Advertisement
E-Paper

জিৎ আমার বন্ধু, দেব আমার ভাই

কোটি ক্লাবের হিরোদের লিপে গান নেই বলে কোনও আফসোস নেই ‘হিট গ্যাঙ্গুলি’র। জিৎ আর দেব নিয়ে খোলাখুলি আনন্দ প্লাসকে বললেন ‘বস টু’ আর ‘চ্যাম্প’ ছবির সংগীত পরিচালক জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৭ ০০:৩৭

প্র: ‘চ্যাম্প’ না ‘বস টু’ কোন ছবি আগে দেখবেন?

উ: এটা কেমন প্রশ্ন?

প্র: আপনি দুটো ছবিরই সংগীত পরিচালক!

উ: সুতরাং আমি দুটোই দেখব। তবে আমি কোনও ছবির প্রিমিয়ারে যাই না। দেখুন জিৎ আর দেব দু’জনের ছবিতে সুর করলাম। কেউই আমায় বলেনি শুধু আমার ছবির কাজ করো। এ রকমও হয়েছে ‘বস টু’-র কাজ চলছে, দেব ফোন করে ডেকেছে। দেবকে বলেছি জিতের ছবির কাজ করছি, দেব শুনেই বলেছে করে নাও। একই ঘটনা জিতের ক্ষেত্রেও হয়েছে। জিৎ বলেছে ‘চ্যাম্প’-এর কাজ করে নাও। দেখুন দু’জনেই বাংলা ছবির ভাল চাইছে।

প্র: কিন্তু দুটো ছবির এক দিনেই রিলিজ, সঙ্গে সলমনের ‘টিউবলাইট’ দর্শক তো ভাগ হয়ে যাবে!

উ: যাদের যা দেখার তারা সেটাই দেখবে। আর ইচ্ছে হলে তিনটেই দেখবে। শুধু শুধু নেগেটিভ ভাবব কেন বলুন তো?

প্র: অভিনেতা হিসেবে জিৎ আর দেবকে কত নম্বর দেবেন?

উ: এই মরেছে! মিডিয়া না সব সময় লড়াই বাঁধানোর চেষ্টা করে! আমি দু’জনকেই একশোয় একশো দেব।

প্র: বাহ! পলিটিকালি একদম কারেক্ট!

দেখুন, জিৎকে চিনি ২০০৪ থেকে, যখন ও ‘প্রেমী’ ছবির নায়ক। আস্তে আস্তে গানের হাত ধরেই আমরা বন্ধু হয়ে যায়। খুব ডিসিপ্লিনড একজন অভিনেতা থেকে ও এখন প্রযোজক। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, সব ওর মাথায় থাকে। ও কিন্তু গান গাইতেও খুব ভালবাসে। একজন ইন্টারেস্টিং মানুষ। কাজ নিয়ে নিজের জগতে থাকে। কিন্তু সারাক্ষণ যে ছবি নিয়ে বা ছবির গান নিয়েই কথা বলে, এমনটাও না। বরং ইদানীং ওর সঙ্গে ভাল বই, মেডিটেশন, এ সব নিয়ে বেশি কথা হয়।

আরও পড়ুন: নেগেটিভ চরিত্রে সঙ্গীতা

প্র: আর দেব?

উ: জিৎ আমার বন্ধু, দেব আমার ভাই। ‘আই লভ ইউ’ থেকে চিনি ওকে। ওর মধ্যে ভীষণ খিদে। আমার তো মনে হয়, ও ২৪ নয় ৪৮ ঘণ্টা কাজ করে। ব্যবসাটাও দারুণ ভাল বুঝেছে দেব। ‘চ্যাম্প’-এর দারুণ প্রমোশন করছে। ‘চ্যাম্প’-এর গান তৈরির সময় এক দিন বললাম, ‘সারেগামাপা’-র একটা নতুন ছেলে সুপ্রতীককে দিয়ে আমি রেকর্ড করাতে চাই। দেব এক কথায় রাজি। তার পর অরিজিৎ যখন ‘মওলা রে’ গাইল, জাস্ট পাঁচ মিনিট শুনে দেবের চোখে জল এসে গিয়েছিল। অনিন্দ্য চট্ট্যোপাধ্যায় ওই গানের কথা লিখেছিল। যেমন ‘বস টু’-তে প্রাঞ্জল বলে একটি নতুন ছেলে ‘উড়েছে মন’ গানটা লিখেছে। শ্রীজাতও গান লিখেছে ‘চ্যাম্প’-এ। আসলে এখন মনে হয়, আমরা সংগীত পরিচালকেরা যদি গীতিকারদের কথা না বলি আর কে বলবে? বুম্বাদার প্রোডাকশনে রানা-সুদেষ্ণাদির ছবি ‘দেখ কেমন লাগে’র কাজও করলাম। বুম্বাদাকেও দেখলাম, গানের রেকর্ডিংয়ে আমার আগে পৌঁছে গিয়েছে। কী অসম্ভব ডেডিকেশন! আমার স্ত্রী চন্দ্রাণীও ওই ছবির গান লিখেছে। ওই গানগুলোয় চমৎকার মেলোডি আছে।

প্র: বেশ কিছু দিন আগেও এক রিয়্যালিটি শোয়ের বিচারক ছিলেন। রিয়্যালিটি শোয়ের কোনও ভবিষ্যৎ আছে?

উ: রিয়্যালিটি শো চলাকালীন গায়কদের যে ভাবে গ্রুম করা হয় তাতে তাদের পারফরম্যান্স অনেক উঁচু দরের হয়।
কিন্তু শো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সেই গ্রুমিং আর রেওয়াজ থেকে তারা সরে যায়, ফলে নিজের জায়গা তৈরি করতে পারে না। মোদ্দা কথা, লেগে থাকতে হবে। সুপ্রতীক কিন্তু ‘চ্যাম্প’-এর গান গেয়ে এখনই স্টার।

প্র: একটা গানে কি স্টার হওয়া যায়?

উ: স্টার হয়তো হয় না। কিন্তু গান হিট করলে স্টার হওয়ার রাস্তাটা খুঁজে পাওয়া যায়। সুপ্রতীককে যেমন এখন পর পর হিট গান দিয়ে যেতে হবে।

প্র: ‘চ্যাম্প’-এ মওলা আবার ‘বস টু’-তে উড়েছে মন দুটোই অরিজিৎ সিংহর গাওয়া। কম্পোজার হিসেবে কী মনে হয় অরিজিতের গলা বড্ড বেশি ব্যবহার হচ্ছে?

উ: নাহ। ও এতটাই ভার্সাটাইল যে, ওকে আরও অন্য রকম করে ব্যবহার করতে হবে।

প্র: মুম্বইয়ে ইদানীং অরিজিতের মতো করে অনেকে গাইছেন...

উ: নকল গায়কির মেয়াদ খুব কম। শানুদা (কুমার শানু) কিন্তু কিশোরকুমারকে নকল করেননি। ওঁর নিজস্ব গায়কির জন্যই উনি টিকে আছেন। অন্য দিকে সোনু নিগম মহমম্দ রফির দ্বারা অনুপ্রাণিত। কিন্তু সোনুরও নিজস্ব ধারা আছে। তেমনই অরিজিতের নিজস্ব গায়ন আছে। ও এত নাম করেও একদম সাধারণই রয়েছে।

প্র: সেই কারণেই কি অরিজিৎ সাক্ষাৎকার দেন না?

উ: এটা কিন্তু সকলের নালিশ। ও এ রকমই।
কিছুতেই মিডিয়ার সামনে আসতে চায় না। এখন অবশ্য ছবি নিয়ে খুব ব্যস্ত। আমার মনে হয়, সেটাও দারুণ করবে। মুম্বই ইন্ডাস্ট্রির উচিত, ওকে আরও বেশি করে ব্যবহার করা।

প্র: মুম্বই ইন্ডাস্ট্রিতে এখন কোনও গানই মনে লাগে না। সব বিটের গান। মেলোডি নেই...

উ: মুম্বইতে এখন একটা ছবিতে ৬-৭ টা সংগীত পরিচালক। ৭-৮ টা গায়ক। কেউ ঠিক করে নিজের কোয়ালিটি বোঝাতে পারছে না। একজন সংগীত পরিচালক এবং একজন গায়ক থাকলে তাঁরা নিজেদের ক্ষমতা ঠিক মতো প্রকাশ করতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে অন্য রকম কাজ হতো। কাজ অনেক ভালও হতো।

প্র: আজকাল তো গানও কম পড়ছে। পুরনো গান ছবিতে রিমিক্স হয়ে আসছে!

উ: বলতে বাধ্য হচ্ছি খুব বাজে শোনাচ্ছে, পুরনো গানের চার্মটাই হারিয়ে যাচ্ছে। আরে যা করার নিজেরা করো। পুরনো গানের উপর স্টিম রোলার চালিয়ে কী হবে! ‘কালা চশমা’ গানটা যেমন খুব বাজে লেগেছে।

প্র: বলিউডের কোটির ক্লাবের হিরোদের লিপে আপনার গান নেই। দুঃখ হয়?

উ: আমার অত বড় বড় হিরো না হলেও চলে যাচ্ছে তো! আসলে আমার গানই আমার হিরো। যেমন ধরুন ‘আশিকী টু’তে শ্রদ্ধা আর আদিত্য তখন একেবারেই নতুন। গানটাই হিট। আবার অন্য দিকে ‘খামোশিয়াঁ’তে গুরমিত চৌধুরী, ‘শুনো না সঙ্গ মর মর’ গানেও জ্যাকি ভগনানী নতুন। অথচ গান সুপারহিট! আজও অনেক শোয়ে এই গানগুলো দু’বার করে গাইতে হয়। এটাই প্রাপ্তি।

প্র: মুম্বই যাওয়া হল... স্ট্রাগল হল... স্বীকৃতি এল... ‘হিট গ্যাঙ্গুলি’ নাম হল... প্রাইজের জোয়ার এল... একচ্ছত্র আধিপত্যও হল... পরের স্টেশনটা কী?

উ: সব রিজিওনাল মার্কেটে আমি কাজ করতে চাই। মরাঠি। তামিল। তেলুগু। পঞ্জাবি। সব!

প্র: এখন বেশির ভাগ বাঙালি সেলিব্রিটি কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলে। আপনাকেও দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক মঞ্চে। রাজনীতিতে কবে যোগ দিচ্ছেন?

উ: (হেসে) আমি আর পলিটিক্স, ওরে বাবা! একদম জানি না। আর যেটা জানি না, তাতে আমি একেবারে নেই। আমি খেতে জানি, খুব খাই। ফুটবল খেলতে জানি, সেটা খেলি। তবে হাত ভাঙলে তো আর গিটার বাজাতে পারব না তাই সাবধানে খেলি। যদিও গিটারটা খুব কম বাজানো হচ্ছে। ভাবলেই মন খারাপ হয়। আর মিউজিকটা জানি, তাই ওটা মন থেকে করি। ব্যস... রাজনীতিতে আমি নেই।

Jeet Gannguli interview music director singer Celebrity interview জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy