Advertisement
E-Paper

‘আমাদের মধ্যে কোনও দিনই ঝামেলা ছিল না’

কলকাতায় এসে এমনই অবাক করে দেওয়া কথা বললেন কুমার শানু ও অভিজিৎ ভট্টাচার্যএই তো কিছু দিন আগেও একে অন্যের বিরুদ্ধে তোপ দেগে যাচ্ছিলেন কুমার শানু ও অভিজিৎ। দুই গায়কের গায়কির মতোই তো বিখ্যাত তাঁদের পরস্পরের প্রতি বিষোদগার!

অরিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০

অ্যাসাইনমেন্টটা প্রথমে শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করা যাচ্ছিল না! সত্যিই দু’জন একসঙ্গে সাক্ষাৎকারে রাজি হয়েছেন! এই তো কিছু দিন আগেও একে অন্যের বিরুদ্ধে তোপ দেগে যাচ্ছিলেন কুমার শানু ও অভিজিৎ। দুই গায়কের গায়কির মতোই তো বিখ্যাত তাঁদের পরস্পরের প্রতি বিষোদগার! কলকাতায় কিশোরকুমারের স্মৃতি অনুষ্ঠানে এসে কি তা হলে সব শত্রুতা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল?

দু’জনেই ভটচাজ্জি তো

কথা ছিল শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে ছোট্ট একটা প্রেস কনফারেন্সের পরেই দু’জন একসঙ্গে কথা বলবেন আনন্দ প্লাসের সঙ্গে। কিন্তু প্রথমেই হোঁচট। পরিকল্পনায় প্রায় জল ঢেলে দিচ্ছিলেন কুমার শানু। তাঁকে নাকি এক আত্মীয়ের বাড়ি যেতে হবে। প্রতিবেদকের নোটবুকে প্রশ্ন দেখে আঁতকে উঠলেন। ‘‘আমাদের মতো প্রাক্তন গায়কদের নিয়ে এত প্রশ্ন আছে!’’ মজা করেই বললেন শানু।

কিন্তু তাঁদের দ্বৈরথ তো প্রায় ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের মতো। এত দিন পর দু’জনকে একসঙ্গে পাওয়াটাই তো অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। কথা শেষ করতে দিলেন না শানু। বললেন, ‘‘আমাদের মধ্যে তো কোনও দিনই ঝামেলা ছিল না। সব তো মিডিয়ার বন্ধু সাংবাদিকদের কৃপায়।’’ কিন্তু অনেক কথা তো বলেছেন তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে। সে সব তো মিথ্যে নয়? এ বার হাল ধরলেন অভিজিৎ। ‘‘আরে ভাই, এখন আমাদের মধ্যে আর কোনও ঝামেলা নেই। দু’জনেই ভটচাজ্জি তো। মিটিয়ে নিয়েছি,’’ মজা করে বলেন অভিজিৎ। এতক্ষণে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কেদারনাথ ভট্টাচার্য ওরফে কুমার শানুর মুখেও হাসি ফুটল।

আরও পড়ুন:বলিউডের লভ স্টোরির সেরা কথক কি কর্ণ?

এ বার ঝামেলা হবে

দু’জনের মধ্যে বরফ যে যথেষ্ট গলে গিয়েছে, সেটা স্পষ্ট। অভিজিতের কথার রেশ ধরে শানু তাই বললেন, ‘‘এই তো আমরা দু’জনে ইউরোপে শো করে এলাম। সামনের মাসেই যাব দুবাই।’’ শানুর কথা অবশ্য শেষ করতে দিলেন না অভিজিৎ। কথার মাঝেই বলে উঠলেন, ‘‘অবশ্য এ বার ঝামেলা হবে। শানুদা কোথায় একটা যাবে বলে ছটফট করছে। অথচ আমাকে কিন্তু নিয়ে যাচ্ছে না।’’ দুষ্টুমির ছোঁয়া অভিজিতের গলায়।

এ দিকে একটা ব্যাপারে যে কুমার শানু এগিয়ে গিয়েছেন অভিজিতের থেকে। তাঁর গান নিয়ে একটা পুরোদস্তুর ছবি হয়ে গেল বলিউডে। ‘দম লগা কে হইশা’ ছবির প্রধান চরিত্র যে কুমার শানুর গানের ভক্ত! প্রশ্নটা শুনে হেসে ফেললেন শানু। ‘‘ছবিটার গল্প আমাকে অনেক দিন আগেই শুনিয়েছিল। তার পর ছবিটা আর এগোয়নি। অনেক বছর পর একদিন অনু (মালিক) বলল, আমার গাওয়া গান দিয়ে একটা সিনেমার কাজ পেয়েছে ও। বলল, ওকে অন্য গানগুলোর জন্য একটু সাহায্যও করতে হবে। আমি তো এক পায়ে খাড়া। আমি আর সাধনা (সরগম) বসে বসে হারমোনিয়ামে তোলা গান শুনতাম। আর কানে ঠিক লাগলেই বলতাম, হ্যাঁ এইটা নাইন্টিজের মতো লাগছে,’’ হেসে বলছিলেন শানু।

এফএম তো আমাদের গানেই চলছে

‘‘কলকাতায় রাত ন’টা মানেই অনেক বেজে গিয়েছে,’’ বলে মজা করছিলেন অভিজিৎ। অবশ্য রাত হলেও একবার রিহার্সালে তাঁর যাওয়া চাই-ই চাই। ‘‘কো-সিঙ্গারের সঙ্গে রিহার্স না করে আমি কাল স্টেজে উঠব না,’’ আয়োজকদের সটান বলে দিলেন অভিজিৎ।

তবুও নব্বইয়ের দশকের গানের কথা উঠতে দু’জনের চোখেই হাজার ওয়াটের আলো খেলে ওঠে। কেমন লাগছে এখনকার গান? প্রশ্নটা শুনেই আক্রমণাত্মক কুমার শানু। বললেন, ‘‘দেখুন এখনকার গান, তখনকার গান বলে কোনও কথা হয় না। এই যে গানের ‘যুগ’ বা ‘এরা’ বলা হয়, আমার মনে হয় সেটাও পুরোপুরি ফালতু। মোদ্দা কথা হল লোকে গান শুনে ছ’মাস পরেও সেটা গুনগুন করছে কি না। এখন তো গানগুলোর টিউন দু’সেকেন্ডও মনে থাকে না। দেখুন না কেমন পুরনো গানগুলো রিমেক করায় নেমেছে সবাই।’’

শানুর কথার রেশ ধরেই অভিজিৎ বললেন, ‘‘শ্রোতারা যে আর এই সব উল্টোপাল্টা গান আর নিচ্ছেন না, সেটা এফএম চ্যানেলগুলো শুনলেই বুঝতে পারবেন। না হলে আর রেট্রো গান নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুষ্ঠান হয়! অনেক এফএম স্টেশনও তো চালু হয়েছে শুধু নাইন্টিজের গান নিয়ে। এফএম তো এখন আমাদের গানেই চলছে।’’

দু’জনকেই এ বার উঠতে হবে। ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে আসছিল, দু’জনের যত ঝামেলা, যত মন কষাকষি থাকুক না কেন, গানের ব্যাপারে, বিশেষ করে তাঁদের সময়ের গানের ব্যাপারে একজোট হতে দু’সেকেন্ডও সময় নেবেন না অভিজিৎ ও কুমার শানু।

ছবি: সুদীপ্ত চন্দ

Abhijeet Bhattacharya Kumar Sanu কুমার শানু অভিজিৎ ভট্টাচার্য
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy