Advertisement
E-Paper

অক্ষয় না থাকলে শাবানাকে কি চিনত লোকে?

স্পয়লারটা প্রথমেই দিয়ে রাখা ভাল। সময়ের হিসেবে তাপসী পান্নু অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকলেও, ছবির মজ্জায় আসলে অক্ষয়কুমার। তাই অক্ষয়কে শুধু ‘ক্যামিও’ ভেবে সিনেমা হলে ঢুকলে, মুখে চওড়া হাসি নিয়ে বের হবেন। তবে তাতে দর্শকের মন ভরতে পারে, শাবানার খুশি হওয়ার কোনও কারণ নেই।

অরিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৭ ০০:০২

স্পয়লারটা প্রথমেই দিয়ে রাখা ভাল। সময়ের হিসেবে তাপসী পান্নু অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকলেও, ছবির মজ্জায় আসলে অক্ষয়কুমার। তাই অক্ষয়কে শুধু ‘ক্যামিও’ ভেবে সিনেমা হলে ঢুকলে, মুখে চওড়া হাসি নিয়ে বের হবেন। তবে তাতে দর্শকের মন ভরতে পারে, শাবানার খুশি হওয়ার কোনও কারণ নেই।

শাবানা (তাপসী পান্নু) মায়ের সঙ্গে থাকে মুম্বইয়ে। কমার্স নিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুডোতেও চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু রাগ কিছুতেই আয়ত্তে থাকে না। বেশ অ্যাংগ্রি ইয়াং উওম্যান ধরনের। বাজারে কেউ তাকে ধাক্কা দিলে তেড়ে যায়। এক গভীর রাতে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে বাইকে করে আসার সময় একদল বড়লোক বাবার বিগড়ানো ছেলে টিজ করে তাকে। তেড়ে যায় শাবানা। কিন্তু পাঁচজন ছেলের সঙ্গে পেরে ওঠে না। বরং মাথায় আঘাত লাগায় প্রাণ হারাতে হয় তার প্রেমিককে। অনেক দিন কেটে গেলেও ধরা পড়ে না খুনিরা। রাগ বাড়তে থাকে শাবানার।

এমন সময় এক অজানা নম্বর থেকে ফোন আসে। সিক্রেট সার্ভিস অফিসার রণবীরের (মনোজ বাজপেয়ী) ফোন। অনেক দিন ধরে তারা নজর রাখছিল শাবানার উপর। ‘দেশের হয়ে’ কাজ করার প্রস্তাব দেয় রণবীর। বয়ফ্রেন্ডের হত্যার বদলা নিয়ে যেতে হবে আর একটা ‘মিশনে’। বেআইনি অস্ত্র পাচারকারী মিখাইলকে (পৃথ্বীরাজ সুখুমারান) মারতে হবে। যদিও তার সাহায্যে অজয় সিংহ রাজপুত (অক্ষয়কুমার) থাকবে সেখানে। কী করে মিশন সফল হল, সেটা বড় পরদায় গিয়েই দেখা ভাল।

ফিল্মে স্পাই থ্রিলার বরাবরই বেশ জনপ্রিয় ঘরানা। ‘জেমস বন্ড’ হোক কী হাল আমলের ‘হোমল্যান্ড’ টিভি সিরিজ, কখনওই হতাশ করেনি দর্শকদের। ‘নাম শাবানা’ কিছুটা হতাশ করল। ছবির গল্প বা চিত্রনাট্যে ভুল নেই। ভাল স্পিন-অফে যে যে রসদের দরকার, তার সব কিছুই ঢেলে দিয়েছেন নীরজ পাণ্ডে। ‘বেবি’ ছবির রেফারেন্স ঢুকিয়েছেন উপযুক্ত সময়ে। যথাযথ সময় কমিক রিলিফ নিয়ে এসেছে অনুপম খেরের চরিত্র। সংলাপও ভাল। মনোজ বাজপেয়ীর মুখে ‘মেয়েরা তো জন্মসূত্রেই স্পাই’ কথাটার মধ্যে শভিনিজমের হালকা খোঁচা থাকলেও পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই।

তবু তাল কেটে গেল। ভাল স্পাই থ্রিলার বলিউডে কম। তার উপর এ ছবির প্রধান চরিত্র মহিলা। ‘কহানি’ বা ‘কুইন’ মহিলাকেন্দ্রিক ছবির যে রাস্তাটা খুলে দিয়েছিল, ‘নাম শাবানা’ চাইলেই সেটাকে ন্যাশনাল হাইওয়েতে নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু সেটা হল না। স্টিরিওটাইপে আটকে গেল ছবি। ভাল রান্নার মশালা হাতে ছিল, রেসিপিতে যেমন লেখা থাকে ‘আন্দাজ অনুযায়ী’ মেশানোর কথা, সেটা করতে পারেননি পরিচালক শিবম নায়ার। নীরজ পাণ্ডে এখানে শুধু গল্প আর চিত্রনাট্যের দায়িত্বে। তাঁকে দোষ দেওয়া চলে না। কিন্তু পরিচালককে দায় নিতেই হবে।

ছবির প্রথমার্ধ বেশ ধীর। শাবানার ব্যাকগ্রাউন্ড এ ছবির মূল উদ্দেশ্য ঠিকই, কিন্তু তা বলে কুডোর দু’-দু’টো ম্যাচ পুরোটা দেখাতে হবে! ছোট বয়সের শাবানাকে দেখাতে শিশুশিল্পী পেলেন না পরিচালক? তিরিশ বছরের তাপসী পান্নুকেই মেকআপ নিয়ে করতে হবে! ‘পিঙ্ক’ ছবিতে যিনি এত ভাল অভিনয় করলেন, তিনিই বা কেন ‘নাম শাবানা’য় এমন আড়ষ্ট থাকবেন? ক্রিমিনালকে তাড়া করার সময় তো তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হল ব্যাকপ্যাকের স্ট্র্যাপ ঠিক করতে। প্রথম থেকেই কি জানতেন উদ্ধারকর্তা হিসেবে অক্ষয় আসবেন?

অক্ষয় এসেছেন। শুধু তাপসীকে বাঁচানোর জন্য নয়, গোটা ছবিটাই নিজে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে গেলেন। বোঝা যায়, খান-ময় বলিউডে কী করে এত দিন রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ফার্স্ট হাফে প্রায় আইসিসিইউ-তে চলে যাওয়া ছবিকে অক্সিজেন আর অ্যাড্রিনালিন দিয়ে চাঙ্গা করলেন। আর অবশ্যই মনোজ বাজপেয়ী। শুধু সংলাপ আর মুখের অভিব্যক্তি দিয়েও যে অভিনয় করা যায়, সেটা বুঝিয়ে দিলেন। তিনটে শট ছাড়া সবই তাঁর ক্লোজআপ। তবু কী অনায়াস, স্বাভাবিক।

কিন্তু দু’টো ভাল চরিত্র দিয়ে তো আর ভাল ছবি হয় না। সম্ভাবনা থাকলেও তাই ‘নাম শাবানা’ সাধারণ ছবি হয়েই থেকে গেল। ২০১৭ সালেও দেখতে হল শেষ দৃশ্যে ভিলেনের সঙ্গে লড়াইতে ‘ফ্রিজ’ হয়ে যাচ্ছে শাবানা আর তার ত্রাণকর্তা রূপে আসতে হল এক পুরুষকে! সিনেমাহলে আসা লোকেদের বলিউড শুধু ফ্যান হিসেবেই দেখে গেল, দর্শক হিসেবে পাত্তা দিল না।

Naam Shabana
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy