Advertisement
E-Paper

প-য়ে পাগলামি প-য়ে পোকেমন

ফেসবুক গেল বলে। প্লেস্টেশনে জমছে ধুলো। আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ার পর ভারতও তোলপাড়। সব ফেলে যখন-তখন পোকেমন ধরতে ছুটছে জেন Y। লিখছেন অরিজিৎ চক্রবর্তীওয়েলকাম টু ‘পোকেমন গো’‌। এই মুহূর্তে দুনিয়া তোলপাড় করে দেওয়া মোবাইল গেম। কলকাতায় কম করে শ’দেড়েক পোকেমন গো প্লেয়ার নিয়ম করে দেখা করছে প্রতি রবিবার।

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৬ ০০:০০
ছবি: প্রতীকী।

ছবি: প্রতীকী।

লেকে মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছেন। বা ঘুরতে গেছেন সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালে।

হঠাৎ দেখলেন একদল উনিশ-কুড়ি দৌড়োদৌড়ি করছে।

না, না, ঘাবড়াবেন না। কারও কোনও বিপদ হয়নি। ওরা পোকেমন ধরার জন্য দৌড়চ্ছে।

ওয়েলকাম টু ‘পোকেমন গো’‌। এই মুহূর্তে দুনিয়া তোলপাড় করে দেওয়া মোবাইল গেম।

জাপানি অ্যানিমেশন পোকেমন। তার চরিত্র পিকাচু-চারম্যান্ডারদের নিয়ে তৈরি গেম ‘পোকেমন গো’। বিনাপয়সায় ডাউনলোড করতে পারবেন স্মার্টফোনে। আর পাঁচটা গেমের থেকে তফাত হল, এর মধ্যে বাস্তব আর ভার্চুয়াল জগতের মিশেল। গেম চালু করলে ম্যাপ বলবে পোকেমনের অবস্থান। সেখানে পৌছলে চালু হবে ‘অগমেন্টেড রিয়্যালিটি’। মানে, বাস্তব দুনিয়ার ওপর সুপারইম্পোজ করা পোকেমন। ফোনের স্ক্রিনেই ভার্চুয়াল বল ছুড়ে ধরতে হবে তাদের।

এতেই মজে জেন ওয়াই। তবে মজে যাওয়া বললে অর্ধেক বলা হবে। বলা ভাল, শুরু হয়েছে পাগলামি। এতটাই যে, বিদেশে সতর্কবার্তা জারি হয়েছে: রাস্তা পেরোবার সময় খবরদার খেলবেন না। কফিশপ থেকে ফেসবুক চ্যাটরুম সব ফাঁকা। ভারতে অবস্থাটাও একই। অফিশিয়াল রিলিজের অপেক্ষা না-করেই ডাউনলোড হচ্ছে ফোনে।

জিম নো, পোকেমন ইয়েস

তবে বাবা-মা পড়েছেন মহা চিন্তায়। ‘কী যে সারা দিন প্লেস্টেশন নিয়ে বসে থাকিস’ — বলার সুযোগই পাচ্ছেন না। ছেলে-মেয়ে যখন-তখন বেরিয়ে যাচ্ছে পোকেমন ধরতে! ‘‘নিয়ম করে টিভিতে পোকেমন দেখতাম। তাদের গেমের মধ্যে পেয়ে যাওয়া তো সোনায় সোহাগা। সারা দিন ক্লাসের পর স্ট্রেস কাটানোর জন্যও বেশ ভাল পোকেমন গো,’’ বলছিলেন মেডিক্যাল ছাত্রী রোমি মণ্ডল। অনেকে গেম ডাউনলোড করার পর কিনেছে নতুন স্নিকার্স। পোকেমনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটতে হচ্ছে যে! সোশ্যাল মিডিয়ায় জোক চালু হয়েছে, জিমে যাওয়ার কী দরকার? ঘণ্টা দুই পোকেমন খেললেই তো হয়। ‘‘কালও কলেজের পর ঘণ্টা তিনেক খেলেছি,’’ স্পষ্ট স্বীকারোক্তি ম্যানেজমেন্ট ছাত্রী শীতল অগ্রবালের।

সমস্যাও নেহাত কম না। সার্ভার সমস্যা থেকে মারাত্মক ব্যাটারির চার্জ যাওয়া তো আছেই। পোকেমন খোঁজায় মগ্ন হয়ে গর্তে পড়ে পা ভাঙাও বাদ যাচ্ছে না খবরের শিরোনাম থেকে। আমেরিকায় সতর্কবার্তা জারি হয়েছে: গাড়ি চালাতে চালাতে পোকেমন নয়। অস্ট্রেলিয়ায় পুলিশ পড়েছে আর এক সমস্যায়। চোর-ডাকাত ছেড়ে সামলাতে হচ্ছে থানার সামনের দীর্ঘ লাইন। কারণ? পোকেমন ধরার জন্য দরকার হয় ‘পোকেবল’। সেটা পাওয়ার ‘পোকেস্টপ’ এক পুলিশ স্টেশন।

হ্যাং আউটের নতুন ঠিকানা

তবে স্মার্টফোনে মুখ গুঁজে থাকা জেন ওয়াইকে মুখোমুখি বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে পোকেমন গো। কলকাতায় কম করে শ’দেড়েক পোকেমন গো প্লেয়ার নিয়ম করে দেখা করছে প্রতি রবিবার। তার পর সবাই মিলে খুঁজতে বেরোচ্ছে পকেট মনস্টার বা পোকেমন। রবিবার সাউথ সিটি-র ভিড়টা কিছুটা সরেছে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালে। ওখানেই সব থেকে বেশি পোকেমন পাওয়া যাচ্ছে! বছর বাইশের সৌভিক রায় বলছিলেন, ‘‘সিসিডি নয়, আমার নতুন ঠেক ময়দান মেট্রো।’’ তার পর বন্ধুরা মিলে ক্যাথিড্রাল রোডে খুঁজতে বেরোচ্ছেন পোকেমন। অনেকে উইকডেও ছাড়তে নারাজ। ইউনিভার্সিটি যাওয়ার আগে নেমে পড়ছেন যাদবপুর থানার স্টপে। বাকি পথ হাঁটছেন পোকেমন খুঁজতে।

গত রবিবার পোকেমন খোঁজার জন্য এক ‘পোকেওয়াক’‌য়ের আয়োজন করেছিল কলকাতা কমিক কার্নিভ্যাল। ‘‘ভাবতেও পারিনি এত লোক জড়ো হবে। পোকেমন গো নিয়ে দিল্লি-বেঙ্গালুরুর মাতামাতি দেখছি ফেসবুকে। কলকাতাতেও যে এত প্লেয়ার আছে সেটা টের পাইনি। যাক, হ্যাং আউটের একটা ব্যবস্থা তো হল,’’ জানাচ্ছিলেন এক সংগঠক সোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। সোহনদের মতোই আরও চার-পাঁচটা গ্রুপ রবিবার আয়োজন করছে পোকেওয়াকের। অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য: কলেজ-বাড়ি বা অফিস-বাড়ির বাঁধা রুটিনের বাইরে একটা নতুন কিছু তো হল।

এ বার হ্যারি পটার প্লিজ

পোকেমন নিয়ে পাগলামির কথা বলছিলেন ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া রোশনি বসু, ‘‘ছোটবেলায় তো পোকেমন বাথ টাওয়েল ছাড়া স্নান করতেই চাইতাম না। এখনও পোকেমন টি-শার্ট আছে আমার কাছে। ছোটবেলার পাগলামি কি সহজে যায়? পোকেমন গো রিলিজ করতেই তাই ডাউনলোড করে নিয়েছি। কলেজের পথে দেখতে দেখতে যাই কোথায় চারম্যান্ডার (এক পোকেমন চরিত্র) পাওয়া যায়। কেউ এ বার ‘হ্যারি পটার’‌য়ের ক্যারেকটারদের নিয়ে একটা গেম বানাক।’’

যদিও অনেকে বলছেন একটু সাবধানী থাকাই ভাল। তাঁদের যুক্তি, ‘অফিশিয়ালি’ যখন ভারতে আসেনি পোকেমন গো, তখন ডাউনলোড না করাই মঙ্গল। এ ভাবে ছড়াতে পারে ভাইরাস বা ম্যালওয়ার।

সপ্তাহ দু’য়েক অপেক্ষা করবেন নাকি এক্ষুনি ডাউনলোড করবেন, সেটা আপনার সিদ্ধান্ত।

তবে একটা কাজ করতেই পারেন। ইউটিউবে ‘পোকেমন’‌য়ের কয়েকটা এপিসোড দেখে নিন। চরিত্রগুলো সম্বন্ধে জানলে, পরে খেলতে সুবিধা হবে।

আর হ্যাঁ, ভিড়ে ঠাসা গড়িয়াহাটে পোকেমন এসে পড়লে কী করবেন — সে প্ল্যানটাও সেরে নিন।

Pokemon Arijit Chakraborty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy