Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভয় দেখালেন বিরসা

ভাল অভিনয় করেছেন সোহম চক্রবর্তী। তবে ছবিটা দৈর্ঘ্যে একটু ছোট হতে পারত। লিখছেন সংযুক্তা বসু

ভাল অভিনয় করেছেন সোহম চক্রবর্তী। তবে ছবিটা দৈর্ঘ্যে একটু ছোট হতে পারত। লিখছেন সংযুক্তা বসু
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ২১:২৯
Share: Save:

ধরুন আপনি একজন পিৎজা ডেলিভারি শপের কর্মী। একেবারে গোবেচারা জীবন। নুন অনতে পান্তা ফুরানো।

মাইনে আট হাজার টাকা। একদিন পিৎজা ডেলিভারি করতে গেলেন এমন এক বাড়িতে যার মালকিন পিৎজা হাতে নিয়ে দোতলায় উঠে গেলেন টাকা আনতে। আর তার পরেই লোডশেডিং।

তার পর? সাঙ্ঘাতিক সব কাণ্ড। দেওয়ালে চোখ পড়তে মোমবাতির আলোয় ভেসে উঠল ভয়বাবহ এক নারীর মুখ। যেন প্রেতিনী। শো-পিস হিসেবে রাখা মূর্তিগুলোকে দেখে মনে হতে লাগল ভয়ঙ্কর সব অবয়ব। একটা পুতুলের ঠোঁটের কোনায় রক্ত ঝরছে।

কিন্তু বাড়ির মালকিনের দেখা নেই। দেখা নেই তো দেখা নেই। আপনার গা হাত পা ঘামছে। ছমছম করছে শরীর। ঝনঝন করে বাড়ির কাচে শব্দ হচ্ছে। মুখ দিয়ে কোনও কথা বেরোচ্ছে না। দম আটকে আসছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে দেখলেন মালকিনকে খুন করে দেওয়ালে ঝুলিয়ে রেখে চলে গিয়েছে আততায়ী। তাঁর সারা শরীর রক্তে ভাসছে।

কী করবেন? পিৎজার টাকাটার জন্য অপেক্ষা করবেন, নাকি রামনাম করে কেটে পড়বেন? কিন্তু কেটে পড়বেন কী করে? লোডশেডিংয়ের অন্ধকারে সদর দরজাটার ল্যাচ খোলা যাচ্ছে না। অমনি হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। বাড়ির ল্যান্ডফোন। সেই ফোনের ওপ্রান্তে কথা বলছেন আপনারই স্ত্রী।

কী করে তিনি ওই অদ্ভুত বাড়ির সন্ধান পেলেন? কী করেই বা আপনার মোবাইলে ফোন না করে ভুতুড়ে বাড়ির ল্যান্ড লাইনের ওপ্রান্ত থেকে অশরীরী আত্মার মতো কথা বলছেন?

হয়, হয়।

সবই হয়।

যেখানে ভূতের ভয়, সেখানে সন্ধে হয়।

কমার্শিয়াল রিমেক বলে ছুৎমার্গ দেখানোর কোনও যে মানেই নেই সেটাই প্রমাণ করলেন পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত।

‘গল্প হলেও সত্যি’ দেখে বাঙালি দর্শক যে রুদ্ধশ্বাস, তা হলের পিনপতন নৈঃশব্দ্যের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে মাঝে মাঝে ফিসফাস কানে আসছিল। আর তাতেই বোঝা যাচ্ছিল দর্শক ভয় পাচ্ছেন। ভয় পেতে ভালবাসছেন। এবং ‘গল্প হলেও সত্যি’ কিন্তু ভূতের ভয় পাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। অবশ্যই এখানে একটা কথা বলে রাখতে হয়, যাঁরা ভূত নিয়ে ভয়ে থাকতে ভালবাসেন তাঁদের জন্য এ ছবি এক কথায় চমৎকার ভয় দেখাবে।

আর যাঁদের কাছে যেখানে ভূতের ভয় সেখানে সন্ধে হয় না, তাঁরা দেখবেন একটা ‘অফবিট’ ঘোস্ট-থ্রিলার। তাঁরা পাবেন থ্রিলারের মজা। কিন্তু প্রশ্ন একটাই। রামগোপাল বর্মার ‘ভূত’ বা ‘ডরনা মানা হ্যায়’ ‘ডরনা জরুরি হ্যায়’ দেখে যে রুদ্ধশ্বাস ভীতি জাগে এবং তা সব ধরনের দর্শককে রোমাঞ্চিত করে তা কিন্তু হয়নি। প্রথম কথা ছবিটা দৈর্ঘ্যে আরও ছোট হতে পারত। ভয় দেখানোর জায়গাগুলো আরও শিহরন তৈরি করতে পারত। হয়তো তামিল ‘পিৎজা’ ছবির সার্বিক অনুসরণ করতে গিয়ে সেই সূত্র ছিন্ন হয়েছে।

তবে প্রাপ্তি এইটাই যে বাংলা সিনেমায় সাম্প্রতিক কালে এই ধরনের ভয় দেখানো ভূতের ছবি হয়নি। যদিও চেষ্টা হয়েছে পর পর...পর পর। এবং দুঃখের বিষয় সে সব ছবি দেখে দর্শক হাসতে হাসতে বেরিয়ে এসেছেন হল থেকে। ভুতুড়ে ছবির আনাড়ি, কাঁচা স্পেশাল এফেক্ট টলিউডি ছবিতে এতই অসঙ্গতিপূর্ণ, মেলোড্রামাটিক, চড়া দাগের, যে না হেসে উপায় থাকে না। ব্যতিক্রম ছিল ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’। কিন্তু সে তো ভাল ভূতেদের গল্প। একটা ফ্যান্টাসি। ভূত নিয়ে একটা কাল্ট ফিল্ম। যেখানে ছিল মজা, কথায় কথায় পানিং, ছিল সামাজিক বার্তা, বুদ্ধিদীপ্ততার চূড়ান্ত চমক।

মূল তামিল সুপারন্যাচেরাল থ্রিলার ছবির গল্পের লেখক ও পরিচালক কার্তিক সুব্বারাজ যে ছবিটা বানিয়েছিলেন তা অসাধারণ প্রশংসাধন্য হয়েছিল ট্রিটমেন্টের মৌলিকতার জন্য। বিরসাও তাঁর ‘গল্প হলেও সত্যি’তে মৌলিকতা রাখার চেষ্টা করেছেন চরিত্রচিত্রণে। যেমন এ ছবির নায়িকা মিমি চক্রবর্তী ভূত নিয়ে গবেষণা করেন এবং ভূতের গল্প লেখেন। আর তার উল্টো দিকে তাঁর স্বামী এবং এ ছবির নায়ক সোহম চক্রবর্তী নিছক ‘নন্টেফন্টে’ পড়ে বড় হয়েছেন। এই মিলনটার মধ্যেই এক ধরনের বঙ্গীয় কল্পনাবোধ আছে।

নতুন এক ভঙ্গিতে ভূতের গল্প পেশ করেছেন বিরসা, যার মধ্যে রয়েছে অভিজ্ঞতার লালন। উচ্চগুণমানের হরর-সাসপেন্স তৈরির সব ক’টা তাসই তিনি ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন নিজের মতো করে। শুভঙ্কর ভড়ের ক্যামেরায় প্রায় প্রতিটা শট টেকিং তৈরি করেছে রোমাঞ্চকর মেজাজ। তবে বোধাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনা আর একটু যেন টানটান হতে পারত।

এ ছবিতে তথাকথিত রোমান্টিক ছবির ইমেজ ভেঙে সোহম আবার নতুন এক ফর্মে। অভিনেতা হিসেবে তিনি যে জোরালো তার প্রমাণ আগেও পেয়েছি ‘অমানুষ’ ছবিতে। সেই প্রতিভার আর এক বিচ্ছুরণ হয়ে রইল পিৎজা শপের নিরীহ গোবেচারা কর্মীর চরিত্রে তাঁর পারফর্ম্যান্স। পিৎজা দোকানের মালিকের ভূমিকায় রজতাভ দত্তের অভিনয়ের বাঁকঝোঁক, চলন, হাসি সবেতেই লুকিয়ে আছে এক ধরনের ঘাগু বাঙালি রহস্যময়তা। ততটাই সুঅভিনয় পিৎজা দোকানের কর্মী হিসেবে সুজন মুখোপাধ্যায় ও দেবপ্রতিম দাশগুপ্তের।

ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সঙ্গীত ভারি সুন্দর। ভূতের ছবির আবহে তিনি চমৎকারিত্ব দেখাবার চেষ্টা করেছেন। মানে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বেশ ভয় দেখায়। যাঁরা তামিল ‘পিৎজা’ ছবিটা দেখেননি তাঁদের জন্য ছবির শেষে রয়েছে চমক।

কিন্তু শেষের আগে তো শুরু। ধরুন যে বাড়ির মালকিনকে নিহত অবস্থায় দেওয়ালে ঝুলতে দেখছেন, সেই বাড়িতে হঠাৎ পুলিশ ঢুকল। পুলিশ ঢুকে বলল, “এ বাড়ির সবাই খুন হয়ে গিয়েছে সাত দিন আগে। এবং আরও একজন খুন হয়েছে বাগানে। তাও সাত দিন আগে।”

কে তিনি?

জানলেন তার নাম অনু। বাড়ি শিলিগুড়ি। আপনি ঘাবড়ালেন। কারণ আপনার বউয়ের নাম অনু। বাড়ি শিলিগুড়ি। সেই মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। আপনার স্ত্রীও তো তাই!

কিন্তু একটু আগে অনু যে বাড়ির ল্যান্ডলাইনে কথা বলল। বলল পুলিশ নিয়ে সে আসছে।

আরে, ফোনটার লাইন তো কাটা ছিল! তা হলে অনু কী করে কথা বলল? হাড়হিম হয়ে যাচ্ছে আপনার...তা হলে অনু কি মারা গেছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE