Advertisement
E-Paper

অন্তকালে মৃত্যু অ-রূপকথার

ছবির পোস্টার, ট্রেলার দেখে সব দর্শকই বুঝে গিয়েছিলেন, ‘পরি’ কোনও রূপকথা নয়। বরং অ্যান্টি-রূপকথা! রুকসানার রক্তাক্ত নখ, অস্বাভাবিক ঝাঁপ দেওয়া, দেওয়াল বেয়ে চলা— এ সব ছিলই।

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৮ ০১:০০

একঘেয়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টি, উথাল-পাথাল হাওয়া, আলোর দপদপানি, ছমছমে পরিবেশ আর নীলচে ঘোর... ঠিক এটাই তো অলৌকিক গল্পের একদম ছককাটা ফর্মুলা। সেই ছক মেনেই শুরু হয়েছিল গল্পটা।

মা-বাবার সঙ্গে সুপাত্র অর্ণব (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) পাত্রী পিয়ালীকে (ঋতাভরী চক্রবর্তী) দেখে বাড়ি ফিরছিল। তার মাঝেই বিপত্তি। গাড়ির সামনে এসে পড়ে ‘কুত্তেওয়ালি’ এক বৃদ্ধা! তার মৃত্যুকে চালিয়ে দেওয়া হয় আত্মহত্যা বলে। জঙ্গলের মধ্যে দরমার ঘরে মৃত বৃদ্ধার মেয়ে রুকসানাকে (অনুষ্কা শর্মা) দেখে মায়া হয় অর্ণবের। ঘটনাচক্রে অর্ণবের বাড়িতেই ঠাঁই হয় রুকসানার। এরই সমান্তরালে দর্শকের সঙ্গে পরিচয় হয় প্রফেসর কাসিম আলির (রজত কপূর)। বোঝা যায়, লোক-লস্কর নিয়ে সে কোনও একটা সংগঠন চালায়। কয়ামত আন্দোলন, ইফরিত, বাংলাদেশ ট্রিবিউন, অনেক শিশুর মাথা উদ্ধার হওয়া— এ সব শুনে কোনও সিদ্ধান্তে আসার আগেই দেখি, কাসিম খুঁজছে রুকসানাকে, মেরে ফেলতে চায়। কেন? তাই নিয়ে গল্পের শুরু এবং বিরতি।

ছবির পোস্টার, ট্রেলার দেখে সব দর্শকই বুঝে গিয়েছিলেন, ‘পরি’ কোনও রূপকথা নয়। বরং অ্যান্টি-রূপকথা! রুকসানার রক্তাক্ত নখ, অস্বাভাবিক ঝাঁপ দেওয়া, দেওয়াল বেয়ে চলা— এ সব ছিলই। সঙ্গত দিচ্ছিল উড়ে যাওয়া শুকনো পাতা, শয়তানের পদধ্বনি, সন্তানসম্ভবার চিৎকার, কালচে পোশাকে সাদাটে চেহারার মলিন বুড়ি, জুলজুলে চোখে তাকানো কুকুরের মরে যাওয়া ইত্যাদি। সব ঠিকই ছিল। অন্তত ঠিক থাকতে পারত। যদি না পরিচালক প্রসিত রায় সমস্ত কিছু ধরে ধরে বুঝিয়ে দিতে শুরু করতেন।

আরও পড়ুন: অনুষ্কা যখন রেগে যেত...

যেখানেই পরিচালক শিক্ষকের মতো দাঁড়িয়ে সব বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, ঠিক সেখান থেকেই হারাতে শুরু করেছে এই অ-রূপকথার স্বাদ। ছবির শুরু যতটা প্রশংসার দাবি রাখে, দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে ততটাই জড়িয়ে যায়। চিত্রনাট্যের দুর্বলতা ছবির সবচেয়ে বড় অন্তরায়। সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন নারীরাই কি হয়ে ওঠে ডাইনি? তারাই কি বাস্তবতা থেকে দূরে গিয়ে অশুভ হয়ে ওঠে? আমরা কার বিরুদ্ধে লড়ি? যদি অশুভ আমাদের মধ্যেই লালিত হয়, তা হলে নিজের বিরুদ্ধে কত দূর লড়তে পারি? প্রশ্ন অনেক। প্রশ্নগুলো জড়িয়ে যাওয়ার মুহূর্তেই পরিচালক হাল ছেড়ে সরলরেখায় সমাধান খুঁজেছেন।

তবে এ ছবির সম্পদ রুকসানা-অর্ণবের মুহূর্ত। একে অপরের অবিশ্বাস, সভ্য হওয়ার পাঠ দেওয়া-নেওয়া, নির্ভরতার আশ্বাস— এখানেই বাজিমাত করেছে অনুষ্কা-পরমব্রতর কেমিস্ট্রি। এই ছোটখাটো মানবিক মুহূর্তগুলো দিয়েই দর্শক বিশ্বাস করেছেন রুকসানাকে। জিষ্ণু ভট্টাচার্যের ক্যামেরায় আধিভৌতিক ও অলৌকিক দৃশ্যগুলো বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে।

জাতীয় স্তরে পরিচিতি পেতে অভিনেতা পরমব্রতর বোধ হয় অন্যতম হাতিয়ার নিপাট বাঙালিয়ানা। ‌এ বার নিঃসন্দেহে পরমব্রতর সেই খোলস ছেড়ে বেরোনো দরকার। তবে অনুষ্কার বিপরীতে প্রতিটা ক্ষেত্রে তিনি দাঁড়িয়েছেন অবলীলায়। সেখানে দর্শকের প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। ঋতাভরীর অভিনয়ে জড়তা থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে তা থেকে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। কৃত্রিম চোখ খুলে মলম লাগানো, নিস্পৃহ চাহনি— রজত তাঁর মতোই ভাল। তবে অনুষ্কা অদ্বিতীয়। খাটের তলায় লুকিয়ে থাকা ভয়ার্ত চেহারা, রক্তশূন্য মুখ, রাক্ষসী থেকে মানবী হয়ে ওঠার প্রয়াস, ভালবাসার রং, আগামী সন্তানকে কেড়ে নেওয়ার রোষ, প্রতিশোধের স্পৃহা, তিলেতিলে মরতে থাকা— ফুটিয়ে তুলেছেন অনবদ্য ভাবে। মর্গে মৃতদেহের তাকের উপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্যে অনুষ্কা যতটা সাবলীল, ফুলেল পরদার মাঝে শুয়ে স্বপ্ন বোনার দৃশ্যে তিনি ততটাই মায়াবী।

পরি

পরিচালনা: প্রসিত রায়

অভিনয়: অনুষ্কা, পরমব্রত,
রজত, ঋতাভরী

৫/১০

ছবি দেখে যদি বা কারও মনে ভয়ের উদ্রেক হয়, তা তিনি কাটিয়ে ফেলতে পারবেন দ্বিতীয় ভাগেই। প্রাকৃত-অপ্রাকৃতের টানাপড়েন, হরর, থ্রিলার ছবি বানাতে গিয়ে পরিচালকের মাথায় কাজ করেছিল অনেক কিছু। তাঁর বলারও ছিল অনেক। আর সমস্তটা খুলে বলতে গিয়েই বিপদ ঘটেছে। এ ধরনের ছবিতে কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর হয় না। কোথাও তা স্পর্ধায় ছুড়ে দিতে হয় দর্শকের দিকে। সেই স্পর্ধাটুকুরই অভাব ছিল।

যেমন সব রূপকথার গল্পে অন্তকালে রাজপুত্রের জয় হয়, ঠিক তেমনই এই অ-রূপকথার গল্পটাকে রাক্ষসী-মানবীর চিরাচরিত দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে রূপকথা বানিয়ে ফেলতে চেয়েছেন পরিচালক। আর সেটাই কুরে কুরে খেয়েছে পরিকে।

Pari Anushka Sharma Parambrata Chatterjee Bollywood horror film
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy