Advertisement
E-Paper

কী ভাবে আমাজনের রুটম্যাপ বানিয়েছিলেন? শোনালেন পরিচালক

গহন আমাজন অভিযানের রুটম্যাপ কী ভাবে বানিয়েছিলেন, সেই কাহিনি শোনালেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়গহন আমাজন অভিযানের রুটম্যাপ কী ভাবে বানিয়েছিলেন, সেই কাহিনি শোনালেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়

পারমিতা সাহা

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:১২
কমলেশ্বর ও দেব

কমলেশ্বর ও দেব

প্র: ‘চাঁদের পাহাড়’ বাঙালির খুব প্রিয় উপন্যাস। তার সিক্যুয়েলের ভাবনা কী ভাবে এল?

উ: ‘চাঁদের পাহাড়’ ছবির কাজ যখন শেষের দিকে, তখনই কথা হয়েছিল আমাজন জায়গাটাকে নিয়ে যদি একটা অ্যাডভেঞ্চার ছবি করি। মনে হয়েছিল, শঙ্কর আর একটা অভিযানে গেলে, সেটা আমাজন হতে পারে। একে তো আমাজন সবচেয়ে রহস্যময় জঙ্গল। দ্বিতীয়ত আমাজনের সঙ্গে এল ডোরাডোর যোগাযোগ। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি চরিত্র নিয়ে ছবি করা, সেটা তো ভয়ের ছিলই। তবে আমার ছবির বিষয় নির্বাচন দেখলে বুঝবেন, কে কী বলল, তাতে আমি বিশেষ ভয় পাই না। আর আমার মনে হয়, এই ধরনের প্রচেষ্টা সকলেরই করা উচিত
এবং বাংলা সাহিত্যে তার যথেষ্ট রসদ রয়েছে।

প্র: গল্পটা আপনি বইয়ের আকারেও প্রকাশ করতে পারতেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে নিজের নাম দেখার লোভ হয়নি?

উ: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে নিজের নাম দেখার মতো আমার না আছে ঔদ্ধত্য, না আছে প্রলোভন। তিিন তো শুধু আমার কাছে ‘চাঁদের পাহাড়’-এর স্রষ্টা নন। তিনি আমার কাছে ‘ইছামতী’, ‘মিশমিদের কবচ’, ‘মরণের ডঙ্কা বাজে’, ‘পথের পাঁচালী’, ‘আরণ্যক’... সব কিছু! শঙ্করের স্পিরিটটা মাথায় রেখেই ‘আমাজন অভিযান’-এর গল্প। চরিত্রটার মধ্যে পৃথিবী ঘোরার যে ইচ্ছে, যে স্পিরিট রয়েছে অ্যাডভেঞ্চারের, তা যদি নষ্ট হয়, তা হলে আমি বলব, বিভূতিভূষণ নিয়ে কোনও কাজই করা উচিত নয়।

প্র: ছবির লোকেশনগুলো ঠিক করলেন কী ভাবে?

উ: একটা বিশেষ ঘটনা থেকে বিভূতিভূষণ ‘চাঁদের পাহাড়’-এর গল্পের উপাদান খুঁজে পেয়েছিলেন। ইনসিডেন্ট অব জাভো। একটা ব্রিজ তৈরি করাকে কেন্দ্র করে দুটো সিংহকে নিয়ে এক ভয়ংকর অ্যাডভেঞ্চার তৈরি হয়। সেটা মাথায় রেখেই উগান্ডা রেলওয়ের ঘটনাটা লেখেন। সেখান থেকে রিখটার্সভেল্ড অবধি রুটম্যাপ ভাবেন। সেই ম্যাপ অনুযায়ী ‘চাঁদের পাহাড়’-এর গল্প এগোয়। আমিও প্রথমে ভেবেছিলাম রুটম্যাপ। আমাজন প্রথমত দক্ষিণ গোলার্ধে। শঙ্কর জাহাজে করে যাচ্ছে ১৯১৪-’১৫ সাল নাগাদ। তার পর যখন সে পৌঁছবে, কোন পোর্টে পৌঁছবে, সেটা ছিল প্রথম প্রশ্ন। সেই সময় ব্রাজিল যেতে হলে যেতে হত পোর্ট অব স্যান্টোস। আমাজনে যেতে যে কতটা কষ্ট, সেটা দেখানোর জন্য পোর্ট অব স্যান্টোসকে বেছেছিলাম। রিও মাদেইরা নদী ধরে শঙ্কর এবং অ্যানা ও মার্কো ফ্লোরিয়ানের যাত্রা শুরু হয়। তার পর ওরা পথ ভুল করে পৌঁছে যায় জঙ্গলে। জঙ্গল থেকে ট্রেক করে মানাউস শহরে পৌঁছয়। এই রুটটা আমাদের গল্পের সমসাময়িক। ঠিক তার দু’বছর আগে থিওডোর রুজভেল্ট ও ক্যান্ডিডো রনডন ‘রুজভেল্ট-রনডন’ নামে বিখ্যাত এক এক্সপিডিশন করেছিলেন। ওঁরা যেতে চেয়েছিলেন মাদেইরা নদী ধরে আমাজনে। কিন্তু মাঝখানে রাস্তা গুলিয়ে ফেলেন। সেটা অবশ্য সবাই গুলিয়ে ফেলে একটা ফ্লাডেড ফরেস্টের কারণে। ওই জায়গা থেকেই গল্পের সূত্র ধরেছিলাম।

প্র: হারিয়ে যাওয়ার কারণ কী?

উ: আসলে ওখানকার নদীর শাখাপ্রশাখাগুলো একটা জালের মতো আমাজন রিভার সিস্টেম তৈরি করেছে। সেটা কোন নদী থেকে বেরিয়ে কোন নদীতে পড়বে, তা কারও হাতে থাকে না। রুজভেল্ট-রন্ডন যেখানে হারিয়ে যান, ওঁরা তার নাম দিয়েছিলেন, দ্য রিভার অব ডাউট। এটাই সবচেয়ে গোলমেলে জায়গা। যদি ভুল দিকে চলে যান, তা হলে আমাজনের ভিতরে চলে যাবেন, মানাউস পৌঁছতে পারবেন না। গল্পে শঙ্করও সেই রাস্তা গুলিয়ে ফেলে।

আরও পড়ুন: ফেনোমেনাল হিট একবারই হয়

প্র: আপনার ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘আমাজন অভিযান’— দু’টি ছবি দেখিয়েছে বাংলাতেও এত বিরাট ভাবে শ্যুটিং সম্ভব। এই ভাবনার বীজ কোথায় নিহিত?

উ: অবশ্যই হলিউডের ছবিতে। তবে স্ক্রিপ্ট লেখার আগে আমাজনে গিয়ে দেখেছি, ভাবনার সঙ্গে মিলছে কি না! যে ওয়াইল্ড লাইফ, ল্যান্ডস্কেপের কথা ভাবছি, আদৌ আছে কি না! তার পর স্ক্রিপ্ট।

প্র: আপনি নিজেকে কতটা পারফেকশনিস্ট মনে করেন?

উ: আমি পারফেকশনিস্ট নই। কারণ এই ধরনের ফিল্ম শ্যুট করতে গেলে যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাওয়া উচিত, বিদেশে সব সময় সেটা পাই না। কোথাও কোথাও কম্পিউটার গ্রাফিক্স ব্যবহার করতে হয়েছে। কম্পিউটার গ্রাফিক্সের ব্যাপারটা হচ্ছে, যত চিনি তত মিষ্টি। কিন্তু এটাও পাশাপাশি সত্যি, বাধা আছে বলে ঝুঁকি নেব না, সেটা আমার ধাতে নেই।

প্র: আপনার পরিচালনায় এক দিকে ‘মেঘে ঢাকা তারা’, অন্য দিকে ‘ককপিট’। মেলান কী ভাবে?

উ: ভাবনা অনেকই আসে...আমার প্রত্যেকটা কাজই এক্সপেরিমেন্ট এবং একটা জায়গায় আটকে থাকতে চাই না। আমার কাছে বৈচিত্রও গুরুত্বপূর্ণ। সেটা না থাকলে কাজের ইচ্ছে চলে যাবে এবং দর্শকও আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

প্র: মৈনাক ভৌমিক আনন্দ প্লাস-এর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, কমলদা’র ছবিতেও ‘কলকাতার রসগোল্লা’ গান থাকে!

উ: সেটা বোধহয় আমার বয়স, চালচলন, পাঞ্জাবি দেখে বলা। মেনস্ট্রিম ছবিতে সিরিয়াস কোনও বিষয় ঢুকিয়ে কেন তাকে ভারাক্রান্ত করব? আমি মেনস্ট্রিম ছবি দেখতে ভালবাসি, বাংলা ছবি দেখি। সেটা হয়তো অনেকে জানেন না।

Kamaleshwar Mukherjee Dev Tollywood Film
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy