর আমি চাই না আবিরের ক্ষেত্রে সেটা হোক। তাই জন্যই লখনউ গেলাম না।

আচ্ছা আবির তো ব্যোমকেশ থেকে ফেলুদা করলেন, আপনি ব্যোমকেশ করতে চান না?
না, আর কোনও গোয়েন্দার চরিত্র করতে চাই না। না ফেলুদা, না ব্যোমকেশ, না কিরীটী রায়। একমাত্র একটা ডিটেকটিভ করার ইচ্ছে আছে। সেটা হল ‘রুদ্র সেনের ডায়েরি’। বাকি আর কেউ না। বাই বাই ডিটেকটিভ।

ফেলুদা বাই বাই...
হ্যাঁ, বাই বাই... ফেলু।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy