Advertisement
E-Paper

‘প্রসেনজিত্, ঋতুপর্ণা আমার বিরুদ্ধে পলিটিক্স করেছিল’

ইন্ডাস্ট্রিতে কামব্যাকের পর আনন্দ প্লাসের মুখোমুখি বিস্ফোরক অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ইন্ডাস্ট্রিতে কামব্যাকের পর আনন্দ প্লাসের মুখোমুখি বিস্ফোরক অভিষেক চট্টোপাধ্যায়

স্বর্ণাভ দেব

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০১
অভিষেক

অভিষেক

কথা ছিল, সিরিয়ালের সেটেই সাক্ষাৎকার দেবেন তিনি। কিন্তু কথোপকথনে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এই আশঙ্কায় আনন্দ প্লাসের প্রতিবেদককে অভিষেক চট্টোপাধ্যায় ডেকে নিলেন নিজের ফ্ল্যাটে। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে দশ তলার ফ্ল্যাটে শুরু হল আড্ডা...

প্র: এক সময়ের নামী স্টার অভিষেক চট্টোপাধ্যায় ইন্ডাস্ট্রিতে কামব্যাক করলেন ছোট পরদায়। সিনেমায় নয় কেন?

উ: এখনকার সিস্টেম অনেকটাই বদলে গিয়েছে। প্রোডাকশন হাউজগুলোর নির্দিষ্ট লবি রয়েছে। তারা একটা সেট অফ আর্টিস্ট নিয়েই কাজ করে। পুরনো সময়ের বেশির ভাগ অভিনেতাই আজ ব্রাত্য। দীপকদা (চির়ঞ্জিৎ) তো হালে কাজ করছেন। তাপসদা (পাল), অর্জুনদা (চক্রবর্তী) কেউ কাজ করছেন না।

প্র: এর কারণ কী?

উ: আমি নিজের কথা বলতে পারি। এত বুড়ো হয়ে যাইনি যে, দেব কিংবা জিতের বাবার চরিত্রে অভিনয় করব। এখনও মুম্বইতে আমির, শাহরুখ, সলমন, অক্ষয়দের তো নায়ক হিসেবে দেখা যাচ্ছে। আসলে এখানে প্রতিভার চেয়ে তেলবাজিটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সময়কার কেউ কেউ তেল দিয়ে এখনও কাজ করছে। সেটা আমি পারব না। আমি কাউকে পরোয়া করি না।

প্র: নব্বইয়ের দশকের এক তারকা হঠাৎ কী ভাবে হারিয়ে গেলেন?

উ: দেখুন, আমি সকালবেলা তেলের টিন নিয়ে বেরোই না। পিআর-ও খুব খারাপ। তার উপর স্পষ্টবক্তা। যাকে পছন্দ নয়, তার মুখের উপর জবাব দিতে আমি কুণ্ঠিত নই। যা পলিটিক্স করা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে...

প্র: কারা ছিল এর পিছনে?

উ: কারা আবার! প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত! ’৯৭-’৯৮ সালে এরা জোট বেঁধে প্রায় ৩০-৩২টা ছবি থেকে আমাকে বাদ দিয়েছিল। সে সময়ে আমিই টলিউডে এক নম্বর। প্রায় এক বছর আমার কোনও কাজ ছিল না। বসে থেকে থেকে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। বছর দুয়েক পরে যাত্রায় যোগ দিলাম। তার পরই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন শুনেছি, লোকে বলছে, ‘অভিষেক তো ফুরিয়ে গিয়েছে’। এ সব শুনে কষ্ট হত। কিন্তু আমি প্রত্যয়ী ছিলাম।

প্র: তা, সমস্যাটা কী ভাবে তৈরি হল?

উ: চিরকালই প্রসেনজিতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম আমি। অনেক সময়েই টের পেয়েছিলাম, ও কিছু গোলমাল তৈরি করছে। কিন্তু ওকে বরাবরই বন্ধু ভাবতাম। তাই সিরিয়াসলি কোনও স্টেপ নিইনি। আর ঋতুপর্ণার সম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকারে কয়েকটা কথা বলেছিলাম, সেটা ওর খারাপ লেগেছিল। তার পরেই ও সিদ্ধান্ত নেয়, আমার সঙ্গে আর কাজ করবে না। আমাকে স্বপনদা (সাহা) বলেছিলেন, তুমি ব্যাপারটা মিটমাট করে নাও। কিন্তু আমি কোনও ভুল করিনি, তাই ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তার পরই যাত্রা করা শুরু করি।

প্র: আপনার নিজের কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুশোচনা রয়েছে?

উ: দেখুন, আমি রিগ্রেট করার মানুষ নই। যদি জানতাম আমার চেয়ে সুপিরিয়র কেউ রয়েছে, তা হলে হয়তো আক্ষেপ থাকত। সে সময়ে আমার সিক্স প্যাক ছিল। নিয়মিত শারীরচর্চা করতাম। ভাল অভিনয় করতাম। সুদর্শন চেহারা। আর কী-ই বা করার ছিল আমার! তবে এখন ভাবি, সোলো হিরো হিসেবে একের পর এক হিট দেওয়ার পর আরও বেছে কাজ করতে পারতাম। অবশ্য সব ধরনের চরিত্রে কাজ করেছি বলেই এত দিন কাজ না করা সত্ত্বেও কেরিয়ারে ছবির সংখ্যা ২৫০ পেরিয়েছে।

স্ত্রী অলকা ও মেয়ে সাইনার সঙ্গে

প্র: যাত্রা থেকে আবার টেলিভিশনে ফিরলেন কী ভাবে?

উ: বছর চারেক আগে শেষ বার যাত্রায় কাজ করেছি। টানা দশ বছরেরও বেশি যাত্রা করতে করতে হাঁফিয়ে উঠেছিলাম। তখন টেলিভিশনের অফার পেতেই রাজি হয়ে যাই। কামব্যাকের পরে প্রথম কাজ ‘পিতা’। সে ভাবে না চললেও, সাম্প্রতিক কালে ‘কুসুমদোলা’ এবং ‘অন্দরমহল’ দু’টি ধারাবাহিকে আমার অভিনয় মানুষের ভাল লেগেছে। এ জন্য আমি লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে শুধু মেগা নয়, ভাল ছবিতেও কাজ করতে চাই।

প্র: এ বার ব্যক্তিগত বিষয়ে আসি। এক সময়ের ক্যাসানোভা ইমেজের মানুষটি এত দেরিতে (’০৮) বিয়ে করলেন কেন?

উ: একা থাকতে থাকতে একটা সময়ে উপলব্ধি করলাম, একজন সঙ্গীর দরকার। যার সঙ্গে সমস্ত কিছু শেয়ার করা যায়। সে সময়ে একটি ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে অলকাকে (স্ত্রী) দেখে পছন্দ হয়। ওকে ফোন করি। আমাদের দেখা হয়। তার পরেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই।

প্র: তারকা অভিনেতাকে দেখে নিশ্চয়ই অলকারও পছন্দ হয়ে গিয়েছিল?

উ: মুম্বইয়ে থাকার কারণে অলকা আমার বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানত না। বাড়িতে আমি আদ্যন্ত ফ্যামিলিম্যান। আর অহংকারী নই বলেই কামব্যাক করতে পেরেছি। সাত বছরের মেয়ে সাইনা ও স্ত্রী-ই এখন আমার জীবনের প্রায়োরিটি। শ্যুটিং না থাকলে সারা দিন বাড়িতেই থাকি। রান্না করি, মেয়ের দেখভাল, বাড়ির নানা কাজ করি। শ্যুট না থাকলে বাড়িতে এলে আমাকে হয়তো মুখভর্তি সাদা দাড়িতেই দেখতে পাবেন। যদিও ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই রয়েছেন, তিরিশ বছর কাজ করার পরও কালো দাড়ি নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ান! আরে, লোকে কি কিছু বোঝে না, নাকি! আমি শুধু লাইমলাইটে থাকার জন্য অ্যাওয়ার্ড ফাংশনে মুখ দেখাই না কিংবা পার্টিতে যাই না। একটা সময়ে রাতের পর রাত ডিস্কে কাটিয়েছি। ওই জীবনটা আর চাই না। এখন আমার জীবন একেবারেই আর পাঁচ জন মানুষের মতো। আসলে আমি ঘোরতর ভাগ্যে বিশ্বাসী।এবং ভগবানেও।

প্র: সে জন্যই কি আপনার ফোনের রিংটোনে ঈশ্বরস্তুতি, ড্রয়িংরুমে ছবি ও আধ্যাত্মিক সংগীত বাজছে?

উ: হ্যাঁ। আমি সকালে আধঘণ্টা পুজো না করে বাড়ি থেকে বেরোই না। বরাবরই আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী।

ছবি: সুদীপ্ত চন্দ

Celebrity Interview Abhishek Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy