E-Paper

মা এই সিনটা আর দেখেনি

এত দিন ছিলেন ‘ইচ্ছেনদী’র গুডি গুডি হিরো। এ বার হঠাৎ ধর্ষকামী ভিলেন। বিক্রম চট্টোপাধ্যায়-এর সঙ্গে কথা বললেন অরিজিৎ চক্রবর্তীআপনার বাবা-মা ছবিটা দেখেছেন? হা হা হা। শুধু বাবা-মা কী বলছেন! বাবা-মা, বন্ধুর মাকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। ছবি শেষের পর মা বলল, ‘‘ওই সিনটা আমি দেখিনি। চোখ বন্ধ করে ছিলাম। বাকি সিনেমায় তোকে খুব ভাল লেগেছে।’’ (হাসি)

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০৭
‘সাহেব বিবি গোলাম’‌য়ের সেই চাঞ্চল্যকর দৃশ্যে স্বস্তিকা-বিক্রম

‘সাহেব বিবি গোলাম’‌য়ের সেই চাঞ্চল্যকর দৃশ্যে স্বস্তিকা-বিক্রম

আপনার বাবা-মা ছবিটা দেখেছেন?

হা হা হা। শুধু বাবা-মা কী বলছেন! বাবা-মা, বন্ধুর মাকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। ছবি শেষের পর মা বলল, ‘‘ওই সিনটা আমি দেখিনি। চোখ বন্ধ করে ছিলাম। বাকি সিনেমায় তোকে খুব ভাল লেগেছে।’’ (হাসি)

শুনেছি, ছবিতে যেটা দেখা গেছে, সেটা নাকি সেন্সর বোর্ডের কাটের পর...

হ্যাঁ, ঠিকই। যেটা দেখেছেন, সেটা বেশ কয়েকটা কাট-এর পর। আমি তো প্রথমবার স্ক্রিপ্ট শুনে প্রতিমদাকে (পরিচালক প্রতিম ডি গুপ্ত) না করে দিয়েছিলাম। প্রথমে, ওই রকম গ্রে একটা ক্যারেকটার। আমি আগে কখনও এ রকম কোনও চরিত্র করিনি। তার উপর আবার এ রকম দৃশ্য! বলেছিলাম, প্রতিমদা এটা না আমাকে দিয়ে হবে না। তুমি অন্য কারওকে নাও। এটা করলে আমার গুডবয় ইমেজের বারোটা বেজে যাবে। প্রতিমদা বলেছিল, ‘‘এই বয়সে এক্সপেরিমেন্ট করবি না তো কবে করবি?’’

ও রকম সিন করলেন কী করে...

পুরোটাই স্বস্তিকাদির (মুখোপাধ্যায়) কৃতিত্ব। স্বস্তিকাদির সঙ্গে আগে কাজ করেছিলাম ‘আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডস’‌য়ে। তবে স্ক্রিন শেয়ার তো করিনি। এত ভাল দেখতে। এত বড় একজন স্টার। অমন ‘অরা’। তার ওপর সাঙ্ঘাতিক ডিফিকাল্ট সিচুয়েশন। বেশ টেনসড ছিলাম। ফ্যানবয় মোমেন্ট। সব মিলিয়ে হাত-পা কাঁপছিল। খুব ভয়ও করছিল। কিন্তু শি মেড ইট ইজি ফর মি। বলেছিল, ‘‘কী রে, এত দিন ধরে অভিনয় করছিস। এটা নরম্যাল তো। ও তুই ঠিক করে নিবি। চাপ নেই।’’ ওই অ্যাপ্রোচটা খুব হেল্প করেছিল। আমাকে কনফিডেন্স দিয়েছিল যে, আমি নিজের মতো করে হ্যান্ডল করতে পারি। না হলে হয়তো আটকাত। হাতটা কোথায় যাবে বা কী ভাবে কথা বলব — এ সব নিয়ে একটা আড়ষ্টতা আসত। আমার শুধু চাপের ছিল, খালি গা যেন আনকুথ না-দেখায়। সিক্স প্যাকস না হলেও চেহারা দেখে লোকে খারাপ তো বলছে না। স্বস্তিকাদি স্টারডম ঝেড়ে ফেলে যে ভাবে আমাকে সাহায্য করেছে, সেটা অবিশ্বাস্য...

পাওলিও তো সাহায্য করতেন?

(একটু থেমে) দেখুন, আমি আজ যে জায়গাটায় আছি, তার অনেকটা পাওলির জন্য। সেটা বলতে একটুও দ্বিধাবোধ করি না। ‘এলার চার অধ্যায়’ যখন করেছিলাম, অনেকে আমাকে বলেছিল, আমি তো অভিনয়টাই করতে পারি না। হিরোইনের হাত ধরতে আমার হাত কাঁপে। সেটা কাটিয়েছিল পাওলি। আমাকে শিখিয়েছিল কী করে হিরোইনের হাত ধরতে হয়। কী করে চোখে চোখ রাখতে হয়। গলার পিছনে হাত দিয়ে ধরতে হয়। বলেছিল, বুম্বাদাকে (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) দেখে শিখতে।

‘ক্ষত’ দেখেছেন? সেখানে পাওলি আর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কেমিস্ট্রি...

(কথা থামিয়ে দিয়ে) না, দেখা হয়নি। এত ব্যস্ত শিডিউল ছিল যে দেখা হয়ে ওঠেনি। শুনেছি খুব ভাল হয়েছে। শেষ দেখা পাওলির ছবি ‘নাটকের মতো’। অসাধারণ লেগেছিল।

এসএমএস বা ফোন করে বলেছিলেন?

না, আমরা তো টকিং টার্মসে নেই। ভেবেছিলাম, ‘সাহেব বিবি গোলাম’‌-য়ের প্রিমিয়ারে আসার জন্য এসএমএস করব। পরে ভাবলাম, ধুর কী দরকার। তবে আমার বিশ্বাস ছবিটা দেখলে ওর ভাল লাগবে। শি উইল ফিল প্রাউড।

অনেকে তো বলেন ব্রেকআপ-এর জন্যই আপনি টালিগ়ঞ্জ ছেড়ে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন...

ব্রেকআপের পরে বেশ খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। লোকে বলত, ‘‘ধুর, ও তো পাওলির জন্য সুযোগ পায়। অভিনয় করতে তো পারে না।’’ কাস্টিং ফাইনাল হয়ে যাওয়ার পরও বাদ পড়ছিলাম ছবি থেকে। আমি শিওর, এতে পাওলির কোনও হাত নেই। কিন্তু ওই অপমানগুলো আর নিতে পারছিলাম না। কনফিডেন্স হারাচ্ছিলাম দ্রুত। বেশি দিন এ অবস্থায় থাকলে হয়তো ডিপ্রেশনে চলে যেতাম। তাই মুম্বই চলে যাই। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইছিলাম। লাকিলি জি টিভি-র কাজটা পেলাম। ন্যাশনাল অ্যাডও পেয়ে গেলাম তিন-তিনটে।

এখন তো বৃহস্পতি তুঙ্গে। টেলিভিশনের জনপ্রিয়তম স্টার। সিনেমাতেও সব জায়গায় প্রশংসিত আপনার ‘জিকো’...

ফিঙ্গার্স ক্রসড, ফাইনালি ভাল সময় দেখতে পাচ্ছি। ‘সাহেব বিবি গোলাম’ দেখে আবীরদা (চট্টোপাধ্যায়) ফোন করেছিল। তনুশ্রী (চক্রবর্তী) টুইট করল। মৈনাকদা (ভৌমিক) এসএমএস করেছিল। এই রকম সময়ই যেন চলতে থাকে। আরও তিনটে ছবির কাজ শেষ করলাম। সঙ্গে ‘ইচ্ছেনদী’ তো আছেই। মুম্বই ছেড়ে যখন টালিগঞ্জে ফিরেছিলাম, অনেকে ভুরু কুঁচকেছিল। তবে চার বছরে এই প্রথম মনে হচ্ছে, অ্যাক্টিংয়ে আমি কিছু করতে পারলাম।

আপনার বন্ধু অঙ্কুশ তো সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘জুলফিকার’‌য়ে অভিনয় করছেন। বন্ধুর সাফল্য দেখে মনে হয় না, ইস আমিও যদি করতে পারতাম...

অবশ্যই মনে হয়। কেন মনে হবে না? তবে আমাকে তো ডাকছে না। ভীষণ ইচ্ছে করে সৃজিতদার ছবিতে অভিনয় করার। আমার সিরিয়ালের যেমন ইমেজ, সেই রকম রোম্যান্টিক সিনেমা তো আমি করতেই পারি। কিন্তু না ডাকলে কী করব বলুন? আমি তো নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে পারি না।

এই সাঙ্ঘাতিক সাফল্যের দিনে পাওলিকে মিস করছেন?

হ্যাঁ করছি। ইন্ডাস্ট্রিতে যে দু’জন অভিনেত্রীকে আমার অসাধারণ মনে হয়, তার মধ্যে একজন স্বস্তিকা, অন্য জন পাওলি। ও শুধু অসাধারণ অভিনেত্রী নয়, একজন ভাল মানুষও। অভিনয় হোক কী জীবনে — আমাকে এত সাহায্য করেছে, বলে বোঝাতে পারব না। (একটু ভেবে) বাপ্পাদাকেও (বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়) করছি। যে কোনও সমস্যায় কল করা যেত। টিপস নেওয়া যেত।

পাওলি যেমন আপনাকে সাহায্য করতেন। আপনিও নাকি এখন একজনকে তেমন সাহায্য করছেন...

হা হা হা। বুঝতে পেরেছি কী বলতে চাইছেন। আমার বন্ধুরা ফোন করে বলে, ‘‘তোর নাম নাকি এখন বিক্রম সোলাঙ্কি?’’ বিশ্বাস করুন, আমাদের মধ্যে কিচ্ছু নেই। আমরা খুব ভাল বন্ধু। ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন কোট আনকোট বন্ধু বলে তেমন নয়। শুধু বন্ধু। ইউনিটের কারওকে জিজ্ঞেস করলেই দেখবেন, সবাই বলবে, ওরা এত ঝগড়া করে!

আরও পড়ুন, বিক্রমের আট সিক্রেট

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bikram Chatterjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy