Advertisement
E-Paper

কলকাতার কড়চা

শাস্ত্র, পুরোহিত ও উচ্চবর্ণের কাছে নারী, শূদ্র ও অন্যান্য শ্রমজীবী কেউ পুরোপুরি মানুষ নয়। প্রাচীন ভারতের মায়েরা ছিলেন সন্তানকে আনার ‘ইচ্ছা’ থেকে বঞ্চিত, শিশুর মানসিক লালন-পালন ও শিক্ষাদান থেকে বঞ্চিত, শুধুমাত্র গর্ভধারণের যন্ত্রে পর্যবসিত। কোনও শিশুকন্যাই জন্মাবধি গণিকা হয় না, সমাজই তাকে গণিকায় পরিণত করে নিজের প্রয়োজন মেটাতে।-- এক দিকে সহজ ভাষায় বিপুল জ্ঞানভাণ্ডারকে সংহত করে সাধারণ কৌতূহলী পাঠকের কাছে প্রাচীন ভারতে নারী, সমাজ, সাহিত্যের নতুন পাঠ পৌঁছে দেওয়া, তাকে প্রশ্নার্ত করে তোলা।

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৪ ০০:২১

অতীতকে তিনি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছিলেন

শাস্ত্র, পুরোহিত ও উচ্চবর্ণের কাছে নারী, শূদ্র ও অন্যান্য শ্রমজীবী কেউ পুরোপুরি মানুষ নয়। প্রাচীন ভারতের মায়েরা ছিলেন সন্তানকে আনার ‘ইচ্ছা’ থেকে বঞ্চিত, শিশুর মানসিক লালন-পালন ও শিক্ষাদান থেকে বঞ্চিত, শুধুমাত্র গর্ভধারণের যন্ত্রে পর্যবসিত। কোনও শিশুকন্যাই জন্মাবধি গণিকা হয় না, সমাজই তাকে গণিকায় পরিণত করে নিজের প্রয়োজন মেটাতে।-- এক দিকে সহজ ভাষায় বিপুল জ্ঞানভাণ্ডারকে সংহত করে সাধারণ কৌতূহলী পাঠকের কাছে প্রাচীন ভারতে নারী, সমাজ, সাহিত্যের নতুন পাঠ পৌঁছে দেওয়া, তাকে প্রশ্নার্ত করে তোলা। অন্য দিকে ক্ষুরধার যুক্তিতে অতীত সম্পর্কে নানা ভুল ধারণার অবসান ঘটানো, সুদূর অতীতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে প্রবহমান সমাজজীবনের অঙ্গীভূত করে নিত্য দিনের যাপনে তাকে প্রাসঙ্গিক করে তোলা। সুকুমারী ভট্টাচার্যের (১৯২১-২০১৪) সমগ্র জীবন কেটেছে এরই চর্চায়।

প্রতিবাদী রক্ত তাঁর শিরায় বহমান ছিল, পিতামহ বিপিনবিহারী দত্ত আচারবিচার কেন্দ্রিক হিন্দু ধর্মাচরণের নিষ্ঠুর অমানবিকতা স্বচক্ষে দেখে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। অসামান্য মেধাবী সুকুমারীকে ধর্মের কারণে শিক্ষাজীবন থেকে শিক্ষকজীবন, বার বার বাধা পেতে হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃত শিক্ষায় বাধা পেয়েছেন, বিখ্যাত ঈশান স্কলারশিপের সম্পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেও হিন্দু নন বলে তা পাননি। কিন্তু এ সব কোনও কিছুই তাঁর মুক্তচিন্তার অনুশীলনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। রামায়ণের ব্যাখ্যায় তিনি নির্দ্বিধায় তুলে আনেন ‘কলির আতঙ্কের’ কথা, যে কলির প্রধান ভয় নারী ও শূদ্র যথাক্রমে স্বামী ও উচ্চবর্ণের প্রভুকে লঙ্ঘন করবে। এই আতঙ্কেই রামের শম্বুক-বধ, বা সীতা-নির্বাসন। আবার জীবনের শেষ পর্বেও ‘উপনয়ন’ প্রসঙ্গে তাঁর স্পষ্ট করে বলতে অসুবিধা হয় না, ‘এই দ্বিজত্ব অর্জন করার দ্বারা সে সমাজের বাকি অংশকে যে শূদ্রত্বের অসম্মানে ঠেলে দিল এ চেতনাও তার নেই।’ কিংবা ‘‘শিক্ষিত বুদ্ধিমান মানুষও অনায়াসে ভাইফোঁটা নেয়, আনুষঙ্গিক প্রাপ্তি সহযোগে, এমন সমাজে যেখানে ‘বোনফোঁটা’ বলে কিছু নেই।” দৃঢ় যুক্তির ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে প্রত্যয়ের সঙ্গে এমন কথা বলার মানুষ আজ বড় কম, তাঁদেরই একজন চলে গেলেন। আনন্দের কথা, তাঁর প্রবন্ধসংগ্রহ চার খণ্ডে সম্পূর্ণ প্রকাশিত হয়েছে (গাঙচিল), সঙ্গে সদ্যপ্রকাশিত চতুর্থ খণ্ডের প্রচ্ছদ। বাঁ দিকে সুকুমারী ভট্টাচার্যের ছবি, গোপাল গঙ্গোপাধ্যায়ের তোলা।

সই

ইংরেজিতে অনূদিত বেবি হালদারের আত্মকথা আলো আঁধারি বিদেশের পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য হল না কেন? পরিবেশকদের বক্তব্য, তাতে নাকি যথেষ্ট যন্ত্রণার বিবরণ নেই। বললেন ঊর্বশী বুটালিয়া (সঙ্গের ছবি), অক্সফোর্ড বুক স্টোরে আয়োজিত সই-এর অনুষ্ঠানে। ভারতের প্রথম ‘ফেমিনিস্ট’ প্রকাশন সংস্থা ‘কালি ফর উইমেন’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ‘জুবান’ প্রকাশন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতার মতে, আন্তর্জাতিক পাঠকমহলে পৌঁছনর ক্ষেত্রে মেয়েদের লেখালিখির প্রধান অন্তরায় এই সাংস্কৃতিক দূরত্ব। আমেরিকায় অনূদিত বইয়ের সংখ্যা মাত্র ২০-২৫ শতাংশ, তার মধ্যে মেয়েদের লেখা নগণ্য। এখানেই এক প্রধান ভূমিকা পালন করছে নবনীতা দেব সেন-এর উদ্যোগে সংগঠিত ‘সই’। সে দিন যশোধরা বাগচী, অমিয় বাগচী, সংযুক্তা দাশগুপ্ত, অঞ্জুম কাটিয়াল, অনসূয়া গুহর আলোচনায় উঠে এল এমন নানা প্রসঙ্গ। প্রকাশিত হল সই-সাবুদ (২য় সং), যেখানে বাংলা, কন্নড়, মরাঠি-র মতো ন’টি আঞ্চলিক ভাষা থেকে অনূদিত হয়েছে মেয়েদের লেখা। যশোধরা বাগচীর কথায়, ‘সই-সাবুদ’ নামটিতেই পুরুষতান্ত্রিক আইনি ভাষাকে দখলে আনার কথা স্পষ্ট। সংযুক্তা দাশগুপ্ত তাঁর নিজের কবিতার মধ্যে দিয়ে জানান কী ভাবে এই অনুবাদের সূত্রে নানা যুগের মেয়েরা একে অপরের সই হয়ে উঠলেন। প্রসঙ্গত বাদ পড়লেন না রবীন্দ্রনাথও, যাঁর একটু উৎসাহের অভাবেই হয়তো পাঠকের কাছে অজানা রয়ে গেল স্বর্ণকুমারী দেবীর নিজের অনূদিত ‘কাহাকে’-- দি আনফিনিশড সঙ। এমন অসাধারণ অনুষ্ঠানে অতিথিদের পায়ের তলায় ঘোরাঘুরি করছিল একটি বড়সড় ছুঁচো, অক্সফোর্ড বুকস্টোর কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে একটু নজর দেবেন কি?

তারুণ্য

সত্তর দশকের কলকাতার কত বয়স বেড়ে গিয়েছে, চেহারায় কত-না পরিবর্তন, কিন্তু মনের দিক থেকে তা এখনও একই রকম, সেই তরতাজা তরুণ। নতুন করে সেটা টের পাওয়া গেল সত্তরের সপ্রতিভ দুই তরুণীর পত্রালাপে— শাশ্বতী গুহঠাকুরতা আর চৈতালি দাশগুপ্ত— আজও তাঁদের মন আর কলম তখনকার মতোই সতেজ আর তরুণ। শুধুমাত্র তাঁদের উপস্থিতি আর কণ্ঠস্বরেই দূরদর্শনের সাদাকালো বাক্স রঙিন হয়ে উঠত সে সময়। তখন আর এখন-এর মধ্যে চলে-যাওয়া দশকগুলো যেন সমাজ-সংস্কৃতির ইতিবৃত্ত নিয়ে উঠে এসেছে তাঁদের এই চিঠিপত্র সংবলিত বইটিতে— ওলো সই (সপ্তর্ষি)। চিঠিপত্রের সময়কাল ২০১২-র শেষ থেকে ২০১৪-র শুরু, কিন্তু তাতে স্মৃতির সরণি বেয়ে ঢুকে পড়েছে গত শতকের দশকের পর দশক। দু’জনার ব্যক্তিগত অনুভূতির কথোপকথন যেন বঙ্গজীবনের নৈর্ব্যক্তিক আখ্যান।

বাংলার দাই

খ্রিস্টপূর্ব দু’হাজার অব্দে ‘গিলগামেশ’-এর মহাকাব্যে প্রথম ধাত্রীবিদ্যার উল্লেখ আছে। এ দেশে চরক ও সুশ্রুত তাঁদের আলোচনায় এনেছিলেন ধাত্রীবিদ্যার কথা। কিন্তু মধ্যযুগের শেষ দিকে জাতপাতের বেড়াজালে আটকে গিয়ে ধাত্রীবিদ্যা পেশাটি কেবলমাত্র সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণির মহিলাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। ‘দাই’রা আজও অবজ্ঞাত, কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এঁদের অনেকগুলি পদ্ধতির স্বীকৃতি দিয়েছে। গ্রামাঞ্চলে শিশুমৃত্যুর হার রোধ করার জন্য এখনও এঁদের সহযোগিতা অপরিহার্য। এ রাজ্যের আশি শতাংশ ধাত্রী আবার লোকশিল্পী। যারা পটচিত্র, খন গান বা মনসা ভাসানের মধ্যে দিয়ে নিরাপদ মাতৃত্বের বিষয়টি পৌঁছে দিতে পারেন মানুষের কাছে। গবেষক সোমা মুখোপাধ্যায় দীর্ঘদিন এঁদের নিয়ে কাজ করছেন। ১ জুন বিকেল পাঁচটায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্যের নামাঙ্কিত চতুর্থ বার্ষিক স্মারক বক্তৃতায় তিনি বলবেন ‘ধাত্রীমাতা/ ঐতিহ্য ও পরম্পরা’ শীর্ষকে। এ রাজ্যে ধাত্রীদের বর্তমানে অবস্থার কথা থাকবে তাঁর আলোচনায়।

এ বারে বারোয়

সত্যজিতের এক ডজন গপ্পো-র সিরিজের মতোই এ বারে বারো-য় পড়ছে রে-ক্যুইজ। ‘সত্যজিৎ রায়ের মতো প্রতিভা বলেই তাঁকে নিয়ে বারো বছর ধরে ক্যুইজের আসর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।’ জানালেন এই কর্মকাণ্ডের পুরোধা ও এখন সত্যজিৎ পত্রিকার সম্পাদক সোমনাথ রায়। নন্দন-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ক্যুইজের পাশাপাশি পত্রিকার পক্ষ থেকে সম্মানিত করা হবে অরুণ মুখোপাধ্যায়কে (‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’-র অভিনেতা)। সঙ্গে পঞ্চাশ পূর্তি উপলক্ষে ‘চারুলতা’ (১৯৬৪) নিয়ে আলোচনা, বক্তা: বিভাস চক্রবর্তী শেখর দাশ দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় রুশতী সেন। নন্দনে ৩১ মে বিকেল ৫টায়। অন্য দিকে নন্দনেই দু’টি চলচ্চিত্রোৎসব। ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ-এর উদ্যোগে ফরাসি ছবির উৎসব ২৬-২৮ মে, শুরুর দিন বলবেন বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ৩০-৩১ মে জার্মান ছবির উৎসব, উদ্যোগে ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস।

প্রবাসে

কলকাতার প্রেসিডেন্সি, স্কটিশ চার্চ, যাদবপুর বা শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তনীরা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে আছেন শুধু নয়, মাসান্তে অন্তত এক বার দেখাশোনা, আড্ডা, সংস্কৃতি চর্চা, পানাহার, পুজোর প্ল্যানিং-এ মেতে কলকাতাকে ছুঁতে তাঁদের বড় তৃপ্তি। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের ওমানের রাজধানী মাসকটে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তনীদের উদ্যোগে ধুমধাম করে হয়ে গেল বাংলা বর্ষবরণ উৎসব। মাজান কন্টিনেন্টাল হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েটে কোরাসে রবীন্দ্র গান, সমবেত নৃত্য ও ছোটদের নাটক ‘নাকউঁচু’ তো জমেই গেল; শেষমেশ শ্রুতিনাটকের খ্যাতকীর্তি দম্পতি অতিথিশিল্পী জগন্নাথ ও ঊর্মিমালা বসু একগুচ্ছ শ্রুতিনাটক ও কবিতা দিয়ে পরবাসের দর্শকদের মন মজালেন। অনুষ্ঠান শেষের ভূরিভোজে হোটেলের মহার্ঘ মাছমাংস-পোলাও-কালিয়ার ভিড়ে বাড়িতে তৈরি এঁচোড়ের ডালনা, ধোঁকা, ঘরে-পাতা মিষ্টি দই আর পান্তুয়া ছিল জিভে জল-আনার মতো।

বিচিত্রকর্মা

জোড়াসাঁকো শিকদারপাড়ার এক বাঙ্গালির নাম জড়িয়ে আছে মাউন্ট এভারেস্টের সঙ্গে। রাধানাথ শিকদারের (১৮১৩-১৮৭০) করা হিসেব থেকেই সারা বিশ্ব প্রথম জেনেছিল হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের কথা। পাশাপাশি সমাজ-সংস্কারেও উদ্যোগী ছিলেন তিনি। ১৮৫৪-এ বন্ধু প্যারীচাঁদ মিত্রের সঙ্গে মিলে প্রকাশ করেছিলেন মাসিক পত্রিকা, কেবল মেয়েদের জন্য। ডিরোজিওর প্রিয় এই ছাত্র তাঁর প্রতিষ্ঠান অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনপার্থেনন পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন বাল্যবিবাহ রোধে। তিনিই প্রথম সরকারি অফিসার যিনি সই করেছিলেন এই প্রস্তাবে। সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি শুরু করে এই পেশাকে বহু দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন রাধানাথ। ২০০৪-এ ফোরাম ফর সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড টেকনোলজিস্টস বা ফসেটের উদ্যোগে প্রকাশ পেয়েছিল ওঁর স্মরণে একটি ডাকটিকিট। এ বছর ওঁর ১৪৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এশিয়াটিক সোসাইটির সঙ্গে ওদের যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি সোসাইটির বিদ্যাসাগর হলে প্রতিষ্ঠিত হল ওঁর একটি আবক্ষ মূর্তি (শিল্পী সুব্রত মৃধা)। ফসেটের সাধারণ সম্পাদক অসিনজিৎ সরকার জানালেন, রাধানাথের স্মৃতিতে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। তারা তাঁর কর্ম ও জীবনকে নানা ভাবে তুলে ধরার কাজ চালিয়ে যাবে।

মুসলিম মনন

বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে মুসলিম মননের ভূমিকা সত্যিই কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে কতটুকু আলোচনা নজরে পড়ে? বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে আরবি-ফার্সি উপাদান, মধ্যযুগের মুসলমান কবিদের রচনা, সুলতানি পৃষ্ঠপোষণার বৃত্তান্ত, এমন কত বিচিত্র দিকে অনুসন্ধানের সুযোগ রয়েছে অনেকটাই। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ এ বার বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী। ২৮ মে সল্টলেক ডিডি ৪৫-এ মওলানা আবুল কালাম আজাদ ভবনে প্রাগাধুনিক পর্বে এই ভূমিকার কথা উঠে আসবে তাদের আয়োজিত জাতীয় স্তরের আলোচনা সভায়, জানালেন বিভাগীয় প্রধান মীর রেজাউল করিম। শুরু সকাল দশটায়।

পুনর্মিলন

১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠা হেনরিয়েটা জে মিলের হাত ধরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, নকশাল আন্দোলনের মধ্যেও মাথা উঁচু করে থেকেছে ক্রাইস্ট চার্চ হাইস্কুল। যশোহর রোডের উপর বিশাল সবুজ মাঠ, গাছগাছালির মেলা আর ‘কিংবদন্তি’ অধ্যক্ষ মিস মামেন। দেশে-প্রবাসে সবাইকে একজোট করতে এ বার পুনর্মিলন উৎসব ১ জুন। সদ্য তৈরি অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে। চ্যাপেলের পাশ দিয়ে, স্কুলের অডিটোরিয়ামে। সকাল ১০টা থেকে।

গোপন ঋণ

প্রেমের আনন্দ বেদনা ব্যর্থতা চরিতার্থতাই বোধহয় আমার সমস্ত জীবনভর কবিতার সব থেকে দীর্ঘস্থায়ী স্রোত হয়ে থেকে গেছে। —জানিয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কারণ তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন কৈশোরে, নতুন জন্মানো প্রেমাকাঙ্ক্ষার আন্দোলনে, ‘পরবর্তীকালে অবশ্য একটু একটু ক’রে প্রকৃতি, সমাজ, বেঁচে থাকার অপরিহার্য অভিজ্ঞতা কবিতার মধ্যে ফুটে উঠতে আরম্ভ করল।’ সদ্য বেরল তাঁর কবিতাসমগ্র (সিগনেট)। স্বভাবতই আনন্দিত সৌমিত্র: ‘আসলে কবিতাসমগ্র বেরলে একটা তৃপ্তি হয়, কারণ সামগ্রিক ভাবে তখন কবিকে জানার, বা তার কাজ বিচারের একটা রাস্তা তৈরি হয়।’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ছিলেন শঙ্খ ঘোষ আর সুধীর চক্রবর্তী। এতাবৎ প্রকাশিত সৌমিত্রর যাবতীয় কবিতার বই একত্র করে এই নতুন গ্রন্থটি, তার মধ্যে একটি খলিল জিব্রান-এর দি প্রফেট-এর অনুবাদ, যার ভূমিকায় শঙ্খ ঘোষ লিখেছেন ‘অনুবাদের এই পৃষ্ঠাকটি পড়তে পড়তে, খলিল জিব্রানের কবিতার দিকেই নয় শুধু, হয়তো সৌমিত্রের নিজেরও কবিতার দিকে কোনো কোনো পাঠকের দৃষ্টি পৌঁছতে পারে নতুন করে।’ কবিতার পাশাপাশি চলতে থাকে অভিনয়ও, এই তো বই প্রকাশের পরদিনই জি ডি বিড়লা সভাঘরে মারে সিসগাল-এর ‘দ্য টাইপিস্ট’ অবলম্বনে নিজের রচনা-নির্দেশনায় শ্রতিনাটক (অনন্য অন্যমন নিবেদিত) করলেন, অভিনয়ে সঙ্গ দিলেন অলকানন্দা রায় ও প্রবীর দত্ত। এই ছায়াচ্ছন্ন সময়ে কী করে পারেন এত সব? নিজেরই ছড়ার লাইন টেনে এনে উত্তর দেন সৌমিত্র: ‘ছায়ার ভিতর রয়ে গেল কত আলোর গোপন ঋণ।’

শিকারি

সেটা ১৯৮৮ সাল। উত্তর-পূর্ব ভারতের মংপং জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে কালাপাহাড় নামের এক পাগলা হাতি। একের পর এক মানুষ খুন করছে সেই দানব। আট দিন জঙ্গলে পায়ে হেঁটে খোঁজার পর অবশেষে হাতির দেখা পেলেন দুই শিকারি, চঞ্চল সরকার ও রঞ্জিত মুখোপাধ্যায়। ১১ ফিট ৩ ইঞ্চি-র হাতিটি তখন ১০০ গজ দূরে। অন্ধকার ঘনিয়ে এলে হাতিও অদৃশ্য হবে, তাই ঝুঁকি নিয়েই দুই শিকারি হাতির নজর তাঁদের দিকে ফেরাতে চেষ্টা করলেন। হাতিও তেড়ে এল। দূরত্ব যখন মাত্র ১৫ ফুট, তখন রাইফেল গর্জে উঠল। বিশাল হাতিটি মুখ থুবড়ে পড়ল মাত্র ৫ ফুট দূরে। এই ভাবে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে পাগলা হাতি মেরে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন কলকাতার বিখ্যাত দুই শিকারি জুটি। ৩১টি পাগলা হাতি মেরেছেন ওঁরা। ১৯৬৯ সালে ওড়িশার ঢেঙ্কানলে আট ফুট দাঁতালকে মেরে শুরু। তখন চঞ্চলের বয়স মোটে ২৮। আর শেষ শিকার ২০০৩ সালে ছত্তীসগঢ়ে। ১৯৭৪-এর ১১ জুলাই উত্তরবঙ্গের নাগরাকাটায় চঞ্চল ও রঞ্জিত মারেন তিনটি পাগলা হাতিকে, একই দিনে। চঞ্চল সরকার আদতে ছিলেন সিভিল কন্ট্রাক্টর। শ্যামনগরের বর্ধিষ্ণু পরিবারে জন্ম, ষাটের দশকের মাঝামাঝি কলকাতায় স্থায়ী বাস শুরু। সম্প্রতি চঞ্চল চলে গেলেন ছিয়াত্তর বছর বয়সে, গত ১৫ মে। বাড়ির ট্রফি রুমে সাজানো রইল শিকারের নানা দুর্লভ স্মৃতি। ইলিয়ট রোডের বাড়িতে দাদা চপল সরকার বললেন, “ছোটবেলা থেকেই চঞ্চল ডানপিটে। শ্যামনগরের বাড়িতে একটা শটগান ছিল। প্রথমে ওই এলাকায় বুনো শুয়োর শিকার করত।” চঞ্চলবাবুর শিকারের এক বড় অংশই উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে বলে জানালেন তাঁর বন্ধু ও প্রবীণ হাতিবিশারদ ধৃতিকান্ত লাহিড়িচৌধুরী। কেবল শিকারি নন, পশুপ্রেমীও ছিলেন চঞ্চলবাবু।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy